শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কি শুল্ক কমাতে পারবে বাংলাদেশ
Published: 9th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রকে এক শর মতো পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে আগ্রহী বাংলাদেশ। এ কথা জানিয়ে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে এ চিঠি পাঠানো হয়।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শুল্কহার কমাতে পারবে কি বাংলাদেশ? কিন্তু বাস্তবতা হলো নীতি ও রেওয়াজ, এসব বিষয় বিবেচনা করলে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আলাদা করে এক শ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের তালিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের পণ্যতালিকায় (ট্যারিফলাইন) বর্তমানে ১৯০টি পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক দিতে হয় না যুক্তরাষ্ট্রকে। অবশ্য অন্য দেশকেও এসব পণ্যে শুল্ক দিতে হয় না।
মূলত বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে বা শূন্য আমদানি শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি বাড়ানোর সুযোগ দিতে চায় বাংলাদেশ সরকার।
কেন সম্ভব নয়
বাংলাদেশে এইচ এস কোড ধরে শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়। কোনো একটি দেশের জন্য আলাদা করে শুল্কহার নির্ধারণ করা হয় না। যদি কোনো পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা বা হ্রাসকৃত শুল্ক–সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে এইচ এস কোড ধরে সেই শুল্কমুক্ত সুবিধা বা শুল্ক হ্রাস করা হয়। ফলে যে দেশ থেকেই ওই পণ্য আসুক না কেন, তাতে কোনো শুল্ক দিতে হবে না কিংবা নির্ধারিত রেয়াতি হারে শুল্ক দিলেই চলবে।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক বসানোর যে ঘোষণা ট্রাম্প প্রশাসন দিয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয় এমন এক শ পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে বাংলাদেশ সরকার। এই তালিকায় আছে গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসাসামগ্রী ইত্যাদি।
এ বিষয়ে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক, এইচ এস কোড অনুসারে গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিল বাংলাদেশ। তাহলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিখ্যাত ফোর্ড ব্র্যান্ডের গাড়ি বিনা শুল্কে বাংলাদেশে আনা যাবে। আবার একইভাবে জাপান, কোরিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে টয়োটা, মিৎসুবিশি, নিশান, হুন্দাই, টাটাসহ সব বিখ্যাত ব্র্যান্ডের গাড়িও বিনা শুল্কে আনা যাবে। গাড়ির দাম, বাংলাদেশের ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা, গাড়ি যন্ত্রাংশ, গাড়ির মান—এসব বিবেচনা করে এ দেশের গাড়ির বাজার সম্প্রসারণ হয়।
ট্যারিফলাইনে কত পণ্য, কত শুল্ক
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ট্যারিফলাইনে ৭ হাজার ১৫৯টি পণ্য আছে। এর মধ্যে ৬৫৯টি মূলধনি যন্ত্রপাতিসংক্রান্ত পণ্যে ১ শতাংশ, ১ হাজার ২১৬টি মৌলিক কাঁচামালে ৫ শতাংশ, ১ হাজার ৫৫২টি মধ্যবর্তী কাঁচামালে ১০ শতাংশ, ১০৪টি সেমি প্রস্তুত পণ্যে ১৫ শতাংশ এবং ৩ হাজার ২৫৫টি সম্পূর্ণ প্রস্তুত পণ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ হয়। এ ছাড়া পণ্য ও সেবাভেদে সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম করসহ নানা ধরনের কর বসে। এগুলো বিবেচনা করেই পণ্যের শুল্ক-কর ভার নির্ধারণ করা হয়।
বর্তমানে খাদ্যপণ্যসহ অত্যাবশ্যকীয় ও জীবন রক্ষাকারী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শুল্ক নেই। বর্তমানে এ ধরনের ৩২৯টি পণ্য আমদানিতে আমদানিকারকদের কোনো ধরনের আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক দিতে হয় না। এই তালিকায় আছে খাদ্যপণ্য, সার, গ্যাস, ওষুধ, শিল্পের কাঁচামাল, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যা আমদানি হয়
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যভান্ডারে দেখা যায়, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। দেশের ভেতরে ব্যবহারের জন্য আনা হয়েছে ২৬২ কোটি ডলারের পণ্য। বাকি সব রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল।
এনবিআরের হিসাবে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য আমদানি হওয়া ২৬২ কোটি ডলারের পণ্যের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানিতে কোনো শুল্ক-কর দিতে হয়নি। যেমন গম ও তুলার মতো পণ্যে শুল্ক-কর নেই। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যত পণ্য আমদানি করা হয়, এর ওপর গড়ে ৬ শতাংশের কিছুটা বেশি শুল্ক আরোপ হয়।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এইচ এস কোডে থাকা ২ হাজার ৫১৫টি পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। মাত্র আট ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা মোট আমদানির ৬৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রড তৈরির কাঁচামাল—পুরোনো লোহার টুকরা বা স্ক্র্যাপ। গত অর্থবছরে পণ্যটি আমদানি হয় ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া মোট পণ্যের প্রায় ২৭ শতাংশ। গড়ে ৪ শতাংশ শুল্কহার রয়েছে পুরোনো লোহার পণ্য আমদানিতে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য এলপিজির উপাদান বিউটেনের ওপর শুল্কহার গড়ে ৫ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ আমদানি সয়াবিন বীজের ওপর শুল্ক-কর নেই।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির তালিকায় আরও রয়েছে তুলা, উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, হুইস্কি, গাড়ি, গম, উড পাল্প, পুরোনো জাহাজ, সয়াকেক, কাঠবাদাম ইত্যাদি।
বাংলাদেশ থেকে যা যায়
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যত পণ্য রপ্তানি হয়, এর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। ২০২৪ সালে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
এ ছাড়া চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য, ওষুধ, প্লাস্টিক, মনোহারি পণ্য বেশি রপ্তানি করেন রপ্তানিকারকেরা। চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য বছরে ৮-১০ কোটি ডলার, ওষুধ ২-৩ কোটি ডলার, প্লাস্টিকপণ্য ও মুদিপণ্য ১-২ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল কম ক ত স ব ধ র র জন য শ ল ক কর আমদ ন ত ধরন র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৫৪ পয়সা। গত বছরের একই সময় যা ছিল ১ টাকা ২৫ পয়সা।
এ ছাড়া বছরের প্রথম ছয় মাসেও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা বেড়েছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৫৬ পয়সা। আগের বছর যা ছিল ২ টাকা ৬২ পয়সা, অর্থাৎ বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মূলত ব্যাংকের বিনিয়োগ ও সুদ আয় বৃদ্ধির কারণে ইপিএস বেড়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক ঘোষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, জানুয়ারি-জুন সময়ে শেয়ারপ্রতি নিট নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ২৪ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৩০ টাকা ৯৯ পয়সা। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আমানত সংগ্রহ ও ব্যাংকঋণ বৃদ্ধির কারণে নগদ প্রবাহ বেড়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় ঋণ বিতরণে কিছুটা ধীরগতি দেখা গেছে।
অন্যদিকে ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদের মূল্য (এনএভি) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ টাকা ৬০ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর যা ছিল ৩৯ টাকা ৩৮ পয়সা। নিট মুনাফা ও সরকারি সিকিউরিটিজের পুনর্মূল্যায়নের ফলে এ বৃদ্ধি হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
২০২৪ সালের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ও ১২ দশমিক ৫ শতাংশ স্টক। ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সমন্বিতভাবে আগের বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। ফলে তাদের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা (এনপিএটি) হয়েছে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে যা ছিল ৮২৮ কোটি টাকা। একক ভিত্তিতে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের ৭৩০ কোটি টাকার তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশ।