শহীদ অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমদ: আমাদের ঐতিহ্যে
Published: 9th, April 2025 GMT
৯ এপ্রিল ১৯৭১ সাল। সিলেট শহরে চলছে প্রচণ্ড যুদ্ধ। পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটায় কিছুদিনের জন্য মুক্ত সিলেটের জেল ভেঙে রাজনৈতিক ও অন্যান্য কয়েদিকে ছাড়ানো হলো। সবাই তখন কারফিউ ভাঙার কারণে সিলেট ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে লাগলেন। প্রায় জনশূন্য সিলেটে তখন পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ আহত মানুষ দিয়ে সিলেট মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল পরিপূর্ণ। মেডিকেল কলেজের সার্জারির প্রধান অধ্যাপক ডা.
ডা. শামসুদ্দিনের এই কর্তব্যবোধ, মানবতাবোধ, অসম সাহসিকতা, পেশার উৎকর্ষ ও সম্মান বৃদ্ধির জন্য আজীবন ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তাই তিনি হয়ে উঠলেন একটি কিংবদন্তি। অবিভক্ত সিলেটের করিমগঞ্জের বদরপুরে জন্ম। সিলেটে স্কুল ও কলেজে পড়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৪৬–এ পাস করে নতুন পাকিস্তানে চলে আসেন ভেঙে পড়া চিকিৎসা আর মেডিকেল শিক্ষাকে উন্নত করতে। সরকারি চাকরির জন্য যখন যেখানে বদলি হয়েছেন, সেখানেই রেখেছেন তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান। জাতীয় পর্যায়ে ও জেলা পর্যায়ে যখন যেখানে গেছেন, সেখানে মানুষ এবং সমাজ উন্নয়নকে সংঘটিত করেছেন। তিনি তরুণ বয়সে ঢাকায় থাকার সময় ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হয়ে তৈরি করলেন পূর্ব পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন। যাত্রা শুরু হলো চিকিৎসকদের দিকনির্দেশনা আর পেশার উন্নতির জন্য ন্যায্য সংগ্রাম। পশ্চিম পাকিস্তান তখন তাদের ডাক্তারদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠাত। নতুন রাষ্ট্রে বৈষম্য শুরু হলো সব ক্ষেত্রে। প্রতিবাদ করতে থাকলেন প্রতি পদে। তাই এরপর তাঁকে আর ঢাকায় রাখা ঠিক হবে না। তাতে থামল না তাঁর কণ্ঠ। কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম পাঠানো হতো। ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সবখানেই গড়ে তুলতেন মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন আর পেশার উন্নতি ও রোগীদের এবং সবচেয়ে উত্তম ও মানবিক সেবার জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতেন।
ঢাকায় থাকার সময় সভাপতি হয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন প্রথম রিলিফ অর্গানাইজেশন ‘পাকিস্তান অ্যাম্বুলেন্স কোরের’ তা নিয়ে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। ১৯৫৬–এর পূর্ব পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় দেশ যখন দিশাহারা, তখন সরকার পাকিস্তান অ্যাম্বুলেন্স করে সভাপতি এই তরুণ ঢাকা মেডিকেল কলেজ গেটে রেসিডেন্ট সার্জনের ওপর সারা দেশে মেডিকেল রিলিফ পরিচালনা করার দায়িত্ব দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা তাঁর নেতৃত্ব দেশের আনাচে–কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। তার অনেক ছাত্র এই অভিজ্ঞতা পাওয়ার জন্য পরবর্তী জীবনে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তাঁকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য সম্মান জানাতেন।
লন্ডন থেকে ১৯৬২ সালে সার্জারিতে উচ্চশিক্ষা (এফআরসিএস) নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। সেখানে শুরু হলো তাঁর মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন গঠন করে, ছাত্র, শিক্ষকদের উদ্বুদ্ধ করে, রোগীসাশ্রয়ী সুচিকিৎসা, হাসপাতালের সার্বিক উন্নতি, সবকিছুই করার জন্য সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন। দুই ছোট ছেলে নিয়ে যখন রাজশাহীতে তাঁর থাকতে হতো তখন তাঁর সহধর্মিণী অধ্যক্ষ হোসেনে আরা আহমেদ (১৯৪৭ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে মাস্টার্স করা) তিন কন্যা নিয়ে সিলেটে থাকতে হতো। তিনি সিলেট মহিলা কলেজকে প্রতিষ্ঠা করা আর নারীদের ক্ষমতায়ন করার জন্য অনবরত কাজ করে যেতেন। তাঁরা দুজনই ঠিক করেছিলেন তাঁরা আজীবন নারী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে এবং পেশার উন্নতির জন্য সংসার ও জীবনের ভালো সময়গুলো বিলিয়ে দেবেন।
১৯৬৪ সালে শামসুদ্দিন সিলেটে এলেন। সিলেটে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হয়ে কেন্দ্রীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের কনভেনশন করেন। দেশি–বিদেশি চিকিৎসকের সমারোহে কোনো মফস্সল শহরে প্রথম অনুষ্ঠিত হলো বিশাল মেডিকেল সম্মেলন। তাঁর বক্তৃতায় সরকার, প্রশাসনসহ চিকিৎসকদের তিনি আরও সক্রিয় হওয়ার জন্য আহ্বান করেন। তিনি ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাগত মান বাড়ানোর সঠিক নির্দেশনাসহ, শিক্ষা, রিসার্চ, সমাজসেবার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি সিলেটে টিবি ক্লিনিকটিকে টিবি হাসপাতালে রূপান্তর করেন, তাতে লন্ডনপ্রবাসীরা অর্থায়নও করেন।
উনসত্তরের গণ–আন্দোলনে তিনি আবার রাজশাহীতে বদলি হয়ে মেডিকেল কলেজের সার্জারির অধ্যাপক ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ড. শামসুজজোহাকে গুলিতে আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিলেন সার্জারির অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ। অপারেশন করার সময় অবাক হয়ে দেখলেন শুধু একটি গুলি নয়, সৈন্যরা খুব কাছ থেকে অনেক গুলি করেছে, এমনকি বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করেছে। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো গেল না ড. শামসুজজোহাকে। অত্যন্ত দুঃখিত আর ক্রুদ্ধ হয়ে রিপোর্ট লিখলেন অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ। বিশদভাবে সব জখমের বর্ণনা দিলেন। পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা এসে অধ্যাপক শামসুদ্দিন আহমেদকে জানালেন তিনি যেন রিপোর্টে লেখেন একটি গুলি ভুলক্রমে লেগে গেছে। এই মার্শাল লর সময়ে তিনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর দায়িত্ব যেন পালন করেন। অকুতোভয় ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তিনি তাঁর রিপোর্টে সত্য কথাই লিখবেন। শুধু তা–ই নয়, ড. শামসুজজোহার হত্যার প্রতিবাদে প্রথম সভা করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে আর তার সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ তার কয়েক মাস পর সিলেট মেডিকেল কলেজে সার্জারির প্রধান হয়ে বদলি হয়ে এলেন। পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকল আর ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের শেষ নির্বাচনে বাঙালি সংঘবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় লাভ করার পরও সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করার পাঁয়তারা করতে লাগল। ডা. শামসুদ্দিন সব ডাক্তার ও ছাত্রদের রক্তপাতের জন্য হুঁশিয়ার থাকতে বললেন এমনকি আলাদা ব্লাড ব্যাংক এবং ইমার্জেন্সি স্কোয়াড নিজ হাতে গঠন করলেন। প্রায় সবাই তখন এই সাবধান বাণী বিশ্বাস করতে পারছিল না। ২৩ মার্চ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আরেক মুক্তি পাওয়া আসামি ক্যাপ্টেন (অব.) মোত্তালেব মোটরসাইকেল চালিয়ে তার বাসায় হাজির। জেলে অত্যাচারের ফলে আহত তিনি ডা. শামসুদ্দিন আহমেদের চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর হাতে ছিল একটি মৃত্যুতালিকা, যেটা সিলেটের খাদিম নগরের গ্যারিসনের একজন বাঙালি সামরিক ইপিআর সদস্য পাকিস্তানিদের পরিকল্পনার সময় হাতে পেয়েছিলেন। সেই মৃত্যুতালিকার প্রথম দিকের নামের মধ্যে লেখা ছিল ডা. শামসুদ্দিন আহমেদের নাম।
দুই দিন পর ২৫ সে মার্চ পাকিস্তানিরা শুরু করল গণহত্যা। পথেঘাটে নির্বিচার হত্যা করতে লাগল বাঙালিদের। ডা. শামসুদ্দিন তাঁর ডাক্তার আর নার্সদের দিয়ে গুলিবিদ্ধ মানুষের চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকলেন। সেই সময়ে গুলিবিদ্ধ পাঞ্জাবি সেনাদের সঙ্গে কর্মরত দুজন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা একজন ক্যাপ্টেন মাহবুব আর আরেকজন লেফটেন্যান্ট ডা. সৈয়দ মাইনুদ্দিন আহমদকে গুলি করে হাসপাতালে ফেলে যায়। অপারেশন করেও মাহবুবকে তিনি বাঁচাতে পারলেন না; কিন্তু ডা. মাইনুদ্দিন আহমেদকে সারিয়ে তুলে গ্রামে শিগগিরই পাঠিয়ে দিলেন। ডা. মাইনউদ্দিন তাঁকে অনেক অনুরোধ করেন সিলেট শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। বলেছিলেন স্যার আমি তাদের ডাক্তার ছিলাম আর তারাই আমাকে গুলি করেছে, তাহলে আপনি তো কোনোভাবেই নিরাপদ নন। কিন্তু ডা. শামসুদ্দিন মৃদু হেসে বলেছিলেন তোমরা তোমাদের কাজ করো আমার হাসপাতালের আহতদের ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই।
ছোট ছেলে আগেই ২ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করার জন্য চলে গেছেন। সবাই ডা. শামসুদ্দিনকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন; কিন্তু তিনি মৃদু হেসে বলতেন এখনই তো আমাদের হাসপাতাল আগলে ধরে থাকার কথা, এটি আমাদের পেশাগত অঙ্গীকার। তোমরা তোমাদের কাজ করতে চলে যাও। স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললেন, আমাদের ছেলেও তো আহত হয়ে হাসপাতালে আসতে পারে। ৯ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের আক্রমণের চাপে সিলেট ছাড়তে বাধ্য হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সিলেটে প্রবেশ করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢোকে এবং ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ তাঁর ইন্টার্ন শ্যামল কান্তি লালাসহ ৯ জন বা আরও বেশি মানুষকে হাসপাতালের ভেতর গুলি করে হত্যা করে। তিন দিন পর কারফিউ ভাঙলে তাঁর চাচা এবং স্বজনেরা তাঁদের হাসপাতালের প্রাঙ্গণেই তাঁদের সমাহিত করেন।
শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ এবং তাঁর সহযোগীদের সমাধি আজ সিলেটের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। বহু বছর বেড়ায় ঢাকা থাকার পর এই সৌধও বানিয়েছেন পারিবারিক অর্থায়নে কর্নেল সালাম বীরপ্রতীকের তত্ত্বাবধানে। তার বহু বছর পরে মেয়র সেখানে উন্নয়ন ঘটান, পারিবারিক ফলকটি ফেলে নিজের নামের সঙ্গে ১৫ জন কাউন্সিলের নামের ফলক লাগান। তাঁদের জন্য যদিও কোনো জাতীয় সম্মান বা পদক কোনো দিন দেওয়া হয়নি, তবে অগণিত মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসায় সিক্ত হয় তাঁদের স্মৃতিসৌধ।
তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর আদর্শকে তাঁদের সন্তানেরা ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করে চলেছে। সিলেটে এবং আমেরিকাতে তারা বিভিন্ন জনকল্যাণ কাজ করে চলেছে। সিলেটে কিডনি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে ৬ বছর থেকে চ্যারিটি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালনার পরে এখন ১২ তলা কিডনি এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল শুরু করেছেন। উল্লেখ্য, কোভিডের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা তিনজন চিকিৎসক থেকে কয়েক মিলিয়ন ভ্যাকসিন, ৮৫০টি ভেন্টিলেটরসহ বহু সামগ্রী দেশে পাঠিয়েছিলেন। সিলেটে যখন একটি ১০০ বেডের হাসপাতাল ছাড়া সব মেডিকেল কলেজে আর এমনকি প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ ছিল, তখন কিডনি ফাউন্ডেশন থেকে তার দুটি কোভিড হাসপাতাল ফাউন্ডেশনের খরচে ৬ মাস সেবা দিয়ে গেছে।
এক প্রজন্ম, শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমেদের নাতনি তার দাদাভাইয়ের আত্মত্যাগের ইতিহাসকে ধারণ করেছে। সে আমেরিকার একজন চিকিৎসক; কিন্তু নিজের জীবনকে দাদাভাইয়ের আদর্শকে বেছে নিয়েছে। সে বাংলাদেশ পৃথিবীর ১৫টি দেশে মেডিকেল টিম নিয়ে বারবার গিয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষের সবচেয়ে বেশি সেবা প্রয়োজন। তা সে ইয়েমেন, সুদানসহ ইউক্রেনেও সাতবার গিয়েছে। তিনবার গাজার যুদ্ধে গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গণহত্যার সংবাদ প্রদান করেছে বিবিসিসহ বিভিন্ন পশ্চিমা মিডিয়ায়। যখন ইসরায়েল কোনো সাংবাদিকদের সত্য সংবাদ পাঠাতে বাধা দিত, সে সময় তার এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, তুমি কেন আরামের জায়গা ছেড়ে প্রাণহানি হওয়ার এই ভয়াবহ যুদ্ধের ময়দানে আস। সে বলেছিল ১৯৭১ সালে আমার জন্মের ও বহু বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার দাদাভাই হাসপাতাল ভর্তি আহত রোগীদের ছেড়ে নিজের জীবন বাঁচাতে চলে যাননি। তারা অবাক হয়ে তার দাদা ভাইয়ের কথা শুনে বলল, কথা দিচ্ছি আমরাও তোমার দাদাভাইয়ের মতো আহত রোগী রেখে চলে যাব না।
শহীদ ডা. শামসুদ্দিনের আত্মত্যাগের কাহিনি আজকে বিশ্বজনগণের কাছেও বিস্ময়।
আজ যদি বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের গৌরব আর ঐতিহ্যকে জানতে পারে আর ধারণ করতে পারে, তবেই হবে তাঁর প্রতি সত্যিকারের সম্মান প্রদর্শন।
বাংলাদেশের সব আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সব তথ্য আজও আমাদের অজানা। তাই এই সব ঘটনার সূত্র ধরে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের ঐতিহ্য আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস। এর বিশালতার কোনো তুলনা হয় না। পরবর্তী সব সংগ্রাম এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হোক এই ইতিহাসে সূত্র ধরে। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে জনগণ যেভাবে একত্রিত হয়েছিল, তেমনিভাবে সব বিভাজনের ঊর্ধ্বে থেকে ঐকমত্য ও সহমর্মিতা এবং সম্মান দেখাতে পারলে সব শহীদের আত্মদান সার্থক হবে।
অধ্যাপক ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ কিডনি বিশেষজ্ঞ, টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়, ফিলাডেলফিয়া। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয় ফিলাডেলফিয়া। সভাপতি সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশন
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ র য় র জন য চ ক ৎসক ক জ কর আম দ র ন কর ন সরক র র সময় প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগের ভোট পেতে একটি দল তাদের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না: সালাহউদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘একটি দল আওয়ামী লীগের ভোট প্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না।’
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, মিরপুর বাঙলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের নারীনেত্রী এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ও বর্তমান নেতারা অংশ নেন।
একটি দলকে ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ইনিয়ে-বিনিয়ে বলছে যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। আমরা মাঝেমধ্যে জিজ্ঞাসা করি, সেই মুক্তিযুদ্ধ কি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল? জনগণের সামনে কিছুদিন পরে তারা হয়তো বলবে যে তারাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, আমরা করিনি। এ রকম অনেক বক্তব্য আপনারা ভোটের ময়দানে শুনতে পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ অনেক সচেতন। এখন আর ধর্মের বিড়ি বিক্রি করে বাংলাদেশের জনগণের সামনে ভোট চাওয়া যাবে না। তারপরও আমাদের মাঠে–ময়দানে পরিকল্পনা নিয়ে যেতে হবে।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘যারা নিজের দেশের নাগরিককে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, নারী–শিশুনির্বিশেষে শতসহস্র মানুষকে হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, এই ইতিহাস যেন আমরা ভুলে না যাই।’
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র’–এর কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ টাকা তছরুপ করেছে, সেটা দিয়ে বাংলাদেশের দুটি শিক্ষা বাজেট করা যায়। তিনটি স্বাস্থ্য বাজেট করা যায়। ব্যাংকিং ও নন–ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর থেকে যে লুটপাট হয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যেটি তছরুপ হয়েছে, সেটা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। ১৪টি মেট্রো সিস্টেম নির্মাণ করা যেত। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে ব্যাংকিং লুটপাটের মধ্য দিয়ে, সেটা বিলিয়ন ডলারে না বলে অঙ্কে বোধ হয় ২৯ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গেও অনুষ্ঠানে কথা বলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক যাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে। সেই গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি সফল ঘোষণা গতকাল হয়েছে, যেটাকে আমরা তফসিল বলছি, নির্বাচনী তফসিল।’
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছে নো পিআর, নো ইলেকশন। কেউ কেউ বলেছে আগে স্থানীয় সরকার ইলেকশন, না হলে নো ইলেকশন। আর কেউ কেউ বলেছে একই দিনে গণভোট আর নির্বাচন হলে আমরা মানি না। আমি কারও নাম নিতে চাই না। তারা গণতন্ত্রের বিপক্ষের শিবির। তারা নিজেদের মতো করে গণতন্ত্র চায়। তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আলাদা।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।