৯ এপ্রিল ১৯৭১ সাল। সিলেট শহরে চলছে প্রচণ্ড যুদ্ধ। পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটায় কিছুদিনের জন্য মুক্ত সিলেটের জেল ভেঙে রাজনৈতিক ও অন্যান্য কয়েদিকে ছাড়ানো হলো। সবাই তখন কারফিউ ভাঙার কারণে সিলেট ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে লাগলেন। প্রায় জনশূন্য সিলেটে তখন পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ আহত মানুষ দিয়ে সিলেট মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল পরিপূর্ণ। মেডিকেল কলেজের সার্জারির প্রধান অধ্যাপক ডা.

শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালটিকে কয়েক দিন থেকে সারাক্ষণ আগলে ধরে আছেন। সবাই চলে গেছে শুধু একজন তরুণ ডাক্তার শ্যামল কান্তি লালা তাঁর পরম শ্রদ্ধেয় অধ্যাপককে রেখে কোথাও যাবেন না। অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কোরবান আলী সারাক্ষণ আহত মানুষকে তুলে আনছেন। নার্স মাহমুদুর রহমান আর ওয়ার্ড বয় মুখলেসুর রহমান অপারেশন থিয়েটারে আর ওয়ার্ডে অধ্যাপককে সহায়তা করতে ব্যস্ত। ডা. শামসুদ্দিন বিপদ বুঝে আগেই অন্য নার্সদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা বাঙালি সৈনিকেরা পাকিস্তানি বিশাল বাহিনীর চাপ সহ্য করতে না পেরে সিলেট ত্যাগ করতে হলো। তখন পাকিস্তানি সৈন্যরা আবার ৯ এপ্রিল শহরে ঢুকেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রবেশ করল। অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে আনল অধ্যাপক শামসুদ্দিন আহমেদ ও তার সহকর্মীদের আর কিছু রোগীর; তারপর সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরেই গুলি করে তাঁদের হত্যা করল। শুধু সেই ঘটনার সাক্ষী হয়ে মরার ভান করে বেঁচে গেলেন গুলিবিদ্ধ মুখলেসুর রহমান। হাসপাতালে আহত মানুষের সেবারত চিকিৎসক হত্যা শুধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নয়, বিশ্বের যুদ্ধের ইতিহাসে মানবতার বিরুদ্ধে একটি বড় জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করল হানাদার বাহিনী।

ডা. শামসুদ্দিনের এই কর্তব্যবোধ, মানবতাবোধ, অসম সাহসিকতা, পেশার উৎকর্ষ ও সম্মান বৃদ্ধির জন্য আজীবন ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তাই তিনি হয়ে উঠলেন একটি কিংবদন্তি। অবিভক্ত সিলেটের করিমগঞ্জের বদরপুরে জন্ম। সিলেটে স্কুল ও কলেজে পড়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৪৬–এ পাস করে নতুন পাকিস্তানে চলে আসেন ভেঙে পড়া চিকিৎসা আর মেডিকেল শিক্ষাকে উন্নত করতে। সরকারি চাকরির জন্য যখন যেখানে বদলি হয়েছেন, সেখানেই রেখেছেন তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান। জাতীয় পর্যায়ে ও জেলা পর্যায়ে যখন যেখানে গেছেন, সেখানে মানুষ এবং সমাজ উন্নয়নকে সংঘটিত করেছেন। তিনি তরুণ বয়সে ঢাকায় থাকার সময় ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হয়ে তৈরি করলেন পূর্ব পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন। যাত্রা শুরু হলো চিকিৎসকদের দিকনির্দেশনা আর পেশার উন্নতির জন্য ন্যায্য সংগ্রাম। পশ্চিম পাকিস্তান তখন তাদের ডাক্তারদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠাত। নতুন রাষ্ট্রে বৈষম্য শুরু হলো সব ক্ষেত্রে। প্রতিবাদ করতে থাকলেন প্রতি পদে। তাই এরপর তাঁকে আর ঢাকায় রাখা ঠিক হবে না। তাতে থামল না তাঁর কণ্ঠ। কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম পাঠানো হতো। ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সবখানেই গড়ে তুলতেন মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন আর পেশার উন্নতি ও রোগীদের এবং সবচেয়ে উত্তম ও মানবিক সেবার জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতেন।

ঢাকায় থাকার সময় সভাপতি হয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন প্রথম রিলিফ অর্গানাইজেশন ‘পাকিস্তান অ্যাম্বুলেন্স কোরের’ তা নিয়ে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। ১৯৫৬–এর পূর্ব পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় দেশ যখন দিশাহারা, তখন সরকার পাকিস্তান অ্যাম্বুলেন্স করে সভাপতি এই তরুণ ঢাকা মেডিকেল কলেজ গেটে রেসিডেন্ট সার্জনের ওপর সারা দেশে মেডিকেল রিলিফ পরিচালনা করার দায়িত্ব দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা তাঁর নেতৃত্ব দেশের আনাচে–কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। তার অনেক ছাত্র এই অভিজ্ঞতা পাওয়ার জন্য পরবর্তী জীবনে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তাঁকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য সম্মান জানাতেন।
লন্ডন থেকে ১৯৬২ সালে সার্জারিতে উচ্চশিক্ষা (এফআরসিএস) নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। সেখানে শুরু হলো তাঁর মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন গঠন করে, ছাত্র, শিক্ষকদের উদ্বুদ্ধ করে, রোগীসাশ্রয়ী সুচিকিৎসা, হাসপাতালের সার্বিক উন্নতি, সবকিছুই করার জন্য সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন। দুই ছোট ছেলে নিয়ে যখন রাজশাহীতে তাঁর থাকতে হতো তখন তাঁর সহধর্মিণী অধ্যক্ষ হোসেনে আরা আহমেদ (১৯৪৭ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে মাস্টার্স করা) তিন কন্যা নিয়ে সিলেটে থাকতে হতো। তিনি সিলেট মহিলা কলেজকে প্রতিষ্ঠা করা আর নারীদের ক্ষমতায়ন করার জন্য অনবরত কাজ করে যেতেন। তাঁরা দুজনই ঠিক করেছিলেন তাঁরা আজীবন নারী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে এবং পেশার উন্নতির জন্য সংসার ও জীবনের ভালো সময়গুলো বিলিয়ে দেবেন।

১৯৬৪ সালে শামসুদ্দিন সিলেটে এলেন। সিলেটে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হয়ে কেন্দ্রীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের কনভেনশন করেন। দেশি–বিদেশি চিকিৎসকের সমারোহে কোনো মফস্‌সল শহরে প্রথম অনুষ্ঠিত হলো বিশাল মেডিকেল সম্মেলন। তাঁর বক্তৃতায় সরকার, প্রশাসনসহ চিকিৎসকদের তিনি আরও সক্রিয় হওয়ার জন্য আহ্বান করেন। তিনি ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাগত মান বাড়ানোর সঠিক নির্দেশনাসহ, শিক্ষা, রিসার্চ, সমাজসেবার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি সিলেটে টিবি ক্লিনিকটিকে টিবি হাসপাতালে রূপান্তর করেন, তাতে লন্ডনপ্রবাসীরা অর্থায়নও করেন।
উনসত্তরের গণ–আন্দোলনে তিনি আবার রাজশাহীতে বদলি হয়ে মেডিকেল কলেজের সার্জারির অধ্যাপক ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ড. শামসুজজোহাকে গুলিতে আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিলেন সার্জারির অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ। অপারেশন করার সময় অবাক হয়ে দেখলেন শুধু একটি গুলি নয়, সৈন্যরা খুব কাছ থেকে অনেক গুলি করেছে, এমনকি বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করেছে। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো গেল না ড. শামসুজজোহাকে। অত্যন্ত দুঃখিত আর ক্রুদ্ধ হয়ে রিপোর্ট লিখলেন অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ। বিশদভাবে সব জখমের বর্ণনা দিলেন। পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা এসে অধ্যাপক শামসুদ্দিন আহমেদকে জানালেন তিনি যেন রিপোর্টে লেখেন একটি গুলি ভুলক্রমে লেগে গেছে। এই মার্শাল লর সময়ে তিনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর দায়িত্ব যেন পালন করেন। অকুতোভয় ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তিনি তাঁর রিপোর্টে সত্য কথাই লিখবেন। শুধু তা–ই নয়, ড. শামসুজজোহার হত্যার প্রতিবাদে প্রথম সভা করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে আর তার সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ।

অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ তার কয়েক মাস পর সিলেট মেডিকেল কলেজে সার্জারির প্রধান হয়ে বদলি হয়ে এলেন। পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকল আর ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের শেষ নির্বাচনে বাঙালি সংঘবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় লাভ করার পরও সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করার পাঁয়তারা করতে লাগল। ডা. শামসুদ্দিন সব ডাক্তার ও ছাত্রদের রক্তপাতের জন্য হুঁশিয়ার থাকতে বললেন এমনকি আলাদা ব্লাড ব্যাংক এবং ইমার্জেন্সি স্কোয়াড নিজ হাতে গঠন করলেন। প্রায় সবাই তখন এই সাবধান বাণী বিশ্বাস করতে পারছিল না। ২৩ মার্চ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আরেক মুক্তি পাওয়া আসামি ক্যাপ্টেন (অব.) মোত্তালেব মোটরসাইকেল চালিয়ে তার বাসায় হাজির। জেলে অত্যাচারের ফলে আহত তিনি ডা. শামসুদ্দিন আহমেদের চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর হাতে ছিল একটি মৃত্যুতালিকা, যেটা সিলেটের খাদিম নগরের গ্যারিসনের একজন বাঙালি সামরিক ইপিআর সদস্য পাকিস্তানিদের পরিকল্পনার সময় হাতে পেয়েছিলেন। সেই মৃত্যুতালিকার প্রথম দিকের নামের মধ্যে লেখা ছিল ডা. শামসুদ্দিন আহমেদের নাম।
দুই দিন পর ২৫ সে মার্চ পাকিস্তানিরা শুরু করল গণহত্যা। পথেঘাটে নির্বিচার হত্যা করতে লাগল বাঙালিদের। ডা. শামসুদ্দিন তাঁর ডাক্তার আর নার্সদের দিয়ে গুলিবিদ্ধ মানুষের চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকলেন। সেই সময়ে গুলিবিদ্ধ পাঞ্জাবি সেনাদের সঙ্গে কর্মরত দুজন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা একজন ক্যাপ্টেন মাহবুব আর আরেকজন লেফটেন্যান্ট ডা. সৈয়দ মাইনুদ্দিন আহমদকে গুলি করে হাসপাতালে ফেলে যায়। অপারেশন করেও মাহবুবকে তিনি বাঁচাতে পারলেন না; কিন্তু ডা. মাইনুদ্দিন আহমেদকে সারিয়ে তুলে গ্রামে শিগগিরই পাঠিয়ে দিলেন। ডা. মাইনউদ্দিন তাঁকে অনেক অনুরোধ করেন সিলেট শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। বলেছিলেন স্যার আমি তাদের ডাক্তার ছিলাম আর তারাই আমাকে গুলি করেছে, তাহলে আপনি তো কোনোভাবেই নিরাপদ নন। কিন্তু ডা. শামসুদ্দিন মৃদু হেসে বলেছিলেন তোমরা তোমাদের কাজ করো আমার হাসপাতালের আহতদের ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই।
ছোট ছেলে আগেই ২ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করার জন্য চলে গেছেন। সবাই ডা. শামসুদ্দিনকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন; কিন্তু তিনি মৃদু হেসে বলতেন এখনই তো আমাদের হাসপাতাল আগলে ধরে থাকার কথা, এটি আমাদের পেশাগত অঙ্গীকার। তোমরা তোমাদের কাজ করতে চলে যাও। স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললেন, আমাদের ছেলেও তো আহত হয়ে হাসপাতালে আসতে পারে। ৯ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের আক্রমণের চাপে সিলেট ছাড়তে বাধ্য হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সিলেটে প্রবেশ করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢোকে এবং ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ তাঁর ইন্টার্ন শ্যামল কান্তি লালাসহ ৯ জন বা আরও বেশি মানুষকে হাসপাতালের ভেতর গুলি করে হত্যা করে। তিন দিন পর কারফিউ ভাঙলে তাঁর চাচা এবং স্বজনেরা তাঁদের হাসপাতালের প্রাঙ্গণেই তাঁদের সমাহিত করেন।
শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ এবং তাঁর সহযোগীদের সমাধি আজ সিলেটের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। বহু বছর বেড়ায় ঢাকা থাকার পর এই সৌধও বানিয়েছেন পারিবারিক অর্থায়নে কর্নেল সালাম বীরপ্রতীকের তত্ত্বাবধানে। তার বহু বছর পরে মেয়র সেখানে উন্নয়ন ঘটান, পারিবারিক ফলকটি ফেলে নিজের নামের সঙ্গে ১৫ জন কাউন্সিলের নামের ফলক লাগান। তাঁদের জন্য যদিও কোনো জাতীয় সম্মান বা পদক কোনো দিন দেওয়া হয়নি, তবে অগণিত মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসায় সিক্ত হয় তাঁদের স্মৃতিসৌধ।

তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর আদর্শকে তাঁদের সন্তানেরা ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করে চলেছে। সিলেটে এবং আমেরিকাতে তারা বিভিন্ন জনকল্যাণ কাজ করে চলেছে। সিলেটে কিডনি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে ৬ বছর থেকে চ্যারিটি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালনার পরে এখন ১২ তলা কিডনি এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল শুরু করেছেন। উল্লেখ্য, কোভিডের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা তিনজন চিকিৎসক থেকে কয়েক মিলিয়ন ভ্যাকসিন, ৮৫০টি ভেন্টিলেটরসহ বহু সামগ্রী দেশে পাঠিয়েছিলেন। সিলেটে যখন একটি ১০০ বেডের হাসপাতাল ছাড়া সব মেডিকেল কলেজে আর এমনকি প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ ছিল, তখন কিডনি ফাউন্ডেশন থেকে তার দুটি কোভিড হাসপাতাল ফাউন্ডেশনের খরচে ৬ মাস সেবা দিয়ে গেছে।
এক প্রজন্ম, শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমেদের নাতনি তার দাদাভাইয়ের আত্মত্যাগের ইতিহাসকে ধারণ করেছে। সে আমেরিকার একজন চিকিৎসক; কিন্তু নিজের জীবনকে দাদাভাইয়ের আদর্শকে বেছে নিয়েছে। সে বাংলাদেশ পৃথিবীর ১৫টি দেশে মেডিকেল টিম নিয়ে বারবার গিয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষের সবচেয়ে বেশি সেবা প্রয়োজন। তা সে ইয়েমেন, সুদানসহ ইউক্রেনেও সাতবার গিয়েছে। তিনবার গাজার যুদ্ধে গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গণহত্যার সংবাদ প্রদান করেছে বিবিসিসহ বিভিন্ন পশ্চিমা মিডিয়ায়। যখন ইসরায়েল কোনো সাংবাদিকদের সত্য সংবাদ পাঠাতে বাধা দিত, সে সময় তার এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, তুমি কেন আরামের জায়গা ছেড়ে প্রাণহানি হওয়ার এই ভয়াবহ যুদ্ধের ময়দানে আস। সে বলেছিল ১৯৭১ সালে আমার জন্মের ও বহু বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার দাদাভাই হাসপাতাল ভর্তি আহত রোগীদের ছেড়ে নিজের জীবন বাঁচাতে চলে যাননি। তারা অবাক হয়ে তার দাদা ভাইয়ের কথা শুনে বলল, কথা দিচ্ছি আমরাও তোমার দাদাভাইয়ের মতো আহত রোগী রেখে চলে যাব না।
শহীদ ডা. শামসুদ্দিনের আত্মত্যাগের কাহিনি আজকে বিশ্বজনগণের কাছেও বিস্ময়।
আজ যদি বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের গৌরব আর ঐতিহ্যকে জানতে পারে আর ধারণ করতে পারে, তবেই হবে তাঁর প্রতি সত্যিকারের সম্মান প্রদর্শন।
বাংলাদেশের সব আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সব তথ্য আজও আমাদের অজানা। তাই এই সব ঘটনার সূত্র ধরে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের ঐতিহ্য আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস। এর বিশালতার কোনো তুলনা হয় না। পরবর্তী সব সংগ্রাম এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হোক এই ইতিহাসে সূত্র ধরে। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে জনগণ যেভাবে একত্রিত হয়েছিল, তেমনিভাবে সব বিভাজনের ঊর্ধ্বে থেকে ঐকমত্য ও সহমর্মিতা এবং সম্মান দেখাতে পারলে সব শহীদের আত্মদান সার্থক হবে।

অধ্যাপক ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ  কিডনি বিশেষজ্ঞ, টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়, ফিলাডেলফিয়া। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয় ফিলাডেলফিয়া। সভাপতি সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ র য় র জন য চ ক ৎসক ক জ কর আম দ র ন কর ন সরক র র সময় প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’

তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’

সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’

বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউট

কমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।

পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।

আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
  • মানিব্যাগ তুলতে সেপটিক ট্যাংকে নেমে বড় ভাইয়ের মৃত্যু, ছোট ভাই হাসপাতালে
  • সিলেটে সহপাঠীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ
  • ৪ কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২১টি স্থাপনার নাম বদল
  • ২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
  • জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
  • কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
  • তাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ
  • মানবাধিকার মিশন নিয়ে উদ্বেগ, আলোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন