রংপুরে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
Published: 9th, April 2025 GMT
রংপুরের তারাগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের পদ বহাল রাখা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ছয়জন আহত হয়েছেন। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ঘনিরামপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের পক্ষের লোকজন রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় চার ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার পরিবর্তনের পর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অলিয়ার রহমানকে অপসারণের দাবিতে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এরপর প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের লোকজন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর অলিয়ার রহমানের অপসারণের দাবিতে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। ওই ঘটনার পর ২১ সেপ্টেম্বর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক অলিয়ার রহমান আবার বিদ্যালয়ে যান। এ সময় বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁকে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেন। একপর্যায়ে অলিয়ার রহমানের ছেলে মুয়িজ হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগ হোসেনকে (২৩) মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
খবর পেয়ে তারাগঞ্জ থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে ইউএনও কার্যালয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ইউএনও কার্যালয়ে যাওয়ার পথে বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০০ গজ দূরে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সোহাগ হোসেন (২৩), লাভলু মিয়া (৩৪) এবং প্রধান শিক্ষকের পক্ষের মোফাজ্জল হোসেন (৫৮), কামাল হোসেন (২৪) ও নুরজাফা আক্তার (২৩) আহত হন।
এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে প্রধান শিক্ষক অলিয়ার রহমানের অনুসারীরা বেলা ১১টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বরাতি এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী এসে ২ টা ৪০ মিনিটে সড়ক থেকে তাদের তুলে দেয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোহাগ হোসেন বলেন, ‘অলিয়ার রহমান বিদ্যালয়টিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ৭ জনই তাঁর আত্মীয়। আমরা তাঁর অপসারণ দাবি করলে তাঁর ছেলে ও স্বজনেরা আমাদের মারধর করেন।’
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক অলিয়ার রহমান বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে আমি স্বপদে বহাল থাকব। গত ২২ মার্চ সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। আজ আমি বিদ্যালয়ে গেলে সেখানে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। পরে পুলিশ আমাকে ইউএনও কার্যালয়ে যেতে বলে। সেখানে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষের লোকজন আমার ওপর হামলা চালান। এতে আমার ভাই ও ভাতিজা আহত হন। মহাসড়ক কে বা কারা অবরোধ করেছে, তা আমি জানি না।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর এক পক্ষ মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয়। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাদ্রাসার বরাদ্দের দুম্বার মাংস ছিনতাইয়ের অভিযোগ
সৌদি আরব থেকে মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য পাঠানো দুম্বার মাংস ছিনতাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ছিনতাইকারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনো।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা পরিষদের মসজিদের পাশে এ ছিনতাই হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাড়াশ উপজেলার ৪৪টি মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য ১৬৪ কার্টন দুম্বার মাংস বরাদ্দ দেওয়া হয়। বুধবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সেই মাংস বিতরণের খবর পেয়ে শত শত মানুষ ভিড় জমান। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহানের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও দুই দিনের সরকারি প্রশিক্ষণ থাকায় উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত উপস্থিত হন। তিনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু ছাঈদ মল্লিককে সঙ্গে নিয়ে পুলিশি পাহারায় মাংস বিতরণ শুরু করেন। বরাদ্দের তালিকা অনুযায়ী সদর ইউনিয়নের মথুরাপুর মহিলা মাদ্রাসার পক্ষে শিক্ষক সুলতান মাহমুদ এক কার্টন দুম্বার মাংস বুঝে নেন। পরে এ মাংস নিয়ে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মসজিদের রাস্তায় গেলে ভিড়ের মধ্যে কয়েকজন মিলে তাকে আটকে মাংসের কার্টন জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেন।
শিক্ষক সুলতান মাহমুদ বলেছেন, দুস্থদের হক এভাবে মানুষ ছিনতাই করে নিয়ে যাবে, কখনো ভাবিনি। তবে, আমি কাউকে চিনতে পারিনি। এর বিচার আল্লাহ করবেন।
মাংস বিতরণকালে দায়িত্বে থাকা তাড়াশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, দুম্বার মাংস বিতরণকালে কোনো প্রকার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। বিতরণের সময় উল্লাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত বলেছেন, ছিনতাইয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি কেউ এ ধরনের কাজ করে থাকে, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/অদিত্য/রফিক