ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানে অবৈধভাবে গড়ে উঠা চিড়িয়াখানাটি ১০ বছরের জন্য ইজারা নিলেও সেটির মেয়াদ শেষ হয় ৯ মাস আগে, কিন্তু সেটি জানা ছিল না সিটি করপোরেশনের। ভালুকের শরীরে পচন ধরার ঘটনা আলোচনায় এলে এবং বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট মিনি চিড়িয়াখানা বন্ধ করে দেওয়ার পর সামনে আসে বিষয়টি।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে জানান, দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে ছয় লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছিল চিড়িয়াখানাটি। গত বছরের জুনে ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও ইজারাদারদের কেউ অদ্যাবধি আবেদন বা যোগাযোগ করেনি। সুমনা আল মজিদ বলেন, ‘আমরা এখন আলোচনা করে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেব, এটি আর কন্টিনিউ করব কি না। জেলা প্রশাসনকে যুক্ত করে অন্যান্য সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এত ছোট জায়গার মধ্যে চিড়িয়াখানাটির ইজারাদার ছাড়পত্র নিতে পারবে কি না, সেটি নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে বলে জানান সুমনা আল মজিদ। ৯ মাস আগে চিড়িয়াখানার ইজারা শেষ হওয়ার বিষয়টি নজরে না আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই এসেছি গত অক্টোবরে। সবকিছু জেনে নিতে সময় লাগে। তারাও (ইজারাদার) কেউ আবেদন করেনি, সে কারণে ফাইল নিয়ে নাড়াচাড়া হয়নি। এখন যেহেতু নজরে এসেছে, এটি নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। চিড়িয়াখানাঘেঁষা শিশুপার্কটিও একই ব্যক্তির নামে লিজ রয়েছে। সেটিও আমরা ভেবে দেখছি, কী করা যায়।’

আরও পড়ুনঅনুমোদন নেই, প্রাণীর জোগানদাতা সাবেক মেয়র, পরিচালনায় সাবেক কাউন্সিলর০৮ এপ্রিল ২০২৫

গতকাল মঙ্গলবার বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের অভিযানের সময় কিছু কাগজপত্র বের করে দেখান মিনি চিড়িয়াখানাটির কর্মীরা। তাঁকে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ বছরের জন্য নগরের গোহাইলকান্দি এলাকার বাসিন্দা মো.

সেলিম মিয়াকে মিনি চিড়িয়াখানাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে চুক্তিপত্রে চুক্তিমূল্য উল্লেখ নেই। এতে মালিক পক্ষে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন পৌরসভার মেয়র। সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় মূল্যায়ণ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১০ বছর মেয়াদি ইজারা কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল।

চুক্তিপত্রে সাক্ষীর ঘরে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. মাহবুবুর রহমানের স্বাক্ষর আছে। ইজারাদার সেলিম মিয়া কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানের শ্যালক বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। শ্যালকের নামে চিড়িয়াখানাটি বরাদ্দ নিলেও নিজেই সেটির দেখাশোনা করতেন মাহবুবুর রহমান। চিড়িয়াখানা বরাদ্দ নেওয়ার পর একই চত্বরে শিশুপার্ক করার জন্য জমি বরাদ্দ নেওয়া হয় সেলিম মিয়ার নামে। ভেতরে কিছু রাইড স্থাপন করা হলেও বাইরে কিছু দোকানও করা হয়।

চিড়িয়াখানার চুক্তিপত্রে ৯টি শর্তজুড়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১ নম্বর শর্ত ছিল এর মেয়াদকাল ১০ বছরের জন্য গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে ১০ বছর সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করলে পরবর্তী সময় অগ্রাধিকার পাবে। ইজারার ২ নম্বর শর্ত ছিল সরকারের বন, পরিবেশ ও পশুপালন মন্ত্রণালয়ের আইনানুযায়ী জয়নুল উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানাটি পরিচালনা করতে হবে। ৫ নম্বর শর্তে চিড়িয়াখানায় সার্বক্ষণিক একজন পশুচিকিৎসক রাখার কথা উল্লেখ থাকলেও চিড়িয়াখানায় কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। সেখানে থাকা কর্মী কামাল হোসেন প্রাণীর চিকিৎসার দেখভাল করতেন বলে জানান। একই শর্তে আরও বলা হয়, কোনো জীবজন্তু বা পশুপাখি মারা গেলে তার জন্য ইজারাদার দায়ী থাকবেন এবং প্রথম পক্ষের কাছে কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন না।

চিড়িয়াখানাটি সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান দেখাশোনা করলেও এটিতে প্রাণীর জোগান দিতেন সাবেক মেয়র ইকরামুল হক (টিটু)। এমনটি জানিয়েছিলেন সেখানে নিয়োজিত কর্মী কামাল হোসেন। এ তথ্যের প্রমাণ মেলে বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক তপন কুমার দে স্বাক্ষরিত ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে চারটি চিত্রা হরিণ কেনার অনুমতিপত্রে। পৌরসভার মেয়রকে হরিণ কেনার অনুমতি দিয়ে ২০১৪ সালের ১০ জুলাই চিঠি দিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে হরিণের লাইসেন্স ও পজিশন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল।

সাবেক মেয়র ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক গত ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে। আর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান গত ৮ মার্চ গ্রেপ্তার হন। এ কারণে তাঁদের দুজনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের অভিযানের সময় ঠিকাদারের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে মুচলেকায় স্বাক্ষর করেন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানায় দেশি-বিদেশি ১১৪টি প্রাণী ছিল। গতকাল অভিযানে সরকারি অনুমোদন না নিয়ে চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণের অভিযোগে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী কুমির, ময়ূর, অজগর, হরিণ, মদনটাক, ধনেশ, লজ্জাবতী বানরসহ দেশি ৪৮টি প্রাণী জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ২৭টি প্রাণী জব্দ করে নিয়ে গেলেও ২১টি প্রাণী বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের জিম্মায় রেখে যাওয়া হয়। পাশাপাশি চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। অসুস্থ ভালুকটিকে চিকিৎসার জন্য রেখে যাওয়া হয়।

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা বলেন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২–এর-৬ ধারাতে বলা আছে লাইসেন্স ও পারমিট ছাড়া কেউ কোনো বন্য প্রাণী খাঁচায় বন্দী রাখতে পারবে না, প্রদর্শন ও পরিবহন করতে পারবে না। দেশি প্রাণীগুলো জব্দ করা হয়েছে। এখানে দেশি ও বিদেশি যেকোনো প্রাণীর জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি যেসব প্রাণী আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা অনুমতি দেই। আমাদের ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করে কেউ যদি বিদেশি প্রাণীর জন্য অনুমতি নিতে চায়, তাহলে তাদের অনুমতি দেওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপর ধ দমন ইউন ট বন য প র ণ ইজ র দ র বছর র জ ১০ বছর বর দ দ হয় ছ ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গামছা পরে ঘুমিয়ে থাকার কারণ জানালেন সমু চৌধুরী

গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে জনপ্রিয় অভিনেতা সমু চৌধুরীর কয়েকটি স্থিরচিত্র। তাতে দেখা যায়, গামছা পরিহিত অবস্থায় একটি গাছের নিচে ঘুমিয়ে আছেন সমু চৌধুরী। পরে জানা যায়, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মুখী শাহ্ মিসকিন মাজারের কাছে এ অবস্থায় শুয়ে ছিলেন তিনি।

সমু চৌধুরীর এসব ছবি ভাইরাল হওয়ার পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন। কেউ কেউ দাবি করেন— মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন সমু চৌধুরী। তবে এ অভিনেতার দাবি, তিনি সুস্থ আছেন। পাশাপাশি গামছা পরে ঘুমিয়ে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করলেন এই প্রবীণ নাট্যকার-অভিনেতা। 

সমু চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, “এটা খুবই লজ্জাজনক। আমি ভোরবেলা নামাজ পড়ে, নদীতে গোসল করে ওখানে ঘুমিয়েছিলাম। আমি এক কাপড়ে এখানে এসেছি।” 

আরো পড়ুন:

ঈদের ষষ্ঠ দিন ছোট পর্দার নাটক-টেলিফিল্ম

শতাধিক দেশ থেকে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ দেখছেন দর্শক

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মুখী শাহ্ মিসকিন মাজারে যাওয়ার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে সমু চৌধুরী বলেন, “আমি যশোরে ছিলাম, যশোর থেকে ফিরে আসার পরই হঠাৎ ছোট ভাইরা বলছিল, মিসকিন শাহে যাবেন নাকি! আমি বললাম, এটা কোথায়? পরে মনে পড়ল, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তারপর আমি তাদের সঙ্গে আসি।” 

“সারাদিন আড্ডা মেরেছি, এখানকার যে কুতুবরা আছেন, যারা খাদেম আছেন, যারা পাগল আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলছি, আড্ডা দিয়েছি। আমার জীবনের সঙ্গে, তাদের জীবনের মিল খুঁজছি, নাটক খুঁজছি।” বলেন সমু চৌধুরী। 

ছবি ছড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ সমু চৌধুরী বলেন, “আমি বুঝলাম না এতে তোদের কী?  তোরা আউলিয়া বুঝিস না, পাগল বুঝিস না, একটা ছবি তুলে দিয়ে দিলি, এটা তো ভাইরাল হয়ে গেছে।”   

সমু চৌধুরীর বাবা, ভাই-বোন কেউ নেই। এ তথ্য জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, “আমার বন্ধুরা যারা ছবিটি দেখেছে। এটা তো তাদের কলিজায় লেগে যায়। কেউ গাড়ি পাঠায়ে দিচ্ছে। শিল্পী সংঘ থেকে ফোন দিয়ে বলা হচ্ছে, দাদা তুমি ওখানে থাকো। শান্তিদি আমাকে ফোন দিয়ে বলছে, তুমি ওখানে থাকো; আমি গাড়ি পাঠায়ে দিচ্ছি। তুমি ওখান থেকে নড়বা না, আমি বললাম তোরা কী শুরু করেছিস? আমার স্বাধীনতা নাই? আমার বয়স ৬১। আমার বাবা, ভাই, বোন কেউ নাই, আমার একমাত্র মা আছে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • ‘ভয়ে’ সরকারি তালিকায় নাম না তোলা ইমরান চলে গেলেন নীরবে
  • কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর ময়মনসিংহে স্বস্তির বৃষ্টি
  • ময়মনসিংহে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত
  • নান্দাইলে বাস-ইজিবাইক স্ট্যান্ড দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬
  • তাপপ্রবাহ আরও দুয়েক দিন, এর পর বৃষ্টি
  • গামছা পরে ঘুমিয়ে থাকার কারণ জানালেন সমু চৌধুরী
  • ‘দেশে ভালো-মন্দ দেখার কেউ নেই প্রতিবাদ করলে অপমানিত হতে হয়’
  • ‘দেশে ভালো-মন্দ দেখার কেউ নেই, প্রতিবাদ করলে অপমানিত হতে হয়’