মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্কনীতির জন্য হোয়াইট হাউসের এক শীর্ষ উপদেষ্টার সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কয়েকটি পোস্ট দিয়েছেন ইলন মাস্ক। তিনি ওই উপদেষ্টাকে ডিঙিয়ে সরাসরি ট্রাম্পের কাছে তাঁর ব্যক্তিগত আবেদন তুলে ধরেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন দুই ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। যদিও এ প্রচেষ্টা এখনো সফল হয়নি। ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। যদিও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে শুল্কনীতির কিছু দিক নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি রাজি আছেন।

এরই মধ্যে ইলন মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি প্রয়াত রক্ষণশীল অর্থনীতিবিদ মিল্টন ফ্রিডম্যানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহযোগিতার ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, বরং পণ্যের দামের ওপর ভিত্তি করে বাজার ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এমনকি একটি সাধারণ কাঠের পেনসিলের উপকরণগুলোও সারা বিশ্ব থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

মার্কিন প্রশাসনের প্রধান অগ্রাধিকার নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, তাকে এযাবৎকালে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর শীর্ষ কোনো উপদেষ্টার সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিরোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইলন মাস্ক গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প ও অন্য রিপাবলিকানদের সমর্থনে প্রায় ২৯ কোটি ডলার ঢেলেছিলেন।

গত শনিবার ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোকে একহাত নিয়েছেন। ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা তৈরির মূল চাবিকাঠি ছিলেন মার্কিন এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মাস্ক।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মাস্ক মার্কিন সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধান হিসেবে ব্যয় সংকোচন প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। দক্ষ অভিবাসীদের জন্য এইচ ওয়ান-বি ভিসা এবং সরকারি ব্যয় নিয়ে ডিওজিইর দৃষ্টিভঙ্গির মতো বিষয়গুলো নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গেও দ্বিমত পোষণ করেছেন মাস্ক।

গত শনিবার ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোকে একহাত নিয়েছেন। ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা তৈরির মূল চাবিকাঠি ছিলেন মার্কিন এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মাস্ক। এক্সে তিনি তাচ্ছিল্য করে লিখেছেন, ‘হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়া একটি বাজে বিষয়, কোনো ভালো বিষয় নয়।’

এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধ করা হলেও সাড়া দেননি নাভারো।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট অত্যন্ত প্রতিভাবান ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের একটি অসাধারণ দল গঠন করেছেন, যাঁরা আলোচনার টেবিলে বিভিন্ন ধারণা নিয়ে আসেন। তবে তাঁরা এটাও জানেন যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ট্রাম্পই নেবেন। যখন তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তখন সবাই সেটি বাস্তবায়নে একই পথে হাঁটেন। এ কারণেই পূর্ববর্তী প্রশাসন চার বছরে যা করেছে, বর্তমান প্রশাসন দুই মাসে তার চেয়ে বেশি কাজ করেছে।

ইতালির উপপ্রধানমন্ত্রী মাতেও সালভিনি সপ্তাহান্তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মাস্ক বলেছেন, তিনি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল দেখতে চান।

মাস্কের মতে, ‘দিন শেষে, আমার মনে হয় সবাই এ বিষয়ে একমত যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আদর্শগতভাবে একই পথে হাঁটা উচিত। আর আমার দৃষ্টিতে তা হলো একটি শুল্কমুক্ত অবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়া।’

মাস্ক আরও বলেন, মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলাচলের ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বাধীনতা চান তিনি। পাশাপাশি তাঁরা চাইলে যাতে পছন্দসই দেশে কাজ করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে এটা ছিল প্রেসিডেন্টের প্রতি আমার পরামর্শ।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় দেশকে উৎপাদন ও ভোক্তার কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে, সেসব কোম্পানির ব্যবসায়িক লক্ষ্যের জন্য শুল্ককে ক্ষতিকর বলে মনে করে আসছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্ক। যদিও নতুন শুল্কের ফলে অন্য গাড়ি নির্মাতারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কিন্তু মাস্ক অন্তত ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকেই শুল্কের বিরোধিতা করে আসছেন। সে সময় চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে টেসলার আমদানির ওপর কর বাতিল চেয়ে একটি মামলাও করেছিল মাস্কের প্রতিষ্ঠান।

২০২০ সালে টেসলার শীর্ষ নির্বাহীরা চেয়েছিলেন, চীনের ওপর শুল্ক আরোপের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোম্পানিটি মামলা করুক। মাস্ক প্রথমে এতে একমত হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে ট্রাম্পের শুল্কনীতির কিছু অংশ গাড়ি প্রস্তুতকারকদের প্রতি অন্যায্য। কিন্তু ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে টেসলা মামলা করার পর, মাস্ক এই সিদ্ধান্তের প্রতি ‘অতি নেতিবাচক’ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। এমনকি মামলা করতে পরামর্শ দেওয়ায় কয়েকজনকে তিরস্কার করেছিলেন। এর কারণ সম্পর্কে বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত এক ব্যক্তি বলেন, টুইটারে ডানপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো বলেছিল, মাস্ক চীনাদের অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করছেন এবং ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার বিরুদ্ধে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র বলেছে, গত বছর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পকে সমর্থনকারী অনেক ব্যবসায়ী ও প্রযুক্তিনেতা তাঁর এই উচ্চ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন। একইভাবে হতাশ হয়েছেন এই ভেবে যে তাঁরা এই নীতির ওপর আরও বাড়তি প্রভাব রাখতে পারেননি।

গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারণায় প্রায় ২৯ কোটি ডলার ঢেলেছিলেন ইলন মাস্ক.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প ইলন ম স ক উপদ ষ ট কর ছ ন র জন য র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত

রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।

গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে। 

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ