নওমুসলিমের বাড়ি ভেঙে ফেলায় সড়কে বিক্ষোভ-নামাজ আদায়
Published: 9th, April 2025 GMT
টাঙ্গাইলের মধুপুরে বনবিভাগের পক্ষ থেকে এক নওমুসলিম নারীর বাড়ি ভেঙে দেওয়ায় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বুধবার (৯ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ওই সড়কের মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকায় তারা বিক্ষোভ শেষে সড়ক অবরোধ করেন এবং সড়কেই নামাজ আদায় করেন।
মধুপুর উপজেলার গাছাবাড়ি এলাকায় এক খৃষ্টধর্মীয় গারো নারী কয়েক বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে সুমাইয়া শেখ নামের ওই নারী পঁচিশ মাইল এলাকায় ফারুক হোসেন নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে একটি কক্ষে বিনাভাড়ায় বসবাস করেন।
ওই নারীর প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অর্থ দিয়ে পঁচিশ মাইল বাসস্ট্যান্ডের কাছে বসতিপূর্ণ এলাকায় তিন শতাংশ জমির দখলস্বত্ব কিনে দিয়ে ঘর নির্মাণ করে দেন। সেই ঘরটির নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি।
বুধবার সকালে বন বিভাগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে সুমাইয়া নামের ওই নওমুসলিম নারীর ঘরটি ভেঙে দেয়।
সুমাইয়া শেখ বলেন, “ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করায় আমি এখন একেবারে অসহায়। একজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছি। স্থানীয় বাসিন্দারা অনুদান ও যাকাতের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করায় বাড়িটি করা সম্ভব হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এখনো আমি ওই ঘরে উঠতে পারিনি। বুধবার সকালে বনবিভাগের লোকজন আমার ঘর ভেঙে ফেলে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাকে কোন প্রকার নোটিশও দেওয়া হয়নি। ঘর করা যাবে না বা ঘর সরিয়ে নিন এমন কোন বার্তাও কেউ কখনো দেয়নি। হঠাৎ করেই বুধবার সকালে আমার ঘর ভেঙে দেয় বনবিভাগ। আমি এর ক্ষতিপূরণ চাই। চারদিকে শতশত বাড়ি ঘর। আমার ওপর এই নিষ্ঠুরতার বিচার চাই।”
বনবিভাগের উচ্ছেদ অভিযানের পর স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা আছরের নামাজের পর থেকেই জলছত্র থেকে পঁচিশ মাইল এলাকা পর্যন্ত বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। মাগরিবের আগে পচিশমাইল এলাকায় সমাবেশ শেষে বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএডিসি মসজিদের ইমাম ইব্রাহীম তকী, মুফতি আরিফ আদনান, পচিশমাইল জামে মসজিদের খতিব আব্দুল বাছেদ, মুফতি মাসুম বিল্লাহ, ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ, আব্দুস সামাদ খান, আবু হানিফ, হাফেজ সোহাইল আহমেদ প্রমুখ। সমাবেশ শেষে সড়কেই তারা মাগরিবের নামাজ আদায় করেন।
এই অবরোধের ফলে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ হয়ে চলাচলকারী সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের উভয় প্রান্তে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে গাছাবাড়ী বিটের বন কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, “রেঞ্জ অফিস থেকে আমাকে বলেছে তাই আমি উচ্ছেদ অভিযানে গিয়েছি। আমি নতুন এসেছি, এর বেশি কিছুই জানি না।”
ঢাকা/কাওছার/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বনব ভ গ এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
আরও ৩৭ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও নওগাঁ সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ আরও ৩৭ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তাদের সবাইকেই বিজিবি আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করেছে। আটকরা সবাই নিজেদের বাংলাদেশি বলে দাবি করেছেন। বিভিন্ন সময় কাজের জন্য অবৈধভাবে তারা ভারতে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে গত ৪০ দিনে ১ হাজার ৪৩৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিল বিএসএফ।
শুক্রবার ভোরে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার অচিন্তপুর সীমান্তের ২৯৫ নম্বর মেইন পিলারের ১ নম্বর সাব-পিলার এলাকা দিয়ে একই পরিবারের ১৪ জনসহ ১৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করেন। আটকদের মধ্যে ৯ শিশু ও ৩ নারী রয়েছেন।
বিজিবি জানায়, আটকরা নিজেদের বাংলাদেশি বলে দাবি করেছেন। সবার দাবি, তারা নড়াইল জেলার কালিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা। ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে কাজের জন্য মুম্বাই যান। তাদের বিরামপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
একই দিন ভোরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। বিজিবির নিউ পাল্লাথল বিওপির টহল দল তাদের আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। আটকদের মধ্যে তিন নারী ও ছয় শিশু রয়েছে। বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ জানান, আটকদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের গোলাবাড়ি সীমান্ত দিয়ে গতকাল ভোরে নারী, শিশুসহ সাতজনকে ঠেলে দেয় বিএসএফ। এর মধ্যে তিন নারী, দুই পুরুষ ও দু’জন শিশু। সীমান্তের মেইন পিলার ৭৪৩-এর ১ নম্বর সাব-পিলার এলাকা থেকে তাদের আটক করে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অমরখানা ক্যাম্পের টহল দল। জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা নিজেদের বাংলাদেশি দাবি করেন। সবার দাবি, তারা নড়াইল ও যশোর এলাকার বাসিন্দা। এর আগেও চার দফায় নারী, শিশুসহ ৬০ জনকে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ।
এ ছাড়া নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্ত দিয়ে আছিয়া বেগম (৫০) নামে এক নারীকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। গতকাল দুপুরে উপজেলার জগদ্দল মাঠের মধ্যে থেকে তাঁকে বিজিবি আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করে। ওই নারী ১০ বছর ধরে ভারতের মুম্বাইতে একটি হাসপাতালে আয়ার কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি যশোর জেলার ইশবপুর নামক এলাকায়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার মুন্সিপাড়া বিওপি কড়ইগড়া সীমান্ত দিয়ে দুই শিশুসহ ৯ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। তাদের মধ্যে আটজনের বাড়ি বাগেরহাট এবং একজনের ধোবাউড়ায়। তারা সবাই আট বছর ধরে ভারতের চেন্নাইয়ের বিভিন্ন স্থানে কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন।
বিজিবি জানায়, চেন্নাই পুলিশের ধাওয়া খেয়ে এই ৯ জন দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের মেঘালয়ের শীবগঞ্জ পুলিশ তাদের আটক করে।
(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো খবর)