ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব–সহযোগিতা চুক্তি করতে আলোচনা শুরু বৃহস্পতিবার
Published: 10th, April 2025 GMT
প্রায় ২৫ বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল মূলত উন্নয়ন সহযোগিতাকেন্দ্রিক। সেই সহযোগিতাকে পরের ধাপে উত্তরণের লক্ষ্যে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি (পিসিএ) সই করতে যাচ্ছে দুই পক্ষ। চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ও ইইউর উচ্চপর্যায়ের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন বাংলাদেশের এমন কর্মকর্তারা বলছেন, দর-কষাকষি শেষে আগামী দেড় বছরের মধ্যে চুক্তিটি সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হতে পারে। তাঁদের আশা, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ আলোচনা শেষে পিসিএ সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক একটি চুক্তি সই করার মাধ্যমে ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব নিয়ে সহযোগিতার সম্পর্কের একটি রূপরেখা প্রতিষ্ঠা পাবে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পিসিএ নিয়ে ব্রাসেলসে আজ দুই দিনের আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ ও ইইউ। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মো.
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতার রাজনৈতিক উত্তরণ ঘটবে এই চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে। চুক্তিটি সই হলে গণতন্ত্র, সুশাসন, নিরাপত্তা, মানবাধিকারের পাশাপাশি অর্থনীতি, ব্যবসা ও বিনিয়োগের মতো নানা বিষয়ে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দর-কষাকষি শেষ করে আগামী বছরের জুনে চুক্তিটি সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করার ব্যাপারে আশাবাদী ঢাকা। এটি হলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ, যারা ইইউর সঙ্গে পিসিএ চুক্তি হবে।
পিসিএ কী, গুরুত্ব কেমনইইউর ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী, পিসিএ হলো আইনগত বাধ্যতামূলক চুক্তি, যা ইইউ ও একটি অংশীদার দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি রূপরেখা প্রতিষ্ঠা করে।
অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে ইইউ অংশীদার দেশগুলোতে রাজনৈতিক সংলাপ, শান্তি ও নিরাপত্তা, সুশাসন ও মানবাধিকার, বাণিজ্য, অর্থনীতি, আর্থিক সহযোগিতাসহ নানা বিষয় এর মধ্যে থাকে।
অর্থাৎ এই সহযোগিতার পরিধিতে রয়েছে গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমর্থন করা। একটি শক্তিশালী মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং ব্যবসা ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশের বিকাশ নিশ্চিত করা। নানা ক্ষেত্রে বাণিজ্য সম্পর্ক ও সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়টিও এর অন্তর্ভুক্ত।
পিসিএর উপাদানচুক্তির আওতায় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন, শ্রম অধিকার, সংযুক্তি, প্রতিরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি, মৎস্য, দক্ষ অভিবাসন, কৃষিসহ প্রায় ৩৫টি বিষয় রয়েছে।
পিসিএ নিয়ে গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এবার মূল আলোচনা শুরু হচ্ছে। ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের যে সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে, ভবিষ্যতে পিসিএ চুক্তি হলে তার জায়গা নেবে এটি। প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে ইইউর সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। সেই চুক্তিতে অর্থনীতি, উন্নয়ন, সুশাসন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
রাজনৈতিক উত্তরণের আকাঙ্ক্ষাবাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে সম্পর্কের পরিসর বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর নতুন করে ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। ব্রাসেলসে ওই অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউরোপিয়ান কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন উপস্থিত ছিলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির প্রথম দফার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় পিসিএ চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছিল ইইউ। পরবর্তী সময়ে ইইউ অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে পিসিএ সই করার সিদ্ধান্ত নিলে নভেম্বরে ঢাকায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছিল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহয গ ত র কর মকর ত র জন য বছর র সইয় র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান সাবেক শাহের পুত্রের
ইরানের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সাবেক যুবরাজ রেজা পাহলভি। ইসরায়েলের আক্রমণে যখন ইরানে প্রতিনিয়ত হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে তখন তিনি এ আহ্বান জানালেন।
রেজা পাহলভি ইরানের সাবেক রাজা মোহাম্মদ রেজা শাহের পুত্র। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবীদের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন তিনি। রেজা বর্তমানে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রেজা পাহলভি দাবি করেছেন, ইরানের সাধারণ মানুষ দেশটির সরকারের বিরোধিতা করে। তারা ইসরায়েলের আক্রমণে ‘পুনরায় উজ্জীবিত’ হয়েছে। এর ফলে ইরানের সিনিয়র সামরিক নেতারা নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, “চূড়ান্ত সমাধান হল শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন, এবং এখন আমাদের কাছে একটি সুযোগ রয়েছে কারণ এই শাসনব্যবস্থা তার দুর্বলতম পর্যায়ে রয়েছে।”
সাবেক এই যুবরাজ বিশ্বশক্তিগুলোকে ‘অলস বসে না থাকার’ আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিশ্বশুক্তিগুলোর উচিত নিষেধাজ্ঞা আরোপের বাইরে তারা ইরানি জনগণকে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার লড়াইয়ের প্রতি সমর্থনের অনুভূতি দেওয়ার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত তা স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করা উচিত।
পাহলভি দীর্ঘসময় ধরে ইরানের বিপ্লবী শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিদেশীদের সক্রিয়ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন।
ইরানে হামলার পর শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে ইরানি জনগণের প্রতি একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি ইরানিদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ইসলামী বিপ্লবীদের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার এখনই উপযুক্ত সময়।
ঢাকা/শাহেদ