পেশায় নির্মাণ শ্রমিক জিয়াউল হকের বাড়ি কুড়িগ্রামের দুর্গম চর নারায়ণপুরের মুন্সিপাড়া গ্রামে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে এসেছিলেন বাড়িতে। এখন ফেরার পালা গাজীপুরের কর্মস্থলে। বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখেন টিকিট নেই। নির্ধারিত ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ দিলে তবেই মিলবে টিকিট। শেষ পর্যন্ত আরও ২৬ সহকর্মী মিলে নিজেরাই ভাড়া করেন একটি বাস। এতেও অবশ্য খরচ পড়ে প্রতিজনের ৩০০ টাকা বেশি। 

ঈদ শেষে কুড়িগ্রাম থেকে ফিরতি যাত্রায় এমন গলাকাটা ভাড়াই আদায় করছেন বাস মালিকরা। প্রতি টিকিটে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি অর্থ। বাড়তি ভাড়া আদায়ে প্রশাসনের অভিযানেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।  

জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা ২৭ জন গাজীপুরের বিভিন্ন সাইটে রডমিস্ত্রির কাম করি। বাসের টিকিটের দাম ডাবল। তাই বাধ্য হয়া বাস রিজার্ভ করছি। জনপ্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা করে পড়ছে। তাও ৩০০ টাকা বেশি। এটা মানা যায়? কিন্তু কী করব, যেতে তো হবেই।’ 

তাদের সহযাত্রী রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘হামরা দিনমজুরি করি খাই। ৮০০ টাকার টিকিট ডাবল দিয়া ঢাকা যাওয়া খুব কষ্টের। ঈদের মেলা দিন পার হইলেও এল্যাও ডাবল ভাড়া নিচ্ছে।’

সরেজমিন কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়াগামী বাস কাউন্টারগুলোতে দেখা যায়, এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে ঘুরলেও যাত্রীরা কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাচ্ছেন না। তাদের বলা হচ্ছে, টিকিট শেষ। এর পর বাড়তি টাকায় টিকিট ম্যানেজ করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এ জন্য যাত্রীপ্রতি আদায় করা হচ্ছে ২০০ থেকে ১২০০ টাকা বেশি।

বিভিন্ন কাউন্টার ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুড়িগ্রাম থেকে রংপুরগামী প্রতি আসনের ভাড়া ১২০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা, কুড়িগ্রাম-বগুড়াগামী প্রতি আসন ৫০০ টাকার বিপরীতে দিনে ৭০০ ও রাতে ৯০০, ঢাকাগামী প্রতি আসন (নন-এসি) ৮৫০ টাকার স্থলে ১৪০০, এসি ১২০০ টাকার জায়গায় ২ হাজার এবং স্লিপার আসন ১৮০০ টাকার বিপরীতে ৩ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে জেলা প্রশাসন অভিযান চালালেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। অসাধু বাস মালিকরা ঠিকই সিন্ডিকেট করে টিকিট শেষ দেখাচ্ছেন। এর পর বেশি টাকায় সেই টিকিট বিক্রি করছেন।

ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী দুর্জয় সরকার তেমনই এক ভুক্তভোগী। দুই দিন ধরে কাউন্টারগুলোতে ঘুরেও তিনি টিকিট পাননি। মঙ্গলবার দুর্জয় বলেন, পরিচিতের মাধ্যমে এসএন কাউন্টার থেকে ৮০০ টাকা বেশি দিয়ে একটি এসি সিট পেলাম।

রফিকুল রঞ্জু নামে আরেকজন বলেন, ঈদের ছুটিতে আমার বোন কুড়িগ্রামে এসেছে। খোঁজাখুঁজির পরে এসএন কাউন্টার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার এসির স্লিপার কোচের একটি টিকিট ৩ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। প্রশাসনের অভিযানের পরও কোনো কিছু পরোয়া করছেন না বাস মালিকরা।

অবশ্য হক এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের কুড়িগ্রাম কাউন্টারের ম্যানেজার মো.

হেলালের দাবি, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। দু-একশ টাকা বেশি নিলেও তা যাত্রীদের সম্মতি নিয়েই নেওয়া হচ্ছে।

এসএন পরিবহনের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা কোনো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছি না। বরং ২০০ টাকা ডিসকাউন্ট দিচ্ছি। ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। 

নাবিল পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মহসিন বলেন, ‘হেড অফিস থেকে ভাড়ার বিষয়টি নির্ধারণ করে দেয়। আমাদের কী করার আছে বলুন’। আর হানিফ, এনা, শ্যামলীসহ একাধিক বাস কাউন্টারে থাকা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউই এ বিষয়ে বলতে রাজি হননি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুড়িগ্রামের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী বলেন, ঈদ উপলক্ষে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুযোগ নেই। কেউ অভিযোগ দিলে অভিযান চালানো হবে। 

জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তর অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি নিয়মিত মনিটর করছে। অভিযানও চালানো হচ্ছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ২০০ ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ

বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।

দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।

পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’

সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসী

সম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।

এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।

সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।

রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ