হাত–পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়েছিল শরীরে
Published: 10th, April 2025 GMT
ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ছয় বছর আজ বৃহস্পতিবার। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ওই বছরের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনায় মাদ্রাসা ভবনের ছাদে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৬ আসামিকে নিম্ন আদালত ফাঁসির দণ্ড প্রদান করলেও উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স শুনানিতে আটকে আছে কার্যক্রম। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসামির স্বজনদের হুমকির কারণে অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে নুসরাতের পরিবার। এ কারণে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে নুসরাতের পরিবারকে থাকতে হচ্ছে পুলিশি পাহারায়।
যেভাবে হত্যা করা হয়
২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল। ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত মাদ্রাসায় গিয়েছিলেন আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিতে। পরীক্ষা শুরুর আগে বান্ধবী নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে, এমন খবর শুনে ছাদে ছুটে গিয়েছিলেন নুসরাত। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া পাঁচজন মিলে তাঁকে ছাদে চিত করে শুইয়ে ফেলেন। তাঁর পরনের ওড়নাটি দুই ভাগ করে বেঁধে ফেলেন হাত-পা। এরপর এক লিটার কেরোসিন নুসরাতের গলা থেকে পা পর্যন্ত ঢালা হয়। ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পায়ে। আগুন যখন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তখন এই পাঁচজন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেন।
নুসরাত হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীমের (২০) জবানবন্দি থেকে উঠে আসে সেদিনের বিস্তারিত তথ্য। শাহাদাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত। শরীরের ৮০ শতাংশ পোড়া নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঁচ দিন লড়ার পর ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত।
কিন্তু কেন এমন কাজ করলেন মাদ্রাসার কিছু শিক্ষার্থী। মৃত্যুর আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসকদের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে অধ্যক্ষ সিরাজকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন। গ্রেপ্তার শাহাদাত হোসেন, নুর উদ্দিনসহ বিভিন্ন আসামির আদালতে দেওয়া জবানবন্দি ও মামলার রায়ে পেছনের কারণ স্পষ্ট হয়। আসামিদের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, নুসরাত খুনিদের লক্ষ্য হন ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনার পর থেকেই। ওই ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার সোনাগাজী থানায় মামলা করেছিলেন। এর পর থেকেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল পরিবারটিকে। তবে প্রতিবাদে অনড় ছিলেন নুসরাত। আগুন ধরিয়ে দেওয়ার আগমুহূর্তেও তাঁকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয়, কিন্তু নুসরাত তা মানেননি। পরবর্তী সময়ে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায়ও তিনি প্রতিবাদ করে গেছেন।
নুসরাত হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার শাহাদাত হোসেন ও নুর উদ্দিন ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ১১ ঘণ্টা ধরে ৫৭ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে তাঁরা ওই দিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন।
এই দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে জড়িত তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্রেপ্তার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার সঙ্গে দেখা করতে ৩ এপ্রিল যাঁরা কারাগারে গিয়েছিলেন, অধ্যক্ষ তাঁদের সবার কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এরপর তিনি আলাদাভাবে মাদ্রাসাছাত্র ও ‘সিরাজ উদদৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক নুর উদ্দিন (২০), যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম (২০) এবং আরেক ছাত্রের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন। তিনি তাঁদের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নুসরাতকে চাপ দিতে বলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি শাহাদাতের সঙ্গে একা কথা বলেন। তখন তিনি চাপে কাজ না হলে প্রয়োজনে নুসরাতকে হত্যার নির্দেশ দেন। আর সে পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয় নুসরাতকে।
বাড়ির বাইরে পুলিশের পাহারা। নিরাপত্তাহীনতার কারণে এভাবেই থাকতে হচ্ছে নুসরাতের পরিবারকে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র পর ক ষ অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
এবারের ঈদযাত্রায় প্রাণহানি গত ঈদের চেয়ে বেশি: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
এবার পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির ১৫ দিনে দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৩৭৯টি দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৮২ জন আহত হয়েছেন।
গত ঈদের তুলনায় এবার সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহত মানুষের সংখ্যা বেশি ছিল বলে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়। ঈদুল ফিতরের ছুটির ১৫ দিনে ৩৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৫২ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ৮৩৫ জন।
আজ সোমবার ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন’ প্রকাশ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
লিখিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবার বেশি ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। ঈদযাত্রায় সড়ক–মহাসড়কে ১৩৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত ও ১৪৮ জন আহত হয়েছেন। এটি মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ শতাংশের বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসব দুর্ঘটনায় হতাহত ৬১ জন চালক, ৫০ জন পরিবহনের শ্রমিক, ৫৮ জন পথচারী, ৪০ জন নারী, ৩০টি শিশু, ৩২ জন শিক্ষার্থী, ৭ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৫ জন শিক্ষক, ১ জন করে চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীর পরিচয় মিলেছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে ও ২৮ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়।
সাংবাদিকের করা এক প্রশ্নে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহামারির মতো যাত্রীর প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। সড়কে যাত্রীসুবিধা নিশ্চিত ও সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে দক্ষ, প্রশিক্ষিত লোকের সমন্বয়ে সঠিক ম্যানেজমেন্ট–ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক আরমানা সাবিয়া হক, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকা আফরোজ, মনজুর হোসেন, জি এম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।