ঘুরে দাঁড়িয়েছে এশিয়ার শেয়ারবাজার, বেড়েছে তেল ও সোনার দাম
Published: 10th, April 2025 GMT
চরম টালমাটাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কখন কী সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন আর তার জেরে কি–না–কি ঘটবে, এই আতঙ্ক জেঁকে বসেছে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে। গতকাল বুধবার রাতে (বাংলাদেশ সময়) ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ব্যতীত সব দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার।
বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শেয়ারবাজারে স্বস্তির বাতাস বাইছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাপানের নিক্কি এশিয়া সূচকের ৮ শতাংশ উত্থান হয়েছে। গতকাল মার্কিন শেয়ারবাজারের যে উত্থান হয়েছে, তাকেও ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছে বিবিসি।
সেই সঙ্গে এশিয়ার অন্যান্য সূচকের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচকের উত্থান হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ; সাংহাই কম্পোজিট সূচকের উত্থান হয়েছে ১ শতাংশ; হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচকের উত্থান হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ; তাইওয়ানের তাইয়েক্স সূচকের উত্থান হয়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স সূচকের উত্থান হয়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। গতকাল এশিয়ার বাজারের সব সূচকই ছিল নিম্নমুখী।
গতকাল মার্কিন শেয়ারবাজারে প্রধান সূচক এস অ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের উত্থান হয়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। আগের দিন যেভাবে বন্ডের সুদহার বেড়েছে, সেই ধারাও থেমেছে, সুদ কমেছে বন্ডের। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ কিছুটা কমেছে। সেই সঙ্গে নিরাপদ মুদ্রাগুলোর বিপরীতে মার্কিন ডলারের বিনিময়হার বেড়েছে। অর্থাৎ বাজারের অনিশ্চয়তা অনেকটাই কেটেছে। সে কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসও মন্দার সম্ভাবনা হ্রাস করেছে, আগে যেখানে তারা বলেছিল যে মন্দার আশঙ্কা ৬৫ শতাংশ, সেখানে এখন তারা বলছে, মন্দার আশঙ্কা ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ তারা আগের অবস্থানে ফেরত গেছে। যদিও তারা বলছে, এখনো যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে সামগ্রিক শুল্ক হার ১৫ শতাংশ বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী স্কট বেসেন্টও ট্রাম্পের মতো বাজারের অস্থিরতা বা টালমাটাল পরিস্থিতির বিষয়টি একরকম উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প বলেছিলেন কেউ যেন প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ না করে, যারা তাঁর কথা রেখেছে, এই ৯০ দিন স্থগিত রাখার ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের উপকার হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মূলত আলোচনায় সর্বোচ্চ সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যই ট্রাম্প শুল্ককে একধরনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি শুরু থেকেই এই কৌশল অবলম্বন করে আসছেন। বা আপনারা বলতে পারেন, ট্রাম্প চীনকে বাজে পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছেন।
তেলের দাম বেড়েছে
গতকাল চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং তার জেরে চীনের ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘটনায় বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসে। এরপর ট্রাম্প শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দিলে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৫ ডলারে উঠে যায়, যদিও আজ সকালে দাম আবার কিছুটা কমে ৬৪ ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম এখন ব্যারেলপ্রতি ৬১ দশমিক ৮২ ডলার। তবে বাজারে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসার কারণেই তেলের দাম কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকেরা। খবর অয়েল প্রাইস ডট অর্গের।
বাড়ছে সোনার দাম
বিশ্ববাজারে আজ সকালে সোনার দাম বেড়েছে। এই ঘোর অনিশ্চয়তার সময় সোনার দাম বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক, যদিও ২ এপ্রিলের পর সোনার দামও পড়ে গিয়েছিল। গতকাল থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে সোনার দাম। আজ সকালে সোনার দাম বেড়েছে আউন্সপ্রতি ১৪৪ ডলার; দাম উঠে গেছে ৩ হাজার ১২৫ ডলারে। খবর গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র পর স থ ত গতক ল দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]