চরম টালমাটাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কখন কী সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন আর তার জেরে কি–না–কি ঘটবে, এই আতঙ্ক জেঁকে বসেছে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে। গতকাল বুধবার রাতে (বাংলাদেশ সময়) ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ব্যতীত সব দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার।

বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শেয়ারবাজারে স্বস্তির বাতাস বাইছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাপানের নিক্কি এশিয়া সূচকের ৮ শতাংশ উত্থান হয়েছে। গতকাল মার্কিন শেয়ারবাজারের যে উত্থান হয়েছে, তাকেও ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছে বিবিসি।

সেই সঙ্গে এশিয়ার অন্যান্য সূচকের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচকের উত্থান হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ; সাংহাই কম্পোজিট সূচকের উত্থান হয়েছে ১ শতাংশ; হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচকের উত্থান হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ; তাইওয়ানের তাইয়েক্স সূচকের উত্থান হয়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স সূচকের উত্থান হয়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। গতকাল এশিয়ার বাজারের সব সূচকই ছিল নিম্নমুখী।

গতকাল মার্কিন শেয়ারবাজারে প্রধান সূচক এস অ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের উত্থান হয়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। আগের দিন যেভাবে বন্ডের সুদহার বেড়েছে, সেই ধারাও থেমেছে, সুদ কমেছে বন্ডের। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ কিছুটা কমেছে। সেই সঙ্গে নিরাপদ মুদ্রাগুলোর বিপরীতে মার্কিন ডলারের বিনিময়হার বেড়েছে। অর্থাৎ বাজারের অনিশ্চয়তা অনেকটাই কেটেছে। সে কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসও মন্দার সম্ভাবনা হ্রাস করেছে, আগে যেখানে তারা বলেছিল যে মন্দার আশঙ্কা ৬৫ শতাংশ, সেখানে এখন তারা বলছে, মন্দার আশঙ্কা ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ তারা আগের অবস্থানে ফেরত গেছে। যদিও তারা বলছে, এখনো যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে সামগ্রিক শুল্ক হার ১৫ শতাংশ বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী স্কট বেসেন্টও ট্রাম্পের মতো বাজারের অস্থিরতা বা টালমাটাল পরিস্থিতির বিষয়টি একরকম উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প বলেছিলেন কেউ যেন প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ না করে, যারা তাঁর কথা রেখেছে, এই ৯০ দিন স্থগিত রাখার ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের উপকার হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মূলত আলোচনায় সর্বোচ্চ সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যই ট্রাম্প শুল্ককে একধরনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি শুরু থেকেই এই কৌশল অবলম্বন করে আসছেন। বা আপনারা বলতে পারেন, ট্রাম্প চীনকে বাজে পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছেন।

তেলের দাম বেড়েছে

গতকাল চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং তার জেরে চীনের ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘটনায় বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসে। এরপর ট্রাম্প শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দিলে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৫ ডলারে উঠে যায়, যদিও আজ সকালে দাম আবার কিছুটা কমে ৬৪ ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম এখন ব্যারেলপ্রতি ৬১ দশমিক ৮২ ডলার। তবে বাজারে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসার কারণেই তেলের দাম কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকেরা। খবর অয়েল প্রাইস ডট অর্গের।

বাড়ছে সোনার দাম

বিশ্ববাজারে আজ সকালে সোনার দাম বেড়েছে। এই ঘোর অনিশ্চয়তার সময় সোনার দাম বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক, যদিও ২ এপ্রিলের পর সোনার দামও পড়ে গিয়েছিল। গতকাল থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে সোনার দাম। আজ সকালে সোনার দাম বেড়েছে আউন্সপ্রতি ১৪৪ ডলার; দাম উঠে গেছে ৩ হাজার ১২৫ ডলারে। খবর গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র পর স থ ত গতক ল দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ