প্রকৃতিতে চলছে বসন্ত’র শেষ আয়োজন। চৈত্রের রোদেলা দুপুরে হাওর পাড়ের পথ ধরে যেতে যেতে চোখে পড়ে নানা রঙের চেনা অচেনা কত ফুল।  মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই প্রকৃতির নিয়মেই বেড়ে ওঠা গাছগুলোতে ফোটা ফুল মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। 

গ্রামীণ জনপদে সন্ধ্যা নামার আগেই ফুলের সুঘ্রাণ জলযোদ্ধাদের মন ভরে দেয়। বলেন, আহ কি সুন্দর গন্ধ! 

মৌলভীবাজারের হাওর কাওয়াদীঘির বুক ছুঁয়ে রাজনগর বালাগঞ্জ সড়কের দু’ধারে সবুজ ধান ক্ষেত। হাওর ঘেরা কুশিয়ারা নদীর পার ঘেঁষে দূর পথ। ওই পথের ধারেই এমন দৃশ্য মন কাড়ছে  প্রকৃতি প্রেমিদের।  দেখা মিলে অবহেলায় ফুটে থাকা হাওর পারের পিউম ফুল, ভাঁট ফুল (বনজুঁই) ও বরুন ফুলের। 

হাওর পাড়ের ফুল

পিউম ফুল মৌলভীবাজারের হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওরের আনাচে-কানাচে ফুটে সৌন্দর্য্য বিলাচ্ছে। হাওর এলাকায় জল সহনীয় কত জাতের উদ্ভিদ রয়েছে। খালের পাড় বাঁধের পাশে রঙের পসরা নিয়ে ফুটে আছে এ ফুল। 

কথিত আছে, পিউম দক্ষিণ আমেরিকার উদ্ভিদ। এর আদি আবাস অর্জেন্টিনা,প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে এবং দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিল। বর্ণিল সৌন্দর্য্যের জন্য উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এগুলো। 

ভাঁট ফুল আমাদের গ্রামীণ প্রকৃতির আরেক পরিচিত বুনো উদ্ভিদ। এর রয়েছে আনেক নাম। ভাঁট, ভাইট, বনজুঁই, ভন্টাকি বা চৈতঘাড়া ফুল। তবে মৌলভীবাজারের বাসিন্দারা একে ভাটিগাছ বলে ডাকেন। 

হাওর পাড়ের ফুল

কাউয়াদীঘি হাওর পাড়ে গেলে কুশিয়ারা নদীর পাড়ের কাশেমপুর পাকা সড়কের পাশে সারি সারি ভাঁট ফুলের গাছ দেখা যায়। ফুটন্ত ফুলের ঘ্রাণে মন ভরে উঠে অনেকের। হাওর পাড়ের জলযোদ্ধা শফিকুল বলেন, “আমরা হাওর পারের বাসিন্দা শ্রমের সাথে জীবন বাঁধা। বিকেল বেলা রাস্তায় ঘুরাফেরার সময় ফুলের গন্ধে মন ভরে যায়।” 

ভাঁটফুল গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। গাছটি খুব বড় হয়না, ১ থেকে ২ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এতে সাদা থোকা থোকা ফুল ফোটে। 

হাওর পাড়ে পলাশ শিমুলের সাথে পাল্লা দিয়ে সৌন্দর্য্যের পসরা সাজিয়ে প্রকৃতিতে রঙ লাগিয়েছে বরুণ ফুল। 

প্রকৃতি সাজানো এ বরুণ ফুলের সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়ে প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, “সেখানে সবুজ ডাঙা ভরে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল ;/ সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল;/ সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ/ সেখানে বারুণী থাকে গঙ্গাপসাগরের বুকে, সেখানে বরুণ।” 

হাওর পাড়ের ফুল

হাওরের পাড়ে ফুটে রয়েছে চোখজুড়ানো সাদা বরুণ ফুল। সাদা হালকা ও বেগুনি রঙের সাজের বরুণ রাস্তায় নানা শ্রেণি পেশার পথচারিদের নজর কাড়ছে। বরুণ গাছ সাধারণত ১০ থেকে ১২ মিটার উঁচু হয়। এর ফল গোলাকার বা ডিম্বাকার শক্ত শাঁসালো। ওই গাছের নিচে রয়েছে অসংখ্য পিউম ফুল। এমন দৃশ্যে পথে থেমে যান স্কুলশিক্ষক নুরুল ইসলাম বেগ। তিনি বলেন, “হাওর পাড়ের রাস্তায় আসা যাওয়াতে ফুলগুলো আমাদের বিমোহিত করে।” 

হাওর পাড়ের পৈতুরা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা বৃক্ষপ্রেমি ষাটোর্ধ্ব বয়সি উকিল মিয়া বলেন, “ধীরে ধীরে হাওর এলাকার ঔষধি গুণে ভরপুর অনেক উদ্ভিদ সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।” 

মৌলভীবাজারের আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ”হাওর অঞ্চলের মানুষ এক সময় রোগবালাইয়ে ভেষজ চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল ছিলেন। প্রাচীনকাল থেকে বরুণ, ভাঁট গাছের পাতাসহ পথের ধারে জন্মানো অনেক ঔষধি উদ্ভিদ বাতজ্বর ব্যথা পেটের পীড়া এসব রোগের ঔষধ হিসেবে কাজে লাগাতেন স্থানীয়রা। আধুনিক চিকিৎসার উন্নতির ফলে মানুষ আগের মত এসবের ব্যবহার না করলেও বয়স্করা ঠিকই এর কদর বুঝেন।” 

রাজনগর উপজেলা সদরের আয়ুর্বেদীয় আরেক চিকিৎসক ডাক্তার আবুবকর বলেন, ”বর্তমানে উদ্ভিদজাত ভেষজ ঔষধের চাহিদা বেড়েছে।  ঔষধিগুণ সম্পন্ন গাছগুলো ভেষজ ঔষধের কাঁচামাল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যেতে পারে। এতে আমাদের প্রকৃতিও মনোরম থাকবে।” 

ঢাকা/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ওর প ড় র ফ ল স ন দর য য

এছাড়াও পড়ুন:

বিএলআরআই নিয়োগবিধিতে বৈষম্যের অভিযোগে গবিতে মানববন্ধন

বাংলাদেশ লাইভস্টক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) নিয়োগবিধিতে সমন্বিত বিএসসি ডিগ্রি অন্তর্ভুক্ত না করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা।

আরো পড়ুন:

সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন

ইবিতে ছাত্রীর পোশাক নিয়ে শিক্ষকের কটূক্তি, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘অধিকারের নামে কেন এই বৈষম্য?’, ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারী ছাত্র-ছাত্রী চাই ন্যায্য সম্মান’, ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রি অপরাধ নয়’, ‘ভেটেরিনারি একটাই পরিবার, কম্বাইন্ড ডিগ্রিতে সমান অধিকার’, ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারী ছাত্র-ছাত্রী চাই ন্যায্য সম্মান’, ‘ভেটেরিনারি পরিবারে সমান অধিকার’, ‘সমন্বিত শিক্ষা দেশের সম্মান’, ‘আদিম পশু পালনে নয়, বরং সমন্বিত ভেটেরিনারি শিক্ষা দেশের সম্মান’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগবিধি সংশোধন না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।

এ সময় গবি ছাত্র সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “বাংলাদেশ লাইভস্টক রিসার্চ ইনস্টিটিউট কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের নিয়োগে বৈষম্য করছে। এটি আমাদের প্রতি স্পষ্ট অবিচার। আমরা ইতোমধ্যে প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ম্যামসহ বিএলআরআই কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু তারা বারবার বিষয়টি উপেক্ষা করছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।”

আরেক শিক্ষার্থী মো. মাহিদুজ্জামান সিয়াম বলেন, “দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থে ২০১৬ সালে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর উদ্যোগে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও এই কোর্স চালু করা হয়। আমরা পশু চিকিৎসা ও পশু পালন—উভয় বিষয়ে সমন্বিত জ্ঞান অর্জন করি। অথচ বিএলআরআই আমাদের কোনো গবেষণা বা চাকরির সুযোগ দিচ্ছে না। এটি বৈষম্যমূলক ও স্বৈরাচারী আচরণ।”

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেন এবং সমস্যার দ্রুত সমাধানে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ