প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে শুল্কের খড়্গ চাপানোর পেছনে যুক্তি হিসেবে বারবারই যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ‘অন্যায্য বাণিজ্যের’ শিকার হচ্ছে, সেই দাবি করছেন।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশে বিদেশি পণ্য প্রবেশের ওপর শুল্ক বা আমদানি কর ধার্য করেন। এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের পণ্যে আরোপ করেছেন সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। প্রতিশোধ হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্যে ধার্য করেছে বড় অঙ্কের শুল্ক।

শুল্ক নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করা দাবিগুলোর কিছু প্রমাণিত নয় বা এমনকি সেসব মিথ্যা। বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে বিবিসি ভেরিফাই।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারাও সম্প্রতি দাবি করেছেন, বছরে এখন থেকে শুল্ক আয় ৭০০ বিলিয়ন (৭০ হাজার কোটি) ডলারে দাঁড়াতে পারে। এ থেকে দিনে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি এ পরিসংখ্যান কীভাবে দাঁড় করালেন, সেটি পরিষ্কার নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক থেকে দেশটির আয় তাঁর দেওয়া এ পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক কম হতে পারে।যুক্তরাষ্ট্র কি দৈনিক ২ বিলিয়ন ডলার আয় করছে

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে তাঁর নতুন শুল্ক ঘোষণার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘আমরা শুল্ক দিয়ে প্রচুর আয় করছি—দিনে (২ বিলিয়ন) ২০০ কোটি ডলার।’

ট্রাম্পের এ বক্তব্যকে সমর্থন করে, এমন কোনো প্রকাশিত তথ্য বিবিসি ভেরিফাই খুঁজে পায়নি। যদিও শুল্ক থেকে পাওয়া কত অর্থ ফেডারেল সরকারে পাঠানো হয়, তা নিয়ে প্রতিদিন বিবৃতি দেয় মার্কিন অর্থ বিভাগ।

৭ এপ্রিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক আয় সর্বোচ্চ ২১৫ মিলিয়ন (২১ কোটি ৫০ লাখ) ডলার। এটি ট্রাম্পের দাবি করা অঙ্কের চেয়ে অনেক কম।

অবশ্য ট্রাম্পের ওই দাবি শুল্ক থেকে বছরের সামনের দিনগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের অনুমেয় আয়ের ভিত্তিতে হতে পারে।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র দৈনিক ৯ বিলিয়ন (৯০০ কোটি) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। কিছু বিশ্লেষক হিসাব কষে দেখেছেন, গত ২ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রাম্পের আরোপ করা গড় শুল্কহার ছিল ২২ শতাংশ। সে হিসাবে আমদানি করা পণ্য থেকে দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আয় হতে পারে ২ বিলিয়ন (তবে নতুন শুল্ক ঘোষণায় দেশটিতে পণ্য আমদানি কমতে পারে)। এখানে যে আয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির পরিমাণ আগের মতোই ধরা হয়েছে।

ট্রাম্পের ওই দাবির ভিত্তি ৬ এপ্রিল তাঁর বাণিজ্য উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেও হতে পারে।

আরও পড়ুনপাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেন ট্রাম্প, এ সময় এই শুল্ক থাকছে ১০ শতাংশ১৬ ঘণ্টা আগে

বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারাও দাবি করেছিলেন, বছরে এখন থেকে শুল্ক আয় ৭০০ বিলিয়ন (৭০ হাজার কোটি) ডলারে দাঁড়াতে পারে। এ থেকে যুক্তরাষ্ট্র দিনে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা এ পরিসংখ্যান কীভাবে দাঁড় করালেন, সেটি পরিষ্কার নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয় তাঁর দেওয়া এ পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক কম হতে পারে।

ট্রাম্পের দাবির পক্ষে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য জানতে চেয়েছে বিবিসি ভেরিফাই।

আপনারা জানেন, আমরা তাদের (ইইউ) কাছ থেকে লাখ লাখ গাড়ি নিই। তারা কোনো গাড়ি নেয় না। তারা আমাদের কৃষিপণ্যও নেয় না। তারা কিছুই নেয় না।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টচীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কি ১ লাখ কোটি ডলার

একটি দেশ যখন অন্য দেশের কাছে থেকে রপ্তানির তুলনায় পণ্য আমদানি বেশি করে, তখন বাণিজ্যঘাটতি দেখা দেয়। ট্রাম্পের দাবি, চীনের সঙ্গে তার এ ঘাটতির পরিমাণ বিশাল।

৭ এপ্রিল ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের ১ লাখ কোটি ডলারের বাণিজ্যঘাটতি।’

রপ্তানি বাণিজ্যে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে, ঠিক। তবে ট্রাম্প যেমনটা দাবি করেছেন, তেমনটা নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ণ জ য উপদ ষ ট এ পর স খ য ন

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবার বলছে পরিকল্পিত হত্যা, মামলা নেয়নি পুলিশ

গাজীপুর মহানগরের হায়দরাবাদ তাল গাছিয়ারটেক এলাকায় গাছে বেঁধে নির্যাতনের শিকার এক ইমাম কারাগারে মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে অপবাদ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ। মারা যাওয়া মাওলানা রইস উদ্দিন ওই এলাকার আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন।

গত রোববার সকালে মসজিদ থেকে রইস উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় জুতার মালা। এরপর তাঁর ওপর চলতে থাকে নির্মম নির্যাতন। একদল ব্যক্তি অনেক মানুষের সামনে তাঁকে বেদম পিটিয়ে পুলিশে খবর দেয়। নির্যাতনকারীদের অভিযোগ, রইস উদ্দিন শিশু-কিশোরদের ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করতেন।
পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আদালতের নির্দেশে তাঁকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ওই রাতেই কারাগারে মারা যান রইস উদ্দিন।

গাজীপুর জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রফিকুল কাদের বলেন, রইসকে কারাগারে  গ্রহণ করার সময় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র তাঁর সঙ্গে ছিল। রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে দ্রুত তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

তবে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, রইস উদ্দিনকে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। পরিবার বলছে, রইসের বয়ান মসজিদের এক পক্ষ পছন্দ করত না। দীর্ঘদিন ধরেই তারা বিরোধ সৃষ্টি করে রেখেছিল। এই বিরোধ থেকেই নাটক সাজিয়ে এক কিশোরের মাধ্যমে তাকে ফাঁসানো হয়।

রইস উদ্দিন চাঁদপুরের মতলব থানার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে। গাজীপুর মহানগরের ঝাজর এলাকায় জমি কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।

ঘটনার পরদিন নিহত ইমামের স্ত্রী মাজেদা আক্তার বাদী হয়ে পূবাইল থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ জনকে আসামি করে একটি এজাহার জমা দেন।

এজাহারে তিনি লিখেছেন, তাঁর স্বামী নিয়মিত জুমার নামাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বয়ান দিতেন। তবে হায়দরাবাদ এলাকায় দুইটি পক্ষ ছিল। এক পক্ষ তাঁর বয়ান পছন্দ করত, অপর পক্ষ হিংসা করত এবং তাঁকে মসজিদ থেকে বিতাড়িত করতে চাইত। পরে নাটক সাজিয়ে তাঁকে গাছে বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। মাথার চুল কেটে গলায় জুতার মালা পরিয়ে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনাটি পরিবারকে না জানিয়ে চার ঘণ্টা পর পুলিশে খবর দেয় নির্যাতনকারীরা। অতিরিক্ত মারধরের কারণে কারাগারে নেওয়ার পর রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও মামলা রেকর্ড হয়নি, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা। তারা দ্রুত বিচার ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগরের পূবাইল থানার ওসি আমিরুল ইসলাম বলেন, মাওলানা রইস উদ্দিনের স্ত্রী বাদী হয়ে এজাহার দিয়েছেন। তবে তারা একটি সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করছেন। মামলা রেকর্ড হয়নি।

এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার গাজীপুর শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত। এতে নেতৃত্ব দেন ইসলামী বক্তা গিয়াস উদ্দিন আত্ব তাহেরী। তিনি বলেন, মতাদর্শিক ভিন্নতার কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রইস উদ্দিনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ