ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) শাইনপুকুরের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ম্যাচ হারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ওদিকে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব পারিশ্রমিক না পেয়ে ম্যাচ বর্জন ঘোষণা দিয়েছিল। ঘোষণা প্রত্যাহার করলেও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের কাছে ১৭০ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে দলটি। দিনের অন্য ম্যাচে রূপগঞ্জ টাইগার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ধানমন্ডি ক্রিকেট ক্লাব। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও বৃষ্টি আইনে ১০ রানে জিতেছে রূপগঞ্জ।

বৃহস্পতিবার বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে পারটেক্সের বিপক্ষে শুরুতে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ৩০২ রানের বড় সংগ্রহ তোলে গাজী গ্রুপ। অধিনায়ক এনামুল হক ৯০ বলে নয় চারের শটে ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন। সাব্বির  শিকদার ৬৫ বলে ৬৪ রান যোগ করেন। শামীম মিয়া ৫৩ বলে চারটি চার ও দুই ছক্কায় খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস।

জবাব দিতে নেমে ৩১.

৫ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩২ রানে থামে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব। বোলিং করলেও ব্যাটিংয়ের সময় মোহর শেখ মাঠে না থাকায় অ্যাবসেন্ট হার্ট হন তিনি। পারটেক্সের ওপেনার ও উইকেটরক্ষক আদি ৫৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। গাজী গ্রুপের হয়ে শামীম মিয়া, ওয়াসি সিদ্দিকী ও তোফায়েল আহমেদ দুটি করে উইকেট নেন।

বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে রূপগঞ্জ টাইগার্স শুরুতে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৮০ রান তোলে। দলটির হয়ে আসাদুল্লাহ আল গালিব ৬৫ রান করেন। দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ডিপিএলে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা নাসির হোসেন ৮৪ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন। আটটি চারের সঙ্গে তিনটি ছক্কা মারেন তিনি। এছাড়া আরিফুল হক ৪৮ রান যোগ করেন।

জবাবে ১৭ বল থাকতে জয় তুলে নেয় ধানমন্ডি। সেঞ্চুরি মিস করেন দলটির অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। ধানমন্ডির ওপেনার আজমির ৩০ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন। অন্য ওপেনার হাবিবুর রহমান ২৪ বলে ৩৩ রান যোগ করেন। তিনে নামা ফজলে রাব্বি ৪৭ রান করেন। অধিনায়ক সোহান ৯৫ বলে ৯৭ রানের ইনিংস খেলে আউট হন। তার ব্যাট থেকে নয়টি চার ও দুটি ছক্কা আসে। ৪০ বলে ৫৫ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন ইয়াসির আলী রাব্বি।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের ম্যাচটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। লিজেন্ডসরা শুরুতে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৭৭ রান তোলে। তিনে ব্যাট করা সৌম্য সরকার ৭৯ বলে ৮০ রান করেন। তিনি আটটি চার ও দুটি ছক্কা মারেন। চারে নামা মাহমুদুল হাসান ৫৯ রান করেন। জাকের আলী খেলেন ৪৪ রানের ইনিংস।

জবাবে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ৪৮.৪ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৬০ রান তোলে। শেষ ৮ বলে ১৮ রান দরকার ছিল তাদের। পেসার সুমন খান ২৫ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের আশাও দিচ্ছিলেন। কিন্তু রাজধানীতে ঝড় শুরু হলে ম্যাচের শেষ অংশ খেলানো সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি আইনে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। ব্রাদার্সের হয়ে ওপেনার মাহফিজুর ইসলাম ৭৬ রান করেন। আইস মোল্লা ৪৭ ও মাইসুকুর ৪৬ রান করেন। লিজেন্ডসদের পেসার শরিফুল ইসলাম ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড প এল র ন র ইন ব য ট কর র ন কর ন র পগঞ জ উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ