ভারত থেকে প্রায় ৬০০ টন বা ১৫ লাখ আইফোন সরিয়ে নিয়েছে মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান অ্যাপল। বিশেষ কার্গো বিমানে করে বিপুল পরিমাণ আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্কনীতি ঘোষণার পর অ্যাপল এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে একাধিক সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে।

গত সপ্তাহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ওই ঘোষণার পরই অ্যাপল ভারত থেকে আইফোন সরিয়ে নিচ্ছে। অবশ্য পরে গতকাল বুধবার চীন ছাড়া অন্যান্য দেশের ওপর আরোপ করা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প।

বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, আইফোন আমদানির জন্য অ্যাপল চীনের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ট্রাম্প চীন থেকে পণ্য আমদানির ওপর সর্বোচ্চ ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আইফোনের দাম ব্যাপক বাড়তে পারে।

তবে শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার পর ভারত থেকে আইফোন তৈরিতে দাম বাড়বে না বলে মনে হচ্ছে।

ট্রাম্পের আগে ঘোষিত শুল্ক শুল্ক এড়াতে অ্যাপল ভারত থেকে এই বিপুল চালান নিয়েছে বলে অ্যাপলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আইফোন নেওয়ার জন্য ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের চেন্নাই বিমানবন্দরে শুল্ক পরিশোধের সময় ৩০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৬ ঘণ্টা করার জন্য দেশটির বিমাবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তদবির করেছে অ্যাপল।

সূত্র জানিয়েছে, ভারতের বিমানবন্দরে তথাকথিত ‘গ্রিন করিডর’ ব্যবস্থাটি চীনের কিছু বিমানবন্দরে অ্যাপল যে মডেল ব্যবহার করে, তার আদলে তৈরি।

ওই সূত্রটি ও ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত মার্চ থেকে প্রায় ৬টি কার্গো বিমান ভারত থেকে আইফোন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গেছে। প্রতিটি বিমানের ধারণক্ষমতা ১০০ টন। চলতি সপ্তাহে ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হওয়ার পর একটি কার্গো বিমান ভারত ছেড়েছে।

প্যাকেজের মধ্যে আইফোন ১৪ ও এর চার্জিং কেব্‌ল রয়েছে, যার ওজন প্রায় ৩৫০ গ্রাম। সব মিলিয়ে কার্গোতে থাকা ৬০০ টন প্যাকজের ওজন হিসাব করে দেখা গেছে, সেখানে প্রায় ১৫ লাখ আইফোন ছিল।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাপল ও ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। বিষয়টি গোপনীয় হওয়ায় কোনো সূত্রই নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।

প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২২ কোটির বেশি আইফোন বিক্রি করে অ্যাপল। কাউন্টার পয়েন্টের গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে মোট আইফোনের এক–পঞ্চমাংশ ভারত থেকে আসে। বাকিগুলো আনা হয় চীন থেকে।

গতকাল বুধবার চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২ এপ্রিল চীনের ওপর ৫৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন তিনি ।

রোজেনব্ল্যাট সিকিউরিটি শো–এর প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ৫৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের দাম ১ হাজার ৫৯৯ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৩০০ ডলার হবে। এমন অবস্থায় ভারত থেকে আইফোন আমদানি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুনট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে আইফোনের দাম ছুঁতে পারে ২,৩০০ ডলার০৪ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য অ য পল আমদ ন র ওপর আইফ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলার পর ইউক্রেন–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি সই

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলার পর দেশ দুটি একটি চুক্তিতে সই করেছে। এর ফলে ওয়াশিংটন কিয়েভের মূল্যবান দুর্লভ খনিজসম্পদে প্রবেশাধিকার পাবে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে তার পুনর্গঠনে তহবিল জোগান দেবে।

গতকাল বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এ চুক্তি সই হয়। এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে জোর দরকষাকষি করে দুই দেশ। চুক্তি সই হওয়ার ব্যাপারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কিছু অনিশ্চয়তা থাকলেও অবশেষে এটি সম্পন্ন হয়।

যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ চুক্তি একটি অগ্রগতি নির্দেশ করছে। গত মার্চে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠকের পর এ সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল।

চুক্তি সইয়ের ঘোষণা দিয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল’ প্রতিষ্ঠা রাশিয়ার প্রতি একটি বার্তা যে, ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদে এক স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ ইউক্রেন গড়ার শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ চুক্তি একটি অগ্রগতি নির্দেশ করছে। গত মার্চে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠকের পর এ সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল।

স্কট বেসেন্ট আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার এ ভাবনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের; যা একটি টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধ ইউক্রেনের প্রতি উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতিই প্রতিফলিত করে।’

‘স্পষ্ট করে বলতে গেলে, রাশিয়ার যুদ্ধচেষ্টায় অর্থ বা অন্যান্য সহায়তাদানকারী কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তিকে ইউক্রেনের পুনর্গঠন থেকে উপকৃত হতে দেওয়া হবে না’, বলেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী।

ট্রাম্প প্রশাসন এ চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করেনি।

ইউক্রেনের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইউক্রেন পুনর্গঠন তহবিলে’ যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বা সামরিক সহায়তার মাধ্যমে অবদান রাখবে এবং কিয়েভ তার প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে পাওয়া রাজস্বের ৫০ শতাংশ তহবিলে দেবে।

স্পষ্ট করে বলতে গেলে, রাশিয়ার যুদ্ধচেষ্টায় অর্থ বা অন্যান্য সহায়তাদানকারী কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তিকে ইউক্রেনের পুনর্গঠন থেকে উপকৃত হতে দেওয়া হবে না।স্কট বেসেন্ট, মার্কিন অর্থমন্ত্রী

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, তহবিলের সম্পূর্ণ অর্থ প্রথম ১০ বছর শুধু ইউক্রেনে বিনিয়োগ করা হবে, এরপর ‘লাভ অংশীদারদের মধ্যে বণ্টন করা হতে পারে’। তহবিলে দুপক্ষের সমান সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে। এ চুক্তি শুধু ভবিষ্যতের মার্কিন সামরিক সহায়তায় নজর দেব, অতীতের সহায়তা এতে অন্তর্ভুক্ত নয়।

ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সিরিদেনকো বলেন, ‘আমরা শুধু বিনিয়োগই পেতে যাচ্ছি না; বরং এমন একটি কৌশলগত অংশীদারকেও পাচ্ছি, যারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনে সহায়তা করতে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার ফাঁকে এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল ভ্যাটিকান সিটিতে

সম্পর্কিত নিবন্ধ