কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কু‌ড়িগ্রা‌মের চিলমারী ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপ‌জেলা সীমান্তে চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতুতে ঘুরতে যাওয়া মা-মেয়েকে উত্যক্ত করার অভিযোগের জের শেষপর্যন্ত মাইকিং ক‌রে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গড়িয়েছে।

বৃহস্প‌তিবার (১০ এপ্রিল) বেলা ১১টা থে‌কে ক‌য়েক দফা চলা এই সংঘ‌র্ষে উভয় প‌ক্ষের অন্তত ২০-২৫ জন আহত হয়ে‌ছেন। তা‌দের একজনকে চিলমারী উপ‌জেলা স্বাস্থ‌্য কম‌প্লেক্সে ভর্তি করা হয়, সেখান থেকে তাকে রংপুর মে‌ডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতা‌লে নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

রূপগঞ্জে যৌথবাহিনী-শ্রমিক সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে ছাত্রদলের ২ পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪

অবশ্য চিলমারী ম‌ডেল থানার ওসি মো.

আবদুর রহিমের ভাষ্য- ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।

চিলমারী থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বাধা উপেক্ষা করে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। খবর পে‌য়ে সেনাবা‌হিনীর এক‌টি টিম দুপুরে ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে প‌রি‌স্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) চিলমারী রমনা ইউনিয়নের দক্ষিণ খরখরিয়া গ্রামের এক ব্যক্তির স্ত্রী ও কন্যা দ্বিতীয় তিস্তা সেতুতে ঘুরতে গেলে গাইবান্ধার সুন্ধরগঞ্জ উপ‌জেলার হ‌রিপুর ইউনিয়‌নের শহ‌রের মোড় এলাকার বিজয়, পাভেল, সুমন নামে কিশোর তাদের ছবি তোলে এবং উত্যক্ত করার চেষ্টা করে। 

মা ও মেয়ে প্রতিবাদ করলে ওই কিশোররা তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে। বিষয়টি ঘটনাস্থলে উপস্থিত চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ডাঙ্গার চর এলাকার হামেদ আলীর ছেলে সাজু ও রোস্তাম আলীর ছেলে মোতালেব মিয়ার চোখে পড়লে তারাও প্রতিবাদ করেন। এতে শহ‌রের মোড় এলাকার বিজয়, পাভেল, সুমনসহ কয়েকজন মিলে চিলমারী উপজেলার এই দুই তরুণের ওপর চড়াও হন এবং তাদের মারধর করেন। তারা এলাকায় গিয়ে মারধরের বিষয়টি জানা‌লে লোকজন ক্ষিপ্ত হ‌য়ে উঠে। পরে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। 

সাজু ও মোতালেবের পরিবারের অভিযোগ, ওই ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সকালে রমনা ইউনিয়নের দক্ষিণ খড়খড়িয়া এলাকার লাল মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৫) তার ভুট্টা ক্ষেত দেখতে গেলে শহরের মোড় এলাকার ফখরুলের ছেলে মিস্টারসহ কয়েকজন ব্যক্তি মিলে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। আলমগীর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তার পরিবারের সদস্যদের ফোনে মারধরের কথা জানায়। আলমগীরের শরীরে জখম, দাঁত ভাঙ্গা ও পায়ের নিচে টেঁটার আঘাত দেখতে পায় লোকজন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে; সেখান থেকে নেওয়া হয় রংপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে।

আলমগীরের ওপর আঘাত করার পর দুই গ্রামে মাইকিং করে তাদের লোকজনকে ডেকে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে উভয় মানুষ আহত হয়। খবর পে‌য়ে কু‌ড়িগ্রাম থে‌কে সেনাবা‌হিনীর এক‌টি টিম ঘটনাস্থ‌লে উপ‌স্থিত হ‌য়ে প‌রি‌স্থি‌তি নিয়ন্ত্রণে নেন।

ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর টিম হ্যান্ড মাইকে দুই গ্রামের লোকজনকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানায়। 

চিলমারী রমনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আশেক বলেন, “মা-মেয়ের গোপনে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মানুষের মাঝে উত্তেজনা চলছিল। আমরা কয়েকবার কথা বলে তাদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ চিলমারীর একজন কৃষক জমিতে কাজ করতে গেলে সুন্দরগঞ্জ শহ‌রের মোড় এলাকার ফখরুলের ছেলে মিস্টার ও কয়েকজন মিলে তাকে মারধর করে আহত করে। ওই ঘটনায় দুই গ্রামের মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল।”

ওসি মো. আবদুর রহিম বলেন, “ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবা‌হিনীর এক‌টি টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উভয় গ্রুপের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে চিলমারী উপজেলার লাল মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেনকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা/সৈকত/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ আহত

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে গভীর রাতে বুড়া-বুড়ির বাড়িতে হামলা  

বন্দরের জাঙ্গাল এলাকায় ইট ভাটার মাটি কাটতে না দেয়ায় নিরিহ নিরপরাধ বৃদ্ধ দম্পত্তির (বুড়া-বুড়ি) নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ও বাড়ি ঘরে ব্যাপক হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

পুলিশের উপস্থিতিতে একটি ইট ভাটা মালিকের সন্ত্রাসী বাহিনী এই হামলা ও ভাংচুরের নেতৃত্ব দিয়েছে বলে ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এরপর উল্টো তাদের ধরে নিয়ে তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন। পরে জামিনে বের হয়ে ভুক্তভোগী এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে পুলিশ মামলা না নেয়ায় আতংকে রয়েছেন তারা। 

জানা গেছে, বন্দরের জাঙ্গালের বাকদোবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত ৩টি ব্রিক ফিল্ডের মালিক মোঃ আলমগীর হোসেন। সে সাধারন মানুষের জমি জোর পূর্বক দখল করে মাটি কেটে ইট ভাটা পরিচালনা করে আসছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে বেশ কয়েকটি দেওয়ানী মামলা চলমান রয়েছে।

ভূক্ত ভোগী বন্দরের জাঙ্গাল এলাকায় বৃদ্ধা মহিলা মিনারা বেগম মিনু জানান, আমার জমি জমার বিভিন্ন ভূয়া কাগজপত্র সৃজন করে ইট ভাটার মালিক আলমগীর জোর পূর্বক দখল করে মাটি কাটার চেষ্টা চালায়।

আমি ও আমার পরিবার এতে জোরালো আপত্তি করি এবং আমার স্বামী তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ আদালতে একাধিক দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। এতে ইট ভাটার মালিক আমাদের উপর ক্ষীপ্ত হয়ে আমাদের প্রানে মেরে ফেলার জন্য আলমগীর নানা ষড়যন্ত্রের ফাদ পাততে থাকে।

আর এ কাজে থানা পুলিশকে সে ম্যানেজ করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের জীবন শেষ করে দেয়ার অপচেষ্টা চালায়। গত ২০ এপ্রিল রবিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে গভীর রাত ৩টা পর্যন্ত বন্দর থানার দারোগা জলিল, শরীফ ও বন্দর কামতাল ফাড়ির দারোগা মনির সহ প্রায় ২৫ জন পুলিশ আমার বাড়ীর চারদিকে ঘেরাও করে রাখে। 

এসময় ব্রিক ফিল্ডের মালিক আলমগীরের প্রায় ২০/২৫ জনের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী দা, সাবল, বটি, খুন্তি, কুড়াল সহ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে বাড়ীর গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ব্যাপক হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। পরবর্তীতে বন্দর থানা পুলিশ বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে আমাকে ও আমার বৃদ্ধ স্বামীকে জোর পূর্বক থানার পুলিশ ভ্যানে তুলতে চায়। 

বন্দর থানা পুলিশ কোন মামলা ছাড়াই বিনা ওয়ারেন্টে টানা হেচড়া করে আমাদেরকে থানায় নিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আমি মামলা ছাড়া বিনা ওয়ারেন্ট আমাদের কেন থানায় নিয়া যাবেন জানেত চাইলে আমাকে ও আমার স্বামী আঃ বাতেন (৬০) কে বেধম প্রহার করেন। আমি একজন বৃদ্ধা মহিলা হওয়া স্বত্তেও পুলিশ আমাকে উপর্যপুরি ৪টি বেত্রাঘাত করে। 

তখন আমি পুলিশের হাতে পায়ে ধরে কোন মতে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেলেও গভীর রাত ৩টায় আমার স্বামী আঃ বাতেন (৬০)কে জোরপূর্বক বন্দর থানায় নিয়া যায়।

থানায় নিয়ে ব্রিক ফিল্ডের মালিক আলমগীরের ম্যানেজার মজিবরকে বাদী বানাইয়া আমাদের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এর ১০/১৩/১৬ ধারায় একটি মিথ্যা মামলা নং-২৪৪২৫ দায়ের করেন। 

বন্দর থানার পুলিশ  আমার স্বামীকে ২০ এপ্রিল ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন সহ নারায়ণগঞ্জ আদালতে প্রেরন করলে বিজ্ঞ আদালত শুনানী অন্তে রিমান্ডের আবেদন না-মঞ্জুর পূর্বক জামিন প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে গত ২২ এপ্রিল আমি বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করলে মহামান্য আদালত আমাকেও জামিন প্রদান করেন। 

বর্তমানে আমরা আদালত থেকে জামিন নেয়র পর এ ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা করতে গেলে ব্রিক ফিল্ডের মালিক আলমগীরের দাপটের কারনে পুলিশ কোন মামলা নিচ্ছে না। 

এখন আমি আদালতে প্রতিকার চেয়ে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। আমি এই ঘটনার সুুষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে কথা বলতে বন্দর থানার ওসির মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকেয়া রিকশা ভাড়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত ৫০
  • চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের রানওয়েতে কুকুর, মেয়রকে পরিচালকের চিঠি
  • এমপিওভুক্তির ৯১ ফাইল আটকে রেখেছেন ডিডি, দুদকের অভিযান
  • রাজশাহীতে মাউশির দপ্তরে দুদকের অভিযান
  • শেখ হাসিনা ফিরে এলে সাধারণ মানুষই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে: মির্জা ফখরুল
  • শেখ হাসিনা ফিরে আসলে সাধারণ মানুষই ব্যবস্থা নেবে: মির্জা ফখরুল
  • রিকশা ভাড়ার ৫০ টাকা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
  • বন্দরে গভীর রাতে বুড়া-বুড়ির বাড়িতে হামলা