ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করছেন চীনের যোদ্ধারা, দাবি জেলেনস্কির
Published: 10th, April 2025 GMT
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, চীনের যোদ্ধারা রাশিয়ার হয়ে লড়াই করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে চীনের নাগরিকদের রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
বুধবার ভলোদিমির জেলেনস্কি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দুজন চীনের নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা রাশিয়ার হয়ে লড়াই করছিলেন। আরও বেশ কিছু চীনের নাগরিক রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে নেমেছেন, তাঁদের কাছে এমন প্রমাণ আছে বলে দাবি করেন তিনি।
জেলেনস্কির অভিযোগ, বেইজিংয়ের অনুমতি নিয়েই ওই ব্যক্তিরা রাশিয়ার হয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন। সব মিলিয়ে ১৫৫ জন চীনের সেনা রাশিয়ার দলে আছেন বলে তাঁরা খবর পেয়েছেন। তাঁদের নাম ও পাসপোর্টের তথ্যও ইউক্রেনের হাতে আছে বলে জানানো হয়েছে।
চীনের বক্তব্য
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছিল, তারা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছে। চীনের নাগরিকদের বারবার জানানো হয়েছে, তাঁরা যেন কোনোভাবেই অন্য কোনো দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ না দেন।
তবে জেলেনস্কির অভিযোগের পর নতুন করে কোনো মন্তব্য করেনি চীনের সরকার।
ইউক্রেনের শরণার্থীদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেবে না জার্মানি
গত ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে নির্বাচন হয়েছিল। তবে এখনো নতুন সরকার গঠিত হয়নি। সরকার গঠন নিয়ে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসপিডি) মধ্যে আলোচনা চলছে। সেই আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের আর নাগরিক সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হবে না। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যে ভাতা দেওয়া হয়, ইউক্রেনের শরণার্থীদেরও সমপরিমাণ ভাতা দেওয়া হবে।
জার্মানির দলগুলো আপাতত একটি জোট সরকারের চুক্তিপত্র তৈরি করছে। চুক্তিপত্র এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সেই চুক্তি আলোচনাতেই নতুন এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
তবে চুক্তিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের নাগরিকদের অভিবাসনের জন্য আবেদন করতে হবে না। গোটা ইউরোপেই তাঁদের জন্য বিশেষ সুযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে অভিবাসনের আবেদন না করেই তাঁরা ইউরোপের যেকোনো দেশে থাকার সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুনরাশিয়ায় গিয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরির স্বপ্নপূরণ, যুদ্ধের ময়দানে গেল প্রাণ০৩ এপ্রিল ২০২৫২০২২ সালের ১ জুন থেকে ইউক্রেনের যে নাগরিকেরা জার্মানিতে এসেছেন, তাঁরা নাগরিক সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছিলেন, এবার সেই নাগরিক সুবিধা বন্ধ করা হবে বলে চুক্তিপত্রে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জার্মানিতে বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ১২ লাখ শরণার্থী বসবাস করছেন। যুদ্ধ যত দীর্ঘ হচ্ছে, তত বেশি শরণার্থী ইউক্রেনের বিভিন্ন দেশে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
আরও পড়ুনইউক্রেন চুক্তি লঙ্ঘন করে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে: অভিযোগ রাশিয়ার০৫ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র শ য় র হয় ইউক র ন র শরণ র থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।