ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সব মুসলিম দেশের সরকারের ‘সশস্ত্র জিহাদ’ ঘোষণা বাধ্যতামূলক বলে মনে করেন পাকিস্তানের বিশিষ্ট ইসলামি পণ্ডিত মুফতি মুহাম্মদ ত্বকী ওসমানি। গতকাল বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে ন্যাশনাল প্যালেস্টাইন কনফারেন্সে দেশটির কেন্দ্রীয় শরিয়াহ আদালতের সাবেক এই বিচারক এই মন্তব্য করেন।

এর আগে বিশ্বের সব মুসলিম এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়ে ফতোয়া জারি করেছিলেন কাতারভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারসের (আইইউএমএস) মহাসচিব আলী আল-কারদাঘি। কিন্তু এই ধরনের ফতোয়া জারিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন মিসরের গ্র্যান্ড মুফতি নাজির আয়াদ। কারণ, এতে করে সমাজের নিরাপত্তা ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে।

সম্মেলনে ত্বকী ওসমানি বলেন, জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ রক্ষার জন্য যাঁরা যুদ্ধ করছেন, মুসলিম দেশগুলো তাঁদের পর্যাপ্ত সমর্থন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মুসলিম দেশগুলো যদি জিহাদ না করে, তাহলে তাঁদের সেনাদের অস্ত্রগুলো কোন কাজে ব্যবহার করা হবে?

গত বৃহস্পতিবারের সম্মেলনে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের ধর্মীয় পণ্ডিতেরাও যোগ দিয়েছিলেন। সম্মেলন শেষে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ত্বকী ওসমানির কথার প্রতিধ্বনি করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সব মুসলিম দেশের জিহাদ ঘোষণা বাধ্যতামূলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বক্তৃতায় মুসলিমদের ওমরাহ না করে সেই অর্থ ফিলিস্তিনিদের জন্য দান করার আহ্বান জানিয়েছেন ত্বকী ওসমানি।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ধর্মীয় পণ্ডিতেরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না করায় পাকিস্তান সরকারের সমালোচনা করেছেন।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারসের মহাসচিব আলী আল-কারদাঘি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ব র দ ধ ওসম ন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথমবার ঢাকায় জাতিসংঘের গুমবিষয়ক কমিটি

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের দুই সদস্য বাংলাদেশে এসেছেন। রোববার চার দিনের সফরে গ্রুপের ভাইস চেয়ার গ্রাজিনা বারানোস্কা ও আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ ঢাকা পৌঁছান।

প্রায় এক যুগ ধরে গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য বাংলাদেশ সফরের অনুরোধ জানিয়ে আসছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্স অর ইনভলেন্টারি ডিসাপিয়ারেন্স– ডব্লিউজিইআইডি। ২০১৩ সালের ১২ মার্চ সফরের জন্য প্রথম চিঠি দিলেও সাড়া দেয়নি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর পর একাধিকবার অনুরোধ করলেও রাখা হয়নি। ২০২০ সালের ২৪ এপ্রিল শেষবার সফরের অনুমতি চেয়েছিল ডব্লিউজিইআইডি। কিন্তু দেয়নি তৎকালীন সরকার।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় শেখ হাসিনার সরকারের। এর পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানালে সাড়া দেয়। এরই অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এলো গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ। ১৮ জুন প্রতিনিধি দলের ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। জানা যায়, সফরে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র সচিব, গুম কমিশনের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে বৈঠক করবে প্রতিনিধি দল। এ ছাড়া নীতিবিষয়ক আলোচনায় অংশ নেবেন দুই সদস্য।

ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয়ের এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, প্রতিনিধি দল এবার গুমের ঘটনা তদন্ত করবে না। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তার ভিত্তিতে সুপারিশ করবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নিয়ে জাতিসংঘের গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে সই করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গুমের শিকার ব্যক্তিদের জন্য আন্তর্জাতিক ‘গুম প্রতিরোধ দিবস’-এর এক দিন আগে ৭৬তম দেশ হিসেবে চুক্তিতে সই করে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গুমবিরোধী সনদ গৃহীত হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জাতিসংঘের গুমবিরোধী সনদে যুক্ত হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের ওপর চাপ ছিল। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে সনদে যুক্ত হওয়া নিয়ে বরাবর অনাগ্রহ দেখিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ এ সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে। অর্থাৎ তারা অভ্যন্তরীণ আইনের অংশ হিসেবে নিয়েছে। আর ভারত শুধু সই করেছে।

ডব্লিউজিইআইডির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও ৭০টি গুমের ঘটনা অনিষ্পত্তি রয়েছে। জাতিসংঘ মোট ৮৮ ব্যক্তির গুমের বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা জানতে চেয়েছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজন আটক ও ১০ ব্যক্তি মুক্ত অবস্থায় আছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ