‘হামরা গরিব মাইনসের শখ আল্লাদও কাড়ি নেয় ওমরা’
Published: 11th, April 2025 GMT
‘মাছ-গোশত কিনবার তো বুদ্দি নাই। পয়লা বৈশাকে হামার সজনা (শজিনা), করলা আর পাটশাকই ভরসা। কিন্তুক বৈশাকের আগোতে শাকসবজির দাম বাড়াইচে ব্যবসায়ীরা। হামরা গরিব মাইনসের শখ-আল্লাদও কাড়ি নেয় ওমরা।’ রংপুর সিটি বাজারে গতকাল শুক্রবার বাজার করতে এসেছিলেন নিউ জুম্মাপাড়া এলাকার রিকশাচালক সাইদুল ইসলাম। এ সময় নিত্যপণ্য ও সবজির চড়া দাম দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলেন তিনি।
রংপুর অঞ্চলের মানুষ পুরোনো দিনের রীতি অনুসরণ করে চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ বরণ করেন। তারা খাবারের তালিকায় তিতা জাতীয় সবজি করলা, পাট শাক কিংবা শজিনা রাখেন।
কিন্তু পহেলা বৈশাখ ঘিরে বাজারে এসব শাকসবজির দাম বেড়ে গেছে। দু’দিন আগে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও শুক্রবার করলার দাম ওঠে ৬০ টাকা। ৮০ টাকার শজিনা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। ১০ টাকার প্রতি আঁটি পাট শাক নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে রমজান মাসে কিছুটা স্বস্তি মিললেও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা কিংবা
তারও বেশি। বাজারে ৬০ টাকার নিচে তেমন কোনো সবজি মিলছে না। এতে ক্ষুব্ধ অনেকে বিক্রেতাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন। হঠাৎ শাকসবজির দাম বাড়াতে নিম্ন আয়ের মানুষ বিপদে পড়েছেন। তাদের বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আনন্দে ভাটা পড়েছে।
সিও বাজারে ব্যাগ হাতে ঘুরছিলেন উত্তম এলাকার আলী হোসেন নামে এক ক্রেতা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দু’দিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে সবজির দাম। মৌসুমের শুরুতে চার সদস্যের পরিবারের জন্য ২০ টাকায় কেনা যেত দুই আঁটি পাট শাক। পহেলা বৈশাখ ঘিরে এখন তার দাম ৪০ টাকা। রমজানে বাজার তদারকির কারণে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বিক্রেতা। এখন সবকিছুই ফের লাগামহীন হয়ে গেছে।
সিটি, সিও, কামাল কাছনাসহ নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে ৬০ টাকার পটোল ৮০, ৬০ টাকার কাঁকরোল ৭০-৮০, ৬০ টাকার ঝিঙে ৮০, ৫০ টাকার চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, ৫০ টাকার কচুর লতি ৭০, ৪০ টাকার বরবটি ৬০ ও ৪০ টাকার বেগুন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দু’দিন আগে রসুন ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন ১০০ থেকে ১২০ এবং ১২০ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। ৪০ টাকার কাঁচামরিচ ৬০, ৩০ টাকার পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ এবং ৪০ টাকার পেঁপে ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
সিটি বাজারে জলকর থেকে আসা স্নিগ্ধা নামে এক গৃহবধূ বলছিলেন, ‘একেক সময় একেক অজুহাতে নিত্যপণ্য ও সবজির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতা। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছু। রমজানে কিছুটা স্বস্তি মিললেও ফের আগের নিয়মে ফিরছে সবজির বাজার।’
বাজারে সবজি কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আবুল কালাম। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ ঘিরে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বাজারে ৬০ টাকার নিচে ভালো কোনো সবজি না মেলায় নিম্ন আয়ের মানুষের বাংলা নববর্ষ উৎসবের আয়োজনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দু’দিন ধরে পহেলা বৈশাখের প্রভাব পড়েছে বলে দাবি করেন সিটি বাজারের সবজি বিক্রেতা লোকমান গণি। তিনি বলেন, চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ কম। যে কারণে দাম বেশি। শুক্রবার ছুটির দিনে পাইকাররা বাড়তি দাম রাখেন। আরেক বিক্রেতা আব্দুল হাকিমের ভাষ্য, রংপুর অঞ্চলে দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মৌসুমি শাকসবজির ফলন কমেছে। এতে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির সরবরাহ কম। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রংপুরের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, সরবরাহ থাকলেও দু’দিনের ব্যবধানে সবজির দাম বেড়েছে। নববর্ষের অজুহাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে তদারক করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ রদর সবজ র দ ম ব ড় শ কসবজ র ৬০ ট ক র ৪০ ট ক র সরবর হ নববর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গলবার ৭ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব জায়গায়
পাইপলাইনে সংস্কার কাজের জন্য আজ দুপুর থেকে ঢাকার মিরপুরে কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
তিতাস জানায়, মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মোট ৭ ঘণ্টা মিরপুর-১৪ এ অবস্থিত প্রিন্স বাজারসংলগ্ন সড়কে নবনির্মিত গ্যাস পাইপলাইনের টাই-ইন কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য শতাব্দি সিএনজি, এমবিএম গার্মেন্টসের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এছাড়া, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী ডিওএইচএস, শাহীনবাগ, আরজতপাড়া, নাখালপাড়া ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্যাসের স্বল্পচাপ বিরাজ করবে।
গ্রাহকদের সাময়িক এ অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা/হাসান/ইভা