‘মাছ-গোশত কিনবার তো বুদ্দি নাই। পয়লা বৈশাকে হামার সজনা (শজিনা), করলা আর পাটশাকই ভরসা। কিন্তুক বৈশাকের আগোতে শাকসবজির দাম বাড়াইচে ব্যবসায়ীরা। হামরা গরিব মাইনসের শখ-আল্লাদও কাড়ি নেয় ওমরা।’ রংপুর সিটি বাজারে গতকাল শুক্রবার বাজার করতে এসেছিলেন নিউ জুম্মাপাড়া এলাকার রিকশাচালক সাইদুল ইসলাম। এ সময় নিত্যপণ্য ও সবজির চড়া দাম দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলেন তিনি।
রংপুর অঞ্চলের মানুষ পুরোনো দিনের রীতি অনুসরণ করে চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ বরণ করেন। তারা খাবারের তালিকায় তিতা জাতীয় সবজি করলা, পাট শাক কিংবা শজিনা রাখেন। 
কিন্তু পহেলা বৈশাখ ঘিরে বাজারে এসব শাকসবজির দাম বেড়ে গেছে। দু’দিন আগে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও শুক্রবার করলার দাম ওঠে ৬০ টাকা। ৮০ টাকার শজিনা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। ১০ টাকার প্রতি আঁটি পাট শাক নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে রমজান মাসে কিছুটা স্বস্তি মিললেও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা কিংবা 
তারও বেশি। বাজারে ৬০ টাকার নিচে তেমন কোনো সবজি মিলছে না। এতে ক্ষুব্ধ অনেকে বিক্রেতাদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন। হঠাৎ শাকসবজির দাম বাড়াতে নিম্ন আয়ের মানুষ বিপদে পড়েছেন। তাদের বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আনন্দে ভাটা পড়েছে।
সিও বাজারে ব্যাগ হাতে ঘুরছিলেন উত্তম এলাকার আলী হোসেন নামে এক ক্রেতা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দু’দিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে সবজির দাম। মৌসুমের শুরুতে চার সদস্যের পরিবারের জন্য ২০ টাকায় কেনা যেত দুই আঁটি পাট শাক। পহেলা বৈশাখ ঘিরে এখন তার দাম ৪০ টাকা। রমজানে বাজার তদারকির কারণে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বিক্রেতা। এখন সবকিছুই ফের লাগামহীন হয়ে গেছে।
সিটি, সিও, কামাল কাছনাসহ নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে ৬০ টাকার পটোল ৮০, ৬০ টাকার কাঁকরোল ৭০-৮০, ৬০ টাকার ঝিঙে ৮০, ৫০ টাকার চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, ৫০ টাকার কচুর লতি ৭০, ৪০ টাকার বরবটি ৬০ ও ৪০ টাকার বেগুন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দু’দিন আগে রসুন ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন ১০০ থেকে ১২০ এবং ১২০ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। ৪০ টাকার কাঁচামরিচ ৬০, ৩০ টাকার পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ এবং ৪০ টাকার পেঁপে ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
সিটি বাজারে জলকর থেকে আসা স্নিগ্ধা নামে এক গৃহবধূ বলছিলেন, ‘একেক সময় একেক অজুহাতে নিত্যপণ্য ও সবজির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতা। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছু। রমজানে কিছুটা স্বস্তি মিললেও ফের আগের নিয়মে ফিরছে সবজির বাজার।’
বাজারে সবজি কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আবুল কালাম। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ ঘিরে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বাজারে ৬০ টাকার নিচে ভালো কোনো সবজি না মেলায় নিম্ন আয়ের মানুষের বাংলা নববর্ষ উৎসবের আয়োজনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দু’দিন ধরে পহেলা বৈশাখের প্রভাব পড়েছে বলে দাবি করেন সিটি বাজারের সবজি বিক্রেতা লোকমান গণি। তিনি বলেন, চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ কম। যে কারণে দাম বেশি। শুক্রবার ছুটির দিনে পাইকাররা বাড়তি দাম রাখেন। আরেক বিক্রেতা আব্দুল হাকিমের ভাষ্য, রংপুর অঞ্চলে দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মৌসুমি শাকসবজির ফলন কমেছে। এতে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির সরবরাহ কম। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রংপুরের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, সরবরাহ থাকলেও দু’দিনের ব্যবধানে সবজির দাম বেড়েছে। নববর্ষের অজুহাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে তদারক করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ রদর সবজ র দ ম ব ড় শ কসবজ র ৬০ ট ক র ৪০ ট ক র সরবর হ নববর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম

ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।

আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।

সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।

পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুপেয় পানির সংকট, কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প
  • নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
  • সুপারম্যানের কাছে আছে পৃথিবীর শক্তি সংকটের সমাধান
  • ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী কী ঘটতে পারে?
  • ইরান–ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে
  • ইরানে হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
  • ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি কেন বাড়ছে
  • সুনামগঞ্জে তাজা গ্রেনেড উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী
  • কমেছে সবজির দাম
  • বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম