চতুর্থ প্রজন্মের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এসবিএসি) পথচলার এক যুগ পেরিয়ে ১৩তম বছরে পা দিয়েছে। এসবিএসি ও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয়ে সম্প্রতি সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. মোখলেসুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছে ওবায়দুল্লাহ রনি

সমকাল: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। ব্যাংকটি কেমন দেখছেন?

মোখলেসুর রহমান: চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ২০১৩ সালে এই ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। সেই থেকে এ পর্যন্ত কোনো সূচক নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি। মূলধন পর্যাপ্ততা হার সঠিক মানদণ্ডে রয়েছে। ব্যাংক খাতের তুলনায় খেলাপি ঋণ অনেক কম রয়েছে। ঋণ-আমানত অনুপাত নির্ধারিত মাত্রায় রাখা সম্ভব হয়েছে। সিআরআর, এসএলআরে কখনও ঘাটতি হয়নি। আমাদের বিশ্বাস এটিকে দেশের সবচেয়ে ভালো ব্যাংক হিসেবে দাঁড় করানো সম্ভব। তবে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য টিমওয়ার্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য দক্ষ মানবসম্পদ অপরিহার্য। এই ব্যাংকের মানবসম্পদ ঠিক আছে। এরপরও কোনো ঘাটতি আছে কিনা, তা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য কর্মীদের একটি অংশের সক্ষমতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে বিআইবিএমের সঙ্গে একটি চুক্তি করা হয়েছে। ব্যাংকের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কার্যকরভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যয় সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে। একটি ব্যাংকে পরিচালকরা আর কত টাকা দেন। ব্যাংক চলে জনগণের টাকায়। জনগণের টাকার সুরক্ষা দেওয়ার প্রধান দায়িত্ব ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। পর্ষদ সেটা তদারক করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি তো আছেই।

সমকাল: এক যুগে এসবিএসি ব্যাংকের অগ্রগতি নিয়ে আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট?

মোখলেসুর রহমান: ভালোর শেষ নেই। আমরা সর্বোচ্চ ভালো করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। বর্তমানে ৯০টি শাখা ও ৩২টি উপশাখা এবং ৩৭টি এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের ২০২টি ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং রয়েছে। আমানত দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ঋণের রয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সালে পরিচালন মুনাফা ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৩০৫ কোটি টাকা হয়েছে। মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১২ শতাংশের ওপরে। সমসাময়িক ব্যাংকগুলোর মধ্যে এই ব্যাংকের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আহরণ হচ্ছে। গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী সহজ ও দ্রুত আধুনিক লেনদেন সেবা দিতে মোবাইল ওয়ালেট বাংলাপে, অনলাইন ব্যাংকিং, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড সেবা দেওয়া হচ্ছে। বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, গুণগত ঋণ বিতরণের পাশাপাশি ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সমকাল: গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাতে বড় বড় জালিয়াতি হয়েছে। পুরো ব্যাংক খাতে যার প্রভাব রয়েছে। এ ধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে আগামী দিনে কী করা উচিত বলে মনে করেন?

মোখলেসুর রহমান: একটি ব্যাংকের জন্য সুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুশাসন পরিপূর্ণ মাত্রায় থাকতে হবে। ব্যাংক পরিচালনা করবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। ব্যবস্থাপনার ওপর পরিচালনা পর্ষদের কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না। ব্যবস্থাপনার সঙ্গে চেয়ারম্যান দূরত্ব বজায় রেখে চললে ব্যাংক ভালো চলবে। পরিচালনা পর্ষদ সামগ্রিকভাবে ঠিকমতো চলছে কিনা, সেটা দেখা উচিত। সুনাম বা খ্যাতি একটি ব্যাংকের জন্য অনেক বড় বিষয়। একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে, কতটা স্বাধীনভাবে ব্যাংক চালান, গ্রাহকদের মধ্যে এসব একটি স্বস্তির জায়গা তৈরি করে। পরিচালনা পর্ষদ দেখবে সুশাসন ঠিক আছে কিনা, নীতি সহায়তা দেবে। যারা অনিয়ম-জালিয়াতি করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে আশা করি।

সমকাল: ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে আপনারা কোন খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন?

মোখলেসুর রহমান: কৃষি, এসএমইতে ঋণের একটি অংশ বিতরণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকনির্দেশনা রয়েছে। সে আলোকে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও বৃহৎ পরিসরে কী করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ চলছে। সফল ব্যাংক হিসেবে যেগুলোকে বলা হয়, সেগুলোর সফলতার মূলে হলো নিজেদের তৈরি উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তা তৈরি করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে হয়তো কিছু ব্যর্থতা দেখা দেয়। কিছু সফলতা আসে। বর্তমান সময়ে ব্যাংক খাতে অনেক ধরনের মডেল তৈরি হয়েছে। ব্যয় সাশ্রয়ী, পেপারলেস ব্যাংকিং করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি সময় ব্যাংক ছিল শুধু এলিট শ্রেণির জন্য। এখন উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মতো অনেক ধরনের কম খরচের মডেল ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। সাধারণ একটি শাখার জন্য অনেক খরচ করতে হয়। আবার একজন লুঙ্গি পরা গ্রামের মানুষ উচ্চ সাজসজ্জার শাখায় ঢুকতে চায় না। এখনও ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার অনেক জায়গা রয়েছে।

সমকাল: ব্যাংক খাতে একটি বড় সমস্যা  তারল্য সংকট। কয়েকটি ব্যাংক আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে পারছে না। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?

মোখলেসুর রহমান: দেশের ব্যবসা-বিনিয়োগ প্রধানত ব্যাংক খাতনির্ভর। আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য ব্যাংক খাত শক্তিশালী হওয়া অপরিহার্য। আমাদের এখানে ব্যাংক ব্যবসার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিকল্পনা করি। এর মানে ভারসাম্যহীনতা। সাউথ বাংলা ব্যাংক এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যায় পড়েনি। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এসব ম্যানেজ করে চলেছে। সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ভালো গ্রাহক নির্বাচনের পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যের কমিশন বেজড আয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সর্বোত্তম গ্রাহকসেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে নিজেদের একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঋণ ব তরণ এসব এস র জন য সমক ল ধরন র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

নিজেদের সফলতার গল্প শোনালেন তরুণ ফ্রিল্যান্সাররা

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা তরুণদের অনেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। ফ্রিল্যান্স কাজের সঙ্গে যুক্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরতে গতকাল রোববার ‘ফ্রিল্যান্সিং ফ্যাক্টরি’ নামের একটি বিশেষ সেশনের আয়োজন করেছিল গ্রামীণফোন একাডেমি। রাজধানীর বসুন্ধরায় গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় ‘জিপি হাউস’-এ অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে বিভিন্ন জেলার শতাধিক তরুণ ফ্রিল্যান্সার নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, ‘তরুণেরা ফ্রিল্যান্স কাজের মাধ্যমে নিজেদের ক্যারিয়ার তৈরি করছেন। উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন ফ্রিল্যান্সাররা। গ্রামীণফোন একাডেমির মাধ্যমে আমরা এই তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছি এবং তাঁদের বৈশ্বিক সুযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।

আরও পড়ুনফ্রিল্যান্সারদের জন্য নতুন সুবিধা চালু করল ফাইভার২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অনুষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সফলভাবে যোগাযোগের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে তরুণ ফ্রিল্যান্সাররা নিজেদের ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি নিজেদের দক্ষতা ও আয় বাড়ানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার বলেন, ‘আমি পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেছি। এরপর ফ্রিল্যান্সিং করার অর্থ দিয়ে ল্যাপটপ কিনেছি।’

আরও পড়ুনশাশুড়ির কিনে দেওয়া ল্যাপটপে ফ্রিল্যান্সিং, পপির মাসিক আয় ৩ লাখ টাকা২৯ নভেম্বর ২০২৪

গ্রামীণফোন একাডেমি জানিয়েছে, এ ধরনের অনুষ্ঠানের নিয়মিত আয়োজন করা হবে, যাতে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তের তরুণেরা অনলাইন কাজের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পারেন। গ্রামীণফোন একাডেমি থেকে ফ্রিল্যান্সিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে হাতে–কলমে প্রশিক্ষণের সুযোগও পাওয়া যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিজেদের সফলতার গল্প শোনালেন তরুণ ফ্রিল্যান্সাররা