Prothomalo:
2025-06-15@11:28:10 GMT

আত্রাইয়ে চর যেন আশীর্বাদ

Published: 12th, April 2025 GMT

চৈত্রের তপ্ত দুপুর। চিকচিক করছে আত্রাই নদের চর। অপেক্ষাকৃত চরের উঁচু অংশে মাথা দুলিয়ে নাচছে গমের সোনালি রঙের শিষগুলো। গমখেতের পাশেই লাগানো হয়েছে মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টিকুমড়া, ইসকোয়াশ। মাচাংয়ে ঝুলছে লাউ। মরিচখেতে নিড়ানি দিচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব মোখলেছার-এলিজা দম্পতি। আত্রাইয়ের চরে কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তাঁরা। আত্রাই যেন আশীর্বাদ হয়ে ধরা দিয়েছে তাঁদের কাছে। 

খরস্রোতা আত্রাই নদে প্রায় ১০০ বিঘা আয়তনের এই চরের দেখা মিলবে দিনাজপুর সদর উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের বনতাড়া এলাকায়। স্থানীয়ভাবে চরের নাম চক গোপাল। নদের পূর্ব পাশে ভারতের সমজিয়া হাট এলাকা। পশ্চিমে বাংলাদেশের বনতাড়া গ্রাম। চরের নামেই পাড়ার নামকরণ করা হয়েছে চক গোপাল। মোখলেছার-এলিজা দম্পতির মতো চার যুগের বেশি সময় ধরে গ্রামের অর্ধশত কৃষক চরের মাটিতে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। 

মোখলেছার জানান, বাপ-দাদারা চরে আবাদ করেছেন। বালুতে তেমন আবাদ হতো না। চরটাও ছোট ছিল। ২০১৭ সালে বন্যার পর থেকে নদীতে তেমন পানি থাকে না। নদীতে বাঁধ দেওয়ার সময় কাজে অংশ নিয়ে গাড়িচাপা পড়ে তাঁর কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তারপর থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চরটা আমাদের আয়ের প্রধান উৎস। এবার আলু লাগিয়েছিলাম দেড় বিঘা। ৬০ হাজার টাকা খরচ করে। ১ লাখ ২২ হাজার টাকার আলু বিক্রি করেছি। আলু তুলে গম লাগিয়েছি ২ বিঘা। সর্বনিম্ন ৪০ মণ গম পাব। পাশাপাশি মরিচ-পেঁয়াজ তো আছেই।’

গত সোমবার দুপুরে চক গোপাল চর ঘুরে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে গমখেত। সোনালি রঙের গমের শিষগুলো মাথা দুলিয়ে নাচছে। গমখেতের কিছু অংশ এখনো সবুজ। কয়েকজন কৃষক শেষ সময়ে সেচ দেওয়ার কাজে ব্যস্ত। মরিচখেতে নিড়ানি দিচ্ছেন কয়েকজন নারী। তাঁদেরই একজন রাবেয়া খাতুন (৪০)। চরে আঠারো শতক (৪৫ শতক) জমিতে আবাদ করেন তিনি।

রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘এই চরে কৃষিকাজের সাথে যারা যুক্ত, তাঁদের অধিকাংশই নারী। বাড়ির কাজকর্ম শেষ করে বাকি সময়টা চরেই কাটে আমাদের। এমন অনেকেই আছি তেল-লবণ ছাড়া কিছুই কিনি না। শাকসবজি থেকে শুরু করে গম, ভুট্টা সবকিছুই এখানে আবাদ করি।’

কৃষকেরা জানান, চরের প্রধান ফসল গম ও আলু। কাউকে জমির ভাড়া দিতে হয় না। কারও দখলে ১০ কাঠা, কারও দখলে দুই বিঘা। এভাবেই চাষাবাদ করে খাচ্ছেন। এবার চরে গম আবাদ হয়েছে প্রায় ২০ বিঘা। কৃষক বাবলু হোসেন (৪৫) জানান, বিঘাপ্রতি ১২-১৪ মণ গম পেতেন। গত দুই বছর থেকে স্থানীয় বেসরকারি একটি সংস্থার মাধ্যমে গম ও ভুট্টার উন্নত বীজ পেয়েছেন। গতবার বিঘাপ্রতি ১৯ মণের বেশি গম পেয়েছেন। এবারও ফলন ভালো হয়েছে। সপ্তাহখানেক পরেই কাটা শুরু করবেন।

কয়েক বছর ধরে এখানকার কৃষকদের আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির আওতায় নিয়ে এসেছে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা এমবিএসকে। প্রতিষ্ঠান কৃষকদের বিনা মূল্যে সার, বিভিন্ন ফসলের বীজ ও সেচকাজে সহযোগিতা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সেখানে আমাদের কিছু উপকারভোগী সদস্য আছেন। চরে আবাদ করার বিষয়টি আমাদের নজরে এলে আমরা কৃষি উন্নয়নে এলাকার কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন সময়ে তাঁদের নিয়ে কৃষক সমাবেশও করা হয়।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.

আসাদুজ্জামান বলেন, আত্রাই নদের তীর ঘেঁষে প্রায় ১০০ বিঘা আয়তনের চরের জমিতে স্থানীয়রা কৃষিকাজ করছেন। এবার গম আবাদ হয়েছে প্রায় ২০ বিঘায়। কৃষি বিভাগ প্রণোদনাসহ পরামর্শ দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, দিনাজপুরের ওপর দিয়ে ছোট–বড় ১৯টি নদ-নদী প্রবাহিত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীর জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন কৃষিপণ্য আবাদ হচ্ছে। আবাদ ভালো হওয়ার কারণ চরে কিছু পলি জমা পড়ে জায়গাটি উর্বর হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউনূস-তারেক সফল বৈঠকে স্বপ্নভঙ্গ হলো যাদের

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠক দেশের রাজনীতির মোড়  অনেকটাই  ঘুরিয়ে দিয়েছে। নানা অনিশ্চয়তা, শঙ্কা, গুজব রাজনীতিকে ঘিরে ধরেছিল। একধরনের অনাস্থার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এ বৈঠক অনিশ্চয়তা, শঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে দিয়ে রাজনীতিতে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যায়।

পারস্পরিক যে কাদা ছোড়াছুড়ি, দুর্নাম করার রাজনীতি, সেখান থেকে বেরিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ তৈরিতে সহায়তা করবে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক। নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কিছুদিন ধরে টানাপোড়েন চললেও বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে। এটা আমাদের রাজনীতিতে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

বৈঠকটি সারা দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। এখন মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। মানুষের ধারণাকে বাস্তবে রূপদান করার দায়িত্ব সরকারের।

বিএনপি এর আগে ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলেও কিছুটা সরে এসে ফেব্রুয়ারির সময়সীমাকে মেনে নিয়েছে। সরকারও এপ্রিল থেকে সরে এসে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে। উভয় পক্ষেরই কিছুটা সরে আসা, কিছুটা ছাড় দেওয়া—এটাই আমাদের রাজনীতি থেকে একদম হারিয়ে গিয়েছিল।

রাজনীতি মানেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে শত্রুতা করতে হবে, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের রাজনীতি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু শুধু কথায় কথায় উদার হলে হবে না। কাজে-কর্মেও উদারতা দেখাতে হবে। লন্ডনের বৈঠকে সেই উদারতার কিছু নমুনা আমরা দেখতে পেলাম।

আরও পড়ুনলন্ডনে ইউনূস-তারেকের আলোচনায় বিএনপিরই কি জিত১৩ জুন ২০২৫

বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আলোচনার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। তা নিয়ে আপাতত আলোচনার কিছু নেই। আমরা বরং রাজনীতিতে এ বৈঠকের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি। প্রথমত, এ বৈঠক সারা দেশের মানুষকে আশান্বিত করলেও রাজনীতির কোনো কোনো পক্ষ বা ব্যক্তি হতাশ হয়েছেন।

এসব গোষ্ঠীর মূল কাজ যেন বিএনপিকে যে কোনোভাবে ঠেকানো। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা হতাশ হয়েছেন তাদের মধ্যে  রাজনীতিবিদ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা আছেন। তাঁদের মূল লক্ষ্যই ছিল, যেকোনো প্রকারে বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিহত করা। এ অংশ চাইছে না বিএনপির রাজনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাক। বিএনপির নেতৃত্বে নতুন করে বাংলাদেশের বিনির্মাণ হোক।

কেউ যদি সহজ রাজনীতির পথ পরিহার করে অহেতুক কুটিল ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে, তবে তারা নিজেরাই রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ও জাসদ আমাদের সামনে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

বিএনপি যে শত ভাগ শুদ্ধ ও সঠিক রাজনীতি করছে, এটা বলা যাবে না। ভুল-ত্রুটি বিএনপিরও আছে। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল, হত্যাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এই পর্যন্ত চার হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য। দেশের ইতিহাসে কোনো দল নিজেদের এতসংখ্যক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেনি। এ ধরনের অপরাধ শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরাই করছেন না। বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এটা আমাদের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা লাগবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের রাজনীতি এই অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই রাজনৈতিক সরকার লাগবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

এ ধরনের পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তিরও প্রয়োজন হয়। বিকল্প অর্থনৈতিক কর্মসূচিও লাগে। এ জন্যই বিএনপি বারবার নির্বাচনের কথা বলে আসছে। আমরা মনে করি, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থান উন্নতি ঘটবে। বিএনপির বিকল্প অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আছে।

বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা

সম্পর্কিত নিবন্ধ