খেলার দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড রোনালদো
Published: 12th, April 2025 GMT
মাঠের ভেতরে ও মাঠের বাইরের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যেন একই রকম। মাঠে নিয়মিত গোল করছেন, সামনে তাঁর ১০০০ গোলের ‘ড্রিমল্যান্ড।’ এ মুহূর্তে তাঁর সামনে কেউ নেই। তেমনি মাঠের বাইরের রোনালদোও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। খেলাধুলার জগতে এখন তিনি সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড।
এটা শুধু কথার কথা নয়, পর্তুগিজ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড মার্কেটিংয়ের (আইপিএএম) গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য। ২০২৫ সালে রোনালদো ব্র্যান্ডের মূল্য পৌঁছেছে ৮৫ কোটি ইউরোয়। আইপিএএম হিসাব করে জানিয়েছে, ২০২০ সালের পর পর্তুগিজ কিংবদন্তির ব্র্যান্ডের দাম ৩২৫ শতাংশ বেড়েছে।
অন্য অনেক ক্রীড়াবিদের মতো রোনালদোও ব্যবসা–বাণিজ্যে বেশ আগ্রহী। হোটেল, লাইফস্টাইল (আন্ডারওয়্যার, জুতা, পারফিউম), রেস্তোরাঁ, চুলের ক্লিনিক, জিম ও ফিটনেস এবং ব্যক্তিগত জেট সার্ভিসে এরই মধ্যে সফল ব্যবসায়ী তিনি। এসবের পাশাপাশি জার্মানির একটি ঘড়ির ব্র্যান্ড এবং পর্তুগালে পোর্সেলিন ও সিরামিকস উৎপাদনের সঙ্গেও জড়িত রোনালদো। সম্প্রতি এই পর্তুগিজ ফুটবলার আরও একটি ক্ষেত্রে নিজেকে জড়িয়েছেন। সেটি সিনেমায়। ব্রিটেনের খ্যাতিমান পরিচালক ম্যাথু ভনের সঙ্গে সতন্ত্র একটি ফিল্ম স্টুডিও চালু করেছেন আল নাসর তারকা। দুটি সিনেমা নাকি এরই মধ্যে পাইপলাইনে আছে।
গবেষণাপত্রটি অবশ্য রোনালদোর সিনেমায় নাম লেখানোর আগেই প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণাটি করা হয়েছে ‘স্পোর্টস রেপুটেশন’ ইনডেক্সের মাধ্যমে, যেখানে ছয়টি ক্ষেত্রে (আয়, সংবাদমাধ্যমে উপস্থিতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ক্রীড়াক্ষেত্রে সাফল্য, সামাজিক প্রভাব ও বিস্তার) মোট ২৮টি বিষয়/চলক (ভ্যারিয়েবলস) পর্যালোচনা করা হয়েছে। ২০১১ সালে রোনালদো ব্র্যান্ডের মূল্য ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ ইউরো। মাঠ ও মাঠের বাইরে এই ১৪ বছরে রোনালদোর পারফরম্যান্স তাঁর ব্র্যান্ডমূল্যকে শতকোটির কাছাকাছি নিয়ে গেছে।
আরও পড়ুনহামজার পর আরও একজন, বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি সামিত২২ ঘণ্টা আগেআইপিএএম জানিয়েছে, আল নাসরে বছরে ২০ কোটি ইউরো পারিশ্রমিক পান রোনালদো। এর বাইরে নাইকি, ট্যাগ হিউয়ের ও লুইস ভুইতনের মতো বিশ্বখ্যাত সব ব্র্যান্ডের সঙ্গে বিজ্ঞাপনী চুক্তি হিসেবে আয় করেন আরও ১৫ কোটি ইউরো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অনুসারীও তাঁর—১০০ কোটির ওপরে। এর মধ্যে শুধু ইনস্টাগ্রামেই তাঁর অনুসারীসংখ্যা ৬৪ কোটি ৮০ লাখ।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ফুটবলারের চেয়েও বেশি কিছু। জনমানুষের জীবনে বহু বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব, উদ্ভাবন ও প্রভাবের প্রতিফলন। তার বাজারমূল্যটা খেলাধুলা, সংবাদমাধ্যম ও বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টতার প্রতিফলন, যা প্রজন্মান্তরে বিস্তৃত।আইপিএএমের নির্বাহী পরিচালক দানিয়েল সাএসবের বাইরেও রোনালদোর বৈশ্বিক প্রভাব কতটা, তা কিছু তথ্যে বোঝানো যায়—
* বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে বছরে ২ কোটি ২৩ লাখ প্রতিবেদন তৈরি হয়।
* সার্চ ইঞ্জিন গুগলে বছরে ১৮ কোটি ৭০ লাখ বার সার্চ করা হয়।
* অ্যামাজনে পাওয়া যায় এমন ৪০০০ বইয়ে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে।
* বিজ্ঞানভিত্তিক ৬৩ হাজার নিবন্ধে তাঁর উপস্থিতি।
পাঁচটি ব্যালন ডি’অর ও পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগসহ মোট ৩১টি ট্রফি জিতেছেন রোনালদো। আর ব্যবসা–বাণিজ্যে রোনালদোর বিস্তারের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ৯৩১ গোল করা এ ফরোয়ার্ডকে নিয়ে হওয়া গবেষণাটির দায়িত্বে ছিলেন আইপিএএমের নির্বাহী পরিচালক দানিয়েল সা। তাঁর ভাষায়, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ফুটবলারের চেয়েও বেশি কিছু। জনমানুষের জীবনে বহু বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব, উদ্ভাবন ও প্রভাবের প্রতিফলন। তার বাজারমূল্যটা খেলাধুলা, সংবাদমাধ্যম ও বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টতার প্রতিফলন, যা প্রজন্মান্তরে বিস্তৃত।’
আরও পড়ুনঅবৈধ বেটিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার দি মারিয়া ও পারেদেসের১ ঘণ্টা আগেযে তিন কারণে রোনালদো ব্র্যান্ডের এমন ফুলেফঁপে ওঠা:
* ৩০৮ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি
* স্পনসরশিপ থেকে আয়বৃদ্ধি ৪৩৫ শতাংশ
* ২০২০ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারীসংখ্যা বৃদ্ধি ২৮০ শতাংশ
কোন উচ্চতায় উঠে থামবেন রোনালদো.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ত গ
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।