পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের দূতের ৪ ঘণ্টা বৈঠক
Published: 12th, April 2025 GMT
ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। শুক্রবার ( ১১ এপ্রিল) সেন্ট পিটার্সবার্গে বৈঠক করেন দুই নেতা।
ট্রাম্প রাশিয়াকে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে ‘দ্রুত পদক্ষেপ’ নেয়ার আহ্বান জানানোর মধ্যে এই আলোচনা করলেন তারা। খবর বিবিসির।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, বৈঠকটি চার ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয় এবং মূলত ‘ইউক্রেন সংকট সমাধানের বিভিন্ন দিক’ নিয়ে আলোচনা হয়। এটি ছিল চলতি বছরে পুতিনের সঙ্গে উইটকফের তৃতীয় বৈঠক। রুশ বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ এই আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আরো পড়ুন:
গ্যাগারিন বিজ্ঞান উৎসবে রকেট মডেল তৈরি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
বৃহস্পতিবার তুরস্কে আবারো বৈঠকে বসছে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র
এর আগে আলোচনা নিয়ে রাশিয়ার প্রতি হতাশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। শুক্রবার, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘রাশিয়াকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ভয়াবহ এবং অর্থহীন যুদ্ধে প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।’
এছাড়া ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনীয় চুক্তি থেকে সরে যায় তাহলে রাশিয়ার তেল কিনছে এমন দেশগুলোর উপর দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
এদিকে ট্রাম্পের ইউক্রেনবিষয়ক দূত কিথ কেলগ ইউক্রেন বিভক্ত করার প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য টাইমস-এর খবরে বলা হয়, এক সাক্ষাৎকারে কেলগ পশ্চিম ইউক্রেনে 'নিরাপত্তা বাহিনী’ হিসেবে ব্রিটিশ ও ফরাসি সেনা মোতায়েনের কথা বলেছিলেন। একইসঙ্গে রাশিয়ার সেনারা পূর্ব ইউক্রেনে থাকত।
পত্রিকাটির উদ্ধৃতি অনুযায়ী, কেলগ বলেছিলেন, ‘আপনি একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বার্লিন ভাগ হওয়ার মতো করে দেখতে পারেন।’
তবে কেলগ পরে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, “এই প্রতিবেদনে আমার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “আমি যুদ্ধবিরতির পর একটি ‘স্থিতিশীলতা বজায় রাখা বাহিনী’ নিয়ে বলেছি যারা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করবে। আমি কখনো ইউক্রেনকে বিভক্ত করার কথা বলিনি।”
হোয়াইট হাউজ ও কিয়েভ এখনো কেলগের মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিবিসি দ্য টাইমসের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়েছে।
পুতিন-উইটকফ বৈঠকের আগে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি আশা করার প্রয়োজন নেই, কারণ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলছে।”
পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে পেসকভ বলেন, “দেখা যাক, উইটকফ কী বার্তা নিয়ে এসেছেন তার ওপর নির্ভর করছে।”
এদিকে, শুক্রবার ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে ২ হাজার ১০০ কোটি ইউরোর সামরিক সহায়তা ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা জানিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো আভাস তারা দেখছেন না।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইউক র ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে হামলা চালিয়ে নেতানিয়াহু কি ট্রাম্পকে অবজ্ঞা করলেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বের বড় বড় সংঘাত থামিয়ে বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু সংঘর্ষ-রক্তপাত থামছেই না। গাজা, ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি তাঁর ক্ষমতার মেয়াদের পাঁচ মাস পার হতে না হতেই নতুন করে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়ে বসল।
আজ শুক্রবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল ইরানে একাধিক স্থানে বড় পরিসরে হামলা চালিয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ হামলা পুরো অঞ্চলকে বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এখন ট্রাম্পের শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘মধ্যস্থতাকারী’ হওয়ার স্বপ্ন ছারখার হওয়ার পথে।
ইরানের ওপর ইসরায়েলের এ হামলাকে ট্রাম্পের প্রতি একধরনের অবজ্ঞা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ, তিনি বারবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে অনুরোধ করেছিলেন যেন তাঁরা ইরানে হামলা না চালান। অবশ্য ট্রাম্প নিজেও পরমাণু আলোচনা ব্যর্থ হলে ইরানে হামলার হুমকি দিয়েছিলেন।
এ হামলা এখন একেবারে ভিন্ন মাত্রা পেল। এ রকম উত্তেজনা আগে কখনো দেখা যায়নি। নতুন এক বড় যুদ্ধের আশঙ্কা এখন অনেক বেশি বাস্তবচার্লস লিস্টার, মিডলইস্ট ইনস্টিটিউটের সিরিয়া ইনিশিয়েটিভের প্রধানসাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ব্রেট ব্রুয়েন বলেন, ‘এ হামলার প্রথম শিকার হলো ট্রাম্পের কূটনীতি। শান্তি তো অনেক দূরের কথা, তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতিও আনতে পারেননি। ইরানের সঙ্গে আলোচনা ছিল সবচেয়ে এগিয়ে, নেতানিয়াহু সেটাও নষ্ট করে দিলেন।’
হোয়াইট হাউস, যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাস ও জাতিসংঘে ইরানের মিশন—তিন পক্ষই এসব বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ট্রাম্পের বিশেষ দূতের অপমান
এ হামলা ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের জন্যও অপমানজনক। তিনি পরমাণু ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে কঠোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উইটকফ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। ইরানের সঙ্গে আলোচনা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ট্রাম্পের কিছু ঘনিষ্ঠ মিত্রও স্বীকার করছেন, ইসরায়েলের হামলার আগেই ট্রাম্পের কূটনৈতিক চেষ্টা প্রায় ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল।
তবে দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে ট্রাম্প কিছুটা সাফল্য পেয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই উইটকফ ও বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি করান। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইসরায়েল সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও ট্রাম্পের প্রশাসন কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের আগে কিন্তু এই ট্রাম্প বলেছিলেন, অফিসে বসার আগেই তিনি যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন।
এ ছাড়া ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে করা আব্রাহাম চুক্তি সক্রিয় ও সম্প্রসারণে কোনো উদ্যোগ নেননি। ওই চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল।
সংঘাত আরও বাড়তে পারে
ট্রাম্প যখন শান্তি চুক্তি করতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন তাঁর প্রশাসনের মধ্যেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ, পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বহু কর্মকর্তা সরে গেছেন।
ইসরায়েলি হামলার আগেই অনেকে মনে করছিলেন, কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও উইটকফকে প্রধান আলোচক বানানো ট্রাম্প প্রশাসনের বড় ভুল ছিল।
ডেমোক্র্যাটরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ওবামার করা যুক্তরাষ্ট্র-ইরান-ইউরোপ চুক্তি বাতিল করেছিলেন। ট্রাম্প এখনো এর বিকল্প কিছু দিতে পারেননি।
ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মারফি বলেন, এই পরিস্থিতি ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর তৈরি। এখন পুরো অঞ্চল আরেকটি রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মুখোমুখি।
এ হামলা থেকে বড় ধরনের কোনো আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে কি না, তা এখনো কেউ নিশ্চিত নন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেহরান মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থগুলোকে হামলার ‘ন্যায়সংগত লক্ষ্যবস্তু’ হিসেবে দেখতে পারে। যেমন ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা আবার লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করতে পারে।
ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে স্থায়ী ক্ষতি করতে পারবে কি না, সেটাও স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে ইরানের ফোর্ডো সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা মাটির গভীরে অবস্থিত। ফলে সেটি ধ্বংস করা কঠিন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব স্থাপনায় আঘাত করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দরকার, যা এ হামলায় ছিল না।
আরেকটি অজানা বিষয় হলো তেহরান কতটা জোরালোভাবে ইসরায়েলি হামলার পাল্টা জবাব দিতে পারবে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে লক্ষ্য করেছে এবং এ অভিযান কয়েক দিন চলতে পারে।
সব মিলিয়ে এ পরিস্থিতি ট্রাম্পের ‘বিশ্বশান্তির মধ্যস্থতাকারী’ হয়ে ওঠার আশা পুরোপুরি শেষ করে দেবে, নাকি শুধু সাময়িক ধাক্কা, তা সময়ই বলে দেবে।
আরও পড়ুনমধ্যপ্রাচ্যে ‘বড় সংঘর্ষের শঙ্কা’ রয়েছে বলে ট্রাম্প সতর্ক করার পরই ইরানে ইসরায়েলের হামলা১ ঘণ্টা আগেমিডলইস্ট ইনস্টিটিউটের সিরিয়া ইনিশিয়েটিভের প্রধান চার্লস লিস্টার বলেন, যদি ইসরায়েলের কথা সত্যি হয় যে আজকের হামলা ছিল ইরানের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরুর প্রথম ধাপ, তাহলে ইরানের শাসনব্যবস্থা এখন একেবারে অস্তিত্বসংকট এবং জীবন-মরণ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে।
চার্লস লিস্টার বলেন, ‘এ হামলা এখন একেবারে ভিন্ন মাত্রা পেল। এ রকম উত্তেজনা আগে কখনো দেখা যায়নি। নতুন এক বড় যুদ্ধের আশঙ্কা এখন অনেক বেশি বাস্তব।’
আরও পড়ুনসর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কায় দেশের চতুর্দিকে সেনা মোতায়েন করছে ইসরায়েল৫২ মিনিট আগেআরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু কী, কারা জড়িত, নিহত কারা ২ ঘণ্টা আগে