দিনের বেশির ভাগ সময়ই অফিসে কেটে যায় ছোট টেবিল বা কিউবিকল অথবা লম্বা টেবিলের একটি অংশ নিয়েই। তাই অগোছালো না রেখে গুছিয়ে ফেলুন নিজের অফিসের ডেস্ক। সাজানো জায়গায় কাজ করতেও মন ভাল লাগবে। আর তাই ডেস্ক সাজানোর ছোট কৌশল জেনে নিন। 

ডেস্ক অর্গানাইজার: পেন, পেনসিল, স্টেপলার এবং ফাইল রাখার জন্য একটি ছোট অর্গানাইজ়ার কিনে নিন। যেখানে নির্দিষ্ট খোপে নির্দিষ্ট জিনিস রাখতে পারবেন। এতে জিনিসগুলি চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে না। খোঁজার জন্য কষ্টও করতে হবে না।

জলের বোতল: পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি জলের বোতল রেখে দিন ডেস্কে। আপনার নিজস্ব জলের বোতল। প্রয়োজনে নিজের নাম লিখে সেঁটে দিতে পারেন, যাতে অন্য কারও ভুল না হয়। নিয়ম করে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে কাজের সময়। ডেস্ক সাজানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের যত্ন নিতেও ভুলবেন না।

শুকনো খাবারের সরঞ্জাম: সারা দিন বসে বসে কাজ, টুকিটাকি খাবার জিনিস রেখে দিলে মুখ চালানোর জন্য চিন্তা করতে হবে না। তাই ছোট ছোট কাচের বোতলে রেখে দিতে পারেন শুকনো খাবার। স্বাস্থ্যকর খাবার রাখলে কাজের সময়ে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে।

গাছ: সারা দিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাচের ঘরে বসে ক্লান্ত হয়ে যায় শরীর। তাই সেখানেই যদি প্রকৃতির ছোঁয়া এনে দেওয়া যায়, খানিক আরাম তো মিলবেই। অন্দরমহলের জন্য উপযুক্ত ছোটখাটো গাছ দিয়ে সাজিয়ে রাখতে পারেন নিজের ডেস্ক।

স্টিকি নোট: সারা দিনে কী কী কাজ রয়েছে, অথবা কারও নম্বর, ইত্যাদি লিখে রাখার জন্য স্টিকি নোটপ্যাড রেখে দিতে পারেন। দরকারে তাতে নোট নিয়ে সামনে টাঙিয়ে রাখলেন, কাজ হয়ে গেলে খুলে ফেলে দিলেন। এতে ভুলে যাওয়ার ঝুঁকিও কমে, ডেস্কসজ্জার কাজও হয়ে যায় রংবেরঙের কাগজ দিয়ে।

নিজস্বতার ছোঁয়া: নিজের ব্যক্তিত্বের ছোঁয়ায় ডেস্ক হয়ে উঠুক বাকিদের থেকে আলাদা। নিজের পছন্দের গানের বা কবিতার পংক্তি, মন ভাল করা ছবি, পরিবারের ছবি ইত্যাদি দিয়ে ডেস্ক সাজিয়ে তুলুন। বাকি সরঞ্জাম যদি অন্যের সঙ্গে মিলেও যায়, আপনার ডেস্কে থাকবে নিজস্বতার ছোঁয়া।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ