বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ও সাই-ফাই সিনেমার মতো একটি কাজ করতে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান ইনটুইটিভ মেশিনস চাঁদে একটি ডেটা সেন্টার খুলবে বলে কাজ করছে। লোনস্টার ডেটা হোল্ডিংস সম্প্রতি চাঁদে ইনটুইটিভ মেশিনসের ল্যান্ডার এথেনার সঙ্গে ডেটা সেন্টারের কিছু যন্ত্র পাঠিয়েছে চাঁদে। ফ্লোরিডাভিত্তিক লোনস্টার সফলভাবে একটি হার্ডব্যাক বইয়ের আকারের ছোট ডেটা সেন্টার পরীক্ষা করেছে। ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের রকেটে এথেনা উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

লোনস্টারের ভাষ্যে, চাঁদে ডেটা সেন্টার স্থাপন সুবিধা অনেক। এমন ডেটা সেন্টার গ্রাহকদের সুরক্ষিত, নির্ভরযোগ্য উপায়ে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করতে সহায়তা করবে। আবার সীমাহীন সৌরশক্তির সুবিধার জন্য বেশ কার্যকরভাবে কাজ করবে। মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমন ধারণা নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।

ডেটা সেন্টার নিয়ে পৃথিবীতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সেভাবে ডেটা সেন্টার স্থাপনের উপযুক্ত স্থান খুঁজে পাওয়ার অসুবিধা রয়েছে বলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। মহাকাশের ডেটা সেন্টার বিকল্প পথ দেখা যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর কম্পিউটিংয়ের জন্য বড় ডেটা সেন্টার প্রয়োজন হচ্ছে। সে কারণে চাঁদ ও পৃথিবীর কক্ষপথে ডেটা সেন্টার বসানোর বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থা ম্যাকেঞ্জির মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে ডেটা সেন্টারের বার্ষিক চাহিদা ১৯ থেকে ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব ডেটা সেন্টার স্থাপন করার জায়গা সংকট রয়েছে। আবার প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করে বলে সমালোচনা রয়েছে।

সূর্যের শক্তি ও পরিবেশগত প্রভাব থাকবে না দেখে চাঁদে ডেটা সেন্টার স্থাপনে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার মহাকাশযান পরিচালনার জন্য সুবিধা দেবে। স্থলভাগ থেকে ডেটা স্থানান্তরের চেয়ে মহাকাশ থেকে মহাকাশে ডেটা স্থানান্তর দ্রুততর হবে তখন। এরই মধ্যে ইউরোপীয় কমিশন অর্থায়িত কক্ষপথে ডেটা সেন্টার স্থাপনের সম্ভাব্যতা নিয়ে সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সমীক্ষা বলছে, মহাকাশে ডেটা সেন্টার স্থাপন করলে ইউরোপীয় ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপে পরিবর্তন আসবে। আরও পরিবেশবান্ধব উপায়ে ডেটা সেন্টার তৈরি করা যেতে পারে।

প্রকৌশলী ড্যামিয়েন ডুমেশিয়ার বলেন, মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার বিদ্যমান স্থলভিত্তিক ডেটা সেন্টারের চেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব হতে পারে। এটি সম্ভব বলে মনে হচ্ছে। এটি ২০৩০ বা ২০৩৫ সালের মধ্যে করা যেতে পারে।

সূত্র: বিবিসি

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।” 

এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক। 

উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”

তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।” 

চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।” 

চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”

মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ