ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে মানুষ, বিলের পক্ষেও কথা হচ্ছে সেখানে। দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতা হচ্ছে।

সহিংস বিক্ষোভে মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জে নিহত হয়েছেন দুজন। সম্পর্কে তারা বাবা-ছেলে। তাদের বাড়ি থেকে দুজনের উদ্ধার হয়েছে। 

আর গুলিবিদ্ধ হয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সমশেরগঞ্জের সুতির সাজুর মোড়ে ১১ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হয় ওই কিশোর। 

আরো পড়ুন:

সারাদেশে ব্যাপক সংঘর্ষ, নিহত ৮৪

প্যানিক অ্যাটাক হলে দ্রুত যা করতে হবে

তিনটি মৃত্যুর ঘটনাই শনিবার (১২ এপ্রিল) ঘটেছে। এসব মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। 

মুর্শিদাবাদ পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতিও গরম হয়ে উঠেছে। এই সংকটের জন্য দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী।

কেন্দ্রীয় সরকার যে ওয়াকফ সংশোধনী আইন পাস করেছে, তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ।

শুক্রবার রাতে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয় গুলিবিদ্ধ কিশোরকে। অস্ত্রোপচার হলেও তাকে আইসিইউতে রাখতে হয়। তার জন্য গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ডও। কিন্তু শনিবার দুপুরে মারা যায় সে। 

সমশেরগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় বাবা ও ছেলের রক্তাক্ত দেহ। তাদের শরীরে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জঙ্গিপুর হাসপাতালে রাখা হয়েছে মরদেহ দুটি। সমশেরগঞ্জে দীর্ঘসময় বাড়িতে পড়ে ছিল বাবা-ছেলের নিথর দেহ। স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে লাশ দুটি উদ্ধার করে। 

ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ঘিরে মুর্শিদাবাদ যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, সে বিষয়ে জেলার মানুষকে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। প্ররোচণায় পা না দিতে অনুরোধ করেছেন তিনি। 
কেন্দ্রের আইন পশ্চিমবঙ্গে প্রযোজ্য হবে না, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকলে সেখানে বলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মমতা। 

মুর্শিদাবাদে বিক্ষোভের সময় গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। 

তবে মমতার পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী। অরাজকতার দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেছেন তিনি।

মুর্শিদাবাদ পরিস্থিতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।

ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে কেন বিক্ষোভ?
আরবি ভাষায় ‘ওয়াকাফা’ শব্দটি থেকে এসেছে ‘ওয়াকফ’, যার অর্থ সম্পত্তির হাতবদল। ভারতে যখন কোনো ব্যক্তি মুসলিম আইনের আওতায় ধর্মীয় বা দাতব্য কারণে সম্পত্তি দান করলে, সেই সম্পত্তিকে বলা হয় ওয়াকফ সম্পত্তি। এর মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, আশ্রয়কেন্দ্র বা শুধু জমিও হতে পারে।

যে কাজের জন্য ওয়াকফ সম্পত্তি দান করা হয়, সেটি ছাড়া অন্য কোনো কাজে ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহার করা যায় না এবং এটি কারো কাছে বিক্রি বা হাতবদলও করা যায় না।

অন্যভাবে বললে, ভারতে হিন্দু সমাজের মধ্যে যেটাকে ‘দেবোত্তর সম্পত্তি’ বলে গণ্য করা হয়, মুসলিম সমাজে মোটামুটি তারই অনুরূপ সংস্করণ হলো ওয়াকফ।

ভারতে অস্বচ্ছ্বল মুসলমানদের বিরাট অংশ ওয়াকফ সম্পত্তির সুবিধা পেয়ে থাকে। তা ছাড়া এসব সম্পত্তি এখন মুসলমানদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ভারতের কেন্দ্র সরকার অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির সরকার ওয়াকফ আইন সংশোধন করে এসব সম্পত্তি বা সম্পদের সুবিধাভোগী হিসেবে হিন্দুদেরও যোগ করেছেন। একই সঙ্গে ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় হিন্দুদের রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন। 

এই আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। আইনটির বিরোধিতা করছে কংগ্রেসসহ দেশটির বেশিরভাগ বিরোধী দল। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠেছে। প্রাণহানির পাশাপাশি ব্যাপক সম্পদহানিও ঘটছে।

ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত ম খ যমন ত র কর ছ ন আইন র

এছাড়াও পড়ুন:

তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।

উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।

ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।

এএএম//

সম্পর্কিত নিবন্ধ