আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংস্কারের পথনকশা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

শনিবার বিকেলে নিজের সরকারি বাসভবন যমুনায় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সদস্য বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং প্রথমে জানায়, অধ্যাপক ইউনূস আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা তথা সামগ্রিক সংস্কারপ্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। পরে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টার এই তাগিদের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সংস্কারের রোডম্যাপ (পথনকশা) চাইছি। সেই রোডম্যাপে যে কাজগুলো ঠিক করা হবে, সেই কাজগুলো বাস্তবায়নের জন্য যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা যে ধরনের কার্যক্রম দেখছি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগছে যে এসব কার্যক্রমের ওপর সরকারের পুরো তত্ত্বাবধান বহাল আছে কি না। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে যেসব কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে সময় নির্ধারণ করাই যুক্তিযুক্ত।’

তাড়াহুড়া করতে হবে বা দেরি করতে হবে—এনসিপির এমন কোনো চিন্তা নেই উল্লেখ করে সামান্তা শারমিন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় যৌক্তিক সংস্কার যদি তিন মাসেও শেষ করা যায়, তাহলে তিন মাস পরে নির্বাচন হলেও আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা থাকবে না। সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ আছে, আমাদের দিক থেকেও চাপ আছে। যে ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে, সে ধরনের নির্বাচনের দিকে তাঁরা যাতে অগ্রসর হন, সেই চাপ আমরাও দিচ্ছি।’

সামান্তা শারমিন আরও বলেন, ডিসেম্বর, জুন বা ডিসেম্বরের আগে যেটাই হোক, সংস্কারের রোডম্যাপটা আগে পেতে হবে। যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়া করছে, তাদের খুশি করার জন্য এ ধরনের মন্তব্য (প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ) করা ঠিক হবে না। কিন্তু সামনে যদি পথনকশাটা থাকে, তাহলে সেটা নিয়ে সব দলই আলাপ করতে পারে—এই এই কাজ করতে হবে, তাহলে যৌক্তিক সময় কী হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘তিন মাস, ছয় মাস বা এক বছর, যেটাই হোক না কেন, সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তো আমাদের সামনে পথনকশা নেই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড স ম বর আম দ র র জন য এনস প ধরন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ