সংস্কারের ছােঁয়া লাগেনি শেয়ারবাজারে
Published: 12th, April 2025 GMT
‘ধূমপান’ যেভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়, গত ১৫ বছরে সেভাবে আইন, নীতি এবং করের বোঝা চাপিয়ে দেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে দেশজুড়ে যে পরিবর্তনের জোয়ার ওঠে, আশা
ছিল শেয়ারবাজারেও এর ছোঁয়া লাগবে। আদতে কিছুই বদল হচ্ছে না। আগামীতে বাজার কীভাবে এগিয়ে যাবে, তার কোনো লক্ষণ ও বাস্তব সংস্কার উদ্যোগের এখনও দেখা নেই। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন।
গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় স্টক এক্সচেঞ্জের শীর্ষ ব্রোকাররা এমন হতাশা প্রকাশ করেছেন। রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, কমিশনের (বিএসইসি) কাজ বিনিয়োগকারী আনা নয়। তাদের কাজ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, যাতে কোম্পানিগুলো মূলধন সংগ্রহ করে এবং সাধারণ মানুষ বিনিয়োগে আসে। বাস্তবে বহু মাস কোনো আইপিও নেই, একটি আবেদনও জমা নেই। আগামী বছরেও আইপিও আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ আবেদন করার পর আইপিও অনুমোদন হতে অন্তত এক বছর লাগে।
ডিবিএ সভাপতি বলেন, শেয়ার কিনতে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পর প্রতিবছর ৪৫০ টাকা দিয়ে নবায়ন করতে হয়। বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন নিয়ম নেই। ২০১০ সালের পর বিনিয়োগকারীরা লোকসান করছেন। তারপরও মূলধনি মুনাফায় কর বসানো হয়েছে। কয়েক বছর ধরে অনেক ব্রোকারেজ হাউস লোকসানে। তাদেরও ব্রোকারেজ কমিশনের ওপর উৎসে ৫ পয়সা কর দিতে হচ্ছে। ভালো কোম্পানি আসছে না, তার পরও তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। এভাবে সবাইকে শেয়ারবাজারবিমুখ করার নীতি নেওয়া হয়েছে। এ নীতি ‘ধূমপান’ নিরুৎসাহিত করার নীতির মতোই।
তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারে সংস্কারের জন্য কমিটি করেছে বিএসইসি। তারা কিছু প্রস্তাবও জমা দিয়েছে। অথচ স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারসহ প্রধান অংশীজনদের কাছ থেকে সেই অর্থে মতামতই নেয়নি। এ সংস্কার তাহলে কার জন্য। দেশে বহু পরিবর্তন হচ্ছে, তবে শেয়ারবাজারে দায়িত্বশীলদের মানসিকতায় বদল দৃশ্যমান নয়। ১৯৯৩ সালে আইন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসি গঠিত হয়েছে। এ সংস্থাই শেয়ারবাজার ইস্যুতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থা ও স্বাধীন। অথচ কথায় কথায় বিএসইসি নিজেই মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হচ্ছে। নিজের ক্ষমতাকে নিজেই খর্ব করছে। কমিশনের মত বিশেষায়িত সংস্থায় প্রেষণে কর্মকর্তা আনা হচ্ছে।
শেয়ারবাজারে নিজের ব্যবসার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে এ বাজারের সঙ্গে আছেন। প্রায় ৪০ বছরে সব খাতে কিছু না কিছু উন্নতি দেখেছেন, শুধু শেয়ারবাজার ছাড়া। গত সপ্তাহে দেশে বড় বিনিয়োগ সম্মেলন হয়েছে। অথচ শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের সেখানে স্থান হয়নি।
মিনহাজ মান্নান বলেন, ‘গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজার বিষয়ে যত আইন ও নীতি হয়েছে, তার সবই ছিল বাজারটিকে ছোট করার জন্য। এখন সংস্কার করার জন্য কমিটি হয়েছে। কমিটির সবাই যতই অভিজ্ঞ হোক না কেন, অংশীজনদের প্রকৃত মতামত না নিয়ে কীভাবে সংস্কার করছেন– প্রশ্ন তাঁর।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, নীতিনির্ধারকরা যদি না চান শেয়ারবাজার ভালো হোক, তাহলে কেউ এ বাজার ভালো করতে পারবে না। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের এমডি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাজার বড় করতে হলে ব্যাংক থেকে কোনো কোম্পানি কত ঋণ নিতে পারবে এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ব্যাংক দিতে পারবে কিনা– সে বিষয়ে নীতি না হলে কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারমুখী হবে না। তিনি মনে করেন, শেয়ারবাজারের মতো আবাসনে বিনিয়োগেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ তুলে দেওয়া উচিত।
আইডিএলসি সিকিউরিটিজের এমডি মো.
ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের সিইও আহসানুর রহমান বলেন, লোকসানের কারণে বিনিয়োগ সেবা উন্নত করা তো দূরের কথা, শেয়ারবাজার নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে পারছে না। ডিবিএ সহসভাপতি ও এমিনেন্ট সিকিউরিটিজের এমডি ওমর হায়দার বলেন, বছরের পর বছর লোকসান করার পরও সরকারকে কর দিতে হচ্ছে। এটা কী করে সম্ভব?
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র জ র এমড ব এসইস ন বল ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ জন্য দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উভয় পক্ষের এ বৈঠকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তুর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এ বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আজকে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আমরা পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরব। বিশেষ করে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানাবো। আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম রাইজিংবিডিকে বলেন, “ঈদের আগেই এ বৈঠকের বিষয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিএসইসি। আমরা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করব। আলোচনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।”
তবে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা বিএসইসির এ আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেছি। একই সঙ্গে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করা হবে। এ জন্য আজকে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”
ঢাকা/এনটি/ইভা