‘ধূমপান’ যেভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়, গত ১৫ বছরে সেভাবে আইন, নীতি এবং করের বোঝা চাপিয়ে দেশের শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে দেশজুড়ে যে পরিবর্তনের জোয়ার ওঠে, আশা
ছিল শেয়ারবাজারেও এর ছোঁয়া লাগবে। আদতে কিছুই বদল হচ্ছে না। আগামীতে বাজার কীভাবে এগিয়ে যাবে, তার কোনো লক্ষণ ও বাস্তব সংস্কার উদ্যোগের এখনও দেখা নেই। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন। 

গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় স্টক এক্সচেঞ্জের শীর্ষ ব্রোকাররা এমন হতাশা প্রকাশ করেছেন। রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, কমিশনের (বিএসইসি) কাজ বিনিয়োগকারী আনা নয়। তাদের কাজ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, যাতে কোম্পানিগুলো মূলধন সংগ্রহ করে এবং সাধারণ মানুষ বিনিয়োগে আসে। বাস্তবে বহু মাস কোনো আইপিও নেই, একটি আবেদনও জমা নেই। আগামী বছরেও আইপিও আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।  কারণ আবেদন করার পর আইপিও অনুমোদন হতে অন্তত এক বছর লাগে। 
ডিবিএ সভাপতি বলেন, শেয়ার কিনতে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পর প্রতিবছর ৪৫০ টাকা দিয়ে নবায়ন করতে হয়। বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন নিয়ম নেই। ২০১০ সালের পর বিনিয়োগকারীরা লোকসান করছেন। তারপরও মূলধনি মুনাফায় কর বসানো হয়েছে। কয়েক বছর ধরে অনেক ব্রোকারেজ হাউস লোকসানে। তাদেরও ব্রোকারেজ কমিশনের ওপর উৎসে ৫ পয়সা কর দিতে হচ্ছে। ভালো কোম্পানি আসছে না, তার পরও তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। এভাবে সবাইকে শেয়ারবাজারবিমুখ করার নীতি নেওয়া হয়েছে। এ নীতি ‘ধূমপান’ নিরুৎসাহিত করার নীতির মতোই।

তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারে সংস্কারের জন্য কমিটি করেছে বিএসইসি। তারা কিছু প্রস্তাবও জমা দিয়েছে। অথচ স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারসহ প্রধান অংশীজনদের কাছ থেকে সেই অর্থে মতামতই নেয়নি। এ সংস্কার তাহলে কার জন্য। দেশে বহু পরিবর্তন হচ্ছে, তবে শেয়ারবাজারে দায়িত্বশীলদের মানসিকতায় বদল দৃশ্যমান নয়। ১৯৯৩ সালে আইন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসি গঠিত হয়েছে। এ সংস্থাই শেয়ারবাজার ইস্যুতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থা ও স্বাধীন। অথচ কথায় কথায় বিএসইসি নিজেই মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হচ্ছে। নিজের ক্ষমতাকে নিজেই খর্ব করছে। কমিশনের মত বিশেষায়িত সংস্থায় প্রেষণে কর্মকর্তা আনা হচ্ছে। 
শেয়ারবাজারে নিজের ব্যবসার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে এ বাজারের সঙ্গে আছেন। প্রায় ৪০ বছরে সব খাতে কিছু না কিছু উন্নতি দেখেছেন, শুধু শেয়ারবাজার ছাড়া। গত সপ্তাহে দেশে বড় বিনিয়োগ সম্মেলন হয়েছে। অথচ শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের সেখানে স্থান হয়নি। 
মিনহাজ মান্নান বলেন, ‘গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজার বিষয়ে যত আইন ও নীতি হয়েছে, তার সবই ছিল বাজারটিকে ছোট করার জন্য। এখন সংস্কার করার জন্য কমিটি হয়েছে। কমিটির সবাই যতই অভিজ্ঞ হোক না কেন, অংশীজনদের প্রকৃত মতামত না নিয়ে কীভাবে সংস্কার করছেন– প্রশ্ন তাঁর।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, নীতিনির্ধারকরা যদি না চান শেয়ারবাজার ভালো হোক, তাহলে কেউ এ বাজার ভালো করতে পারবে না। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের এমডি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাজার বড় করতে হলে ব্যাংক থেকে কোনো কোম্পানি কত ঋণ নিতে পারবে এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ব্যাংক দিতে পারবে কিনা– সে বিষয়ে নীতি না হলে কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারমুখী হবে না। তিনি মনে করেন, শেয়ারবাজারের মতো আবাসনে বিনিয়োগেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ তুলে দেওয়া উচিত। 
আইডিএলসি সিকিউরিটিজের এমডি মো.

সাইফুদ্দিন বলেন, দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিবেচনায় নিয়ে এদেশে অন্তত সাড়ে তিন কোটি মানুষ আছে, যারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। অথচ তাদের বিনিয়োগমুখী করার পরিকল্পনা নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের সংস্কারের সুযোগ শেয়ারবাজার এখনও পায়নি। পূবালী ব্যাংক সিকিউরিজের এমডি আহসান উল্লাহ বলেন, এক সময় এ বাজারে ৩৩ লাখ সক্রিয় বিনিয়োগকারী ছিলেন, এখন তা নেমেছে ১২ লাখে। এটি আশঙ্কাজনক। 

ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের সিইও আহসানুর রহমান বলেন, লোকসানের কারণে বিনিয়োগ সেবা উন্নত করা তো দূরের কথা, শেয়ারবাজার নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে পারছে না। ডিবিএ সহসভাপতি ও এমিনেন্ট সিকিউরিটিজের এমডি ওমর হায়দার বলেন, বছরের পর বছর লোকসান করার পরও সরকারকে কর দিতে হচ্ছে। এটা কী করে সম্ভব?

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র শ য় রব জ র জ র এমড ব এসইস ন বল ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি

শেয়ার সূচকের নিয়মিত পতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে যেসব শেয়ারের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ দেখা যাচ্ছে, বাজার তদারকির মাধ্যমে সেসব শেয়ার চিহ্নিত করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।

দেশের পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক নিম্নমুখী প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গতকাল মঙ্গলবার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তাৎক্ষণিক কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী  আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন, পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের প্রতিনিধি ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।

সভার সিদ্ধান্ত হয়, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা প্রচার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হবে।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানির শেয়ার অফলোড করা, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতের দেশী লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে।

যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় করছাড় দেওয়া হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সীমিত করা এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করছাড় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে করসুবিধা দেবে সরকার
  • বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা চেয়ারম্যানের
  • কর্মীদের নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানালেন রাশেদ মাকসুদ
  • ২১ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে বিএসইসির আদেশ জারি
  • ২১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করল বিএসইসি
  • পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি
  • বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে: বিএসইসি
  • বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে
  • পুঁজিবাজারে আস্থা বাড়াতে ৬ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ
  • এপ্রিলজুড়ে দর পতন, আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ নেই