পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এবার পুলিশ সপ্তাহ পিছিয়ে গেছে। ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত এবারের আয়োজন হবে তিন দিনের। আগামী সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা ও কাজ কী হবে, তার নির্দেশনা দেওয়া হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহে। তবে এবার কোনো প্যারেড হবে না।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর তিনি পুলিশ সদস্যদের পদক পরিয়ে দেবেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এবারই প্রথম সাত দিন নয়, পুলিশ সপ্তাহ হচ্ছে তিন দিনের এবং কোনো প্যারেড রাখা হয়নি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এবার শিল্ড প্যারেডসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতাও নেই। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে পত্রিকায় কোনো ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে না। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মিলন থাকছে না। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা যাবেন না। আর প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও কোনো সেশন নেই। রেডিও-টেলিভিশনেও থাকবে না বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান।

তবে কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন, ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ওই দিন সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ওই দিন পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠান রাখাটাও ঠিক হয়নি।

আবহাওয়াসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবারের পুলিশ সপ্তাহ সংক্ষিপ্ত করে তিন দিন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এতে গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ই থাকছেইনামুল হক, মুখপাত্র, পুলিশ সদর দপ্তর

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, এবারের পুলিশ সপ্তাহ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা ও কাজ কী হবে, তার নির্দেশনা পাওয়া যাবে। তা ছাড়া পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন দাবিদাওয়া, মাঠপর্যায়ের পুলিশের সমস্যাগুলো বিশদভাবে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিগত বছরগুলোতে সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হতো। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বাহিনীর নীতিনির্ধারকদের ‘কেমন পুলিশ দেখতে চান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনসহ পুলিশ খাতের জন্য নেওয়া সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি তুলে ধরবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ ছাড়া পুলিশের যানবাহন–সংকট ও আবাসন সমস্যার সমাধানে দাবিও জানানো হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এবার শিল্ড প্যারেডসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতাও নেই। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে পত্রিকায় কোনো ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে না। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মিলন থাকছে না। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা যাবেন না।

সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশ সদস্যদের রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) ও বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচনে ভূমিকা রাখার জন্য ও রাজনৈতিক বিবেচনায় পুলিশ সদস্যদের পদক দেওয়া হতো। কিন্তু এবারই প্রথম পেশাদারি ও কাজের যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ সদস্যদের পদক দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ১২২টির বেশি পদক দেওয়া যাবে না। গত বছর সর্বোচ্চ ৪০০ জনকে পদক দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া এখন থেকে সারা বছর পেশাদারি ও কাজের যোগ্যতা অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে এবং তখন থেকেই তাঁরা আর্থিক সুবিধা পাবেন। পরে পুলিশ সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে পদক পরিয়ে সম্মানিত করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ইনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়াসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবারের পুলিশ সপ্তাহ সংক্ষিপ্ত করে তিন দিন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এতে গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ই থাকছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ১২২টির বেশি পদক দেওয়া যাবে না। গত বছর সর্বোচ্চ ৪০০ জনকে পদক দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া এখন থেকে সারা বছর পেশাদারি ও কাজের যোগ্যতা অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে এবং তখন থেকেই তাঁরা আর্থিক সুবিধা পাবেন। পরে পুলিশ সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে পদক পরিয়ে সম্মানিত করা হবে।তিন দিনের অনুষ্ঠানসূচি

পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা পুলিশের সব ইউনিটের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এদিন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মতবিনিময় করবেন।

দ্বিতীয় দিনে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ), হাইওয়ে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), রেলওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ–বিষয়ক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পৃথক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। পুলিশের প্রতিটি ইউনিট তাদের কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে।

শেষ দিন হবে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির স্টল পরিদর্শন ও বার্ষিক পুনাক সমাবেশ। নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন প ল শ কর মকর ত র অন ষ ঠ সরক র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ