শর্ষের তেলের রান্না খেলে কী উপকার, কী ক্ষতি
Published: 13th, April 2025 GMT
সাদামাটা আলুভর্তার স্বাদও বদলে যায় সামান্য শর্ষের তেলের জন্য। শর্ষের তেল দিয়ে ইলিশ রাঁধেন অনেকে। অনেকে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবেও শর্ষের তেল ব্যবহার করেন। কিন্তু নিয়মিত শর্ষের তেল খাওয়া কি ঠিক? এসব নিয়েই কথা হলো ফাতেমা আকতারের সঙ্গে। তিনি রাজধানীর আজিমপুরে অবস্থিত গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক।
পুষ্টির প্রয়োজনেশর্ষের তেলে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি এমন এক ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। শর্ষের তেল অন্য অনেক তেলের চেয়ে স্বাস্থ্যকর। মাঝেমধ্যে খানিকটা শর্ষের তেল দেওয়া খাবার খাওয়া হলে একজন সুস্থ মানুষের রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ খুব বেশি বাড়বে না। কারণ, এতে সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা তুলনামূলক কম। সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডই রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ বাড়ায়।
আরও আছে ভিটামিন ইশর্ষের তেলে পাবেন ভিটামিন ই। এটি একটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেহের ভেতর বহু পরিবর্তন হয়। ত্বকেও পড়ে বয়সের ছাপ। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এসব পরিবর্তন চলে আসে বয়সের আগেই। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আমাদের দেহের বয়সজনিত এসব পরিবর্তনকে খুব দ্রুত প্রকট হয়ে উঠতে দেয় না। তারুণ্য বজায় থাকে দীর্ঘদিন।
আরও পড়ুনমাত্র ১ সপ্তাহ চিয়া সিড খেলে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো লক্ষ করবেন০১ আগস্ট ২০২৪গরমে খাবারে রুচিশর্ষের তেলের স্বাদ, ঝাঁজ ও ঘ্রাণ অন্যান্য তেলের চেয়ে একেবারেই আলাদা। গরমে খাবারে অরুচি হলে সামান্য শর্ষের তেল দেওয়া ভর্তা ছাড়াও এই তেল দিয়ে তৈরি আচার খেতে পারেন। ভিন্ন স্বাদ পাবেন। খাবার খেয়ে আরামও পাবেন।
ভালোতেই শেষ নয়...
শর্ষের তেলের উপকারিতা সম্পর্কে তো জানলেন। তবে এর বেশ কিছু খারাপ দিকও আছে। তাই দীর্ঘদিন ধরে এই তেল গ্রহণ করা উচিত নয়। আবার শর্ষের তেল সব ধরনের রান্নার উপযোগীও নয়। এসব বিষয়ও জেনে নেওয়া যাক।
শর্ষের তেলে ইউরোসিক অ্যাসিড থাকে। তাই দীর্ঘদিন ধরে শর্ষের তেলে তৈরি করা খাবার খেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। কিডনিতে পাথরও হতে পারে। তা ছাড়া এই অ্যাসিডের কারণে যে কারও শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে। ফলে বাতের ব্যথার আশঙ্কা বাড়ে।
শর্ষের তেলে যতটা সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, সেটিও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর কারণে রক্তে খারাপ চর্বির মাত্রা বাড়তে পারে।
হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শর্ষের তেল একটানা অনেক দিন ধরে গ্রহণ করা উচিত নয়।
শর্ষের তেল যদি খাঁটি না হয়, তাহলেও মুশকিল। ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো থাকলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে।
ডুবোতেলে ভাজতে হয়—এমন পদ কখনোই স্বাস্থ্যকর নয়, তা সেটি যে তেলেই ভাজা হোক না কেন। এমন পদে শর্ষের তেল ব্যবহার করা হলে সুঘ্রাণটাও থাকে না; বরং খানিকটা উৎকট গন্ধ হয়। খুব বেশি উত্তাপে রান্না করতে হয়—এমন পদে শর্ষের তেল ব্যবহার করলেও উৎকট গন্ধ হতে পারে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।