জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, করহার খুব বেশি কমানোর সুযোগ নেই। তবে কোম্পানি লোকসান করলেও কর দিতে হয়, সেখানে নতুন বাজেটে কিছু করার চেষ্টা থাকবে। অন্যদিকে আমদানিতে শুল্কহার কমানো হবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক শুল্কহার আরও যৌক্তিকীকরণ করা হবে।

রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এ আলোচনায় সহযোগিতা করে দৈনিক সমকাল ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোর। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন সমকাল সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী।

এনিবআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত খুবই কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে কর দেওয়ার প্রবণতা কম। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ১ কোটি ৪৫ লাখ টিআইএনর মধ্যে ৪৫ লাখের মতো রিটার্ন জমা দেন। রিটার্ন জমা দেওয়াদের মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগই করযোগ্য আয় নেই বিবেচনায় শূন্য রিটার্ন দিয়েছেন।

এনবিআরের কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে অটোমেশন করতে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘অটোমেশন ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই। আমরা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কর প্রদান মোবাইল অ্যাপে আনার জন্য কাজ চলছে। আগামী অর্থবছর থেকে যাতে ব্যক্তি আয়কর দাতারা সবাই অনলাইনে রিটার্ন জমা দেন, আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। অন্যদিকে কোম্পানি করদাতাদেরও আমরা একই প্রক্রিয়ায় আনার চেষ্টার করছি।’

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তি ও কোম্পানির আয়কর হার কমানোর সুযোগ নেই। তবে করদাতারা আগামী বাজেটে ইতিবাচক বার্তা পাবেন। কর ব্যবস্থা বৈমষ্যহীন করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আমাদের রাজস্বের বেশির ভাগই আসবে ভ্যাট ও আয়কর থেকে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে নয়, এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণেও আমদানি কমিয়ে আনতে হবে।     

সার্বিকভাবে সরকার বৈষম্যহীন করনীতি প্রণয়ন চায়। সবার জন্য একই রেট করতে চাই। কারও ক্ষেত্রে কম, কারও ক্ষেত্রে বেশি এমনটি হবে না। দীর্ঘদিন ধরে দেওয়া কর অব্যাহতি নতুন বাজেটে কমানো হবে।  
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনব আর করহ র

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্টে সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে সব ব্যক্তি করদাতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানায় সংস্থাটি।

গত বছর নির্দিষ্ট এলাকার অধিক্ষেত্রের ব্যক্তি করদাতা, সারা দেশে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেন।

দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১২ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবছর মাত্র ৪০ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেন।

এনবিআর জানায়, এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে চলতি বছর ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

চলতি ২০২৫-২৬ করবর্ষে যেসব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তাঁরাও চাইলে অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। অন্যদিকে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এই সময়সীমা ৩১ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে।

এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করদাতার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাঁদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ই-মেইল করলে ই-রিটার্নের নিবন্ধন লিংক পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারা ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করে সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। কোনো ধরনের কাগজপত্র বা দলিল আপলোড না করেই করদাতারা তাঁদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে ঝামেলাহীনভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। ই-রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে জমা স্লিপ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আয়কর সনদও প্রিন্ট করে নিতে পারছেন করদাতারা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ই-রিটার্ন জমা সহজ করার জন্য গত বছরের মতো এবারও করদাতাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা দিতে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আবার ওয়েবসাইটে ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানালেও তার সমাধান পাচ্ছেন করদাতারা। কোনো করদাতা সশরীর নিজ নিজ কর অঞ্চলে গিয়েও ই-রিটার্ন জমা দেওয়াসংক্রান্ত সেবা নিতে পারছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর