উচ্চাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ সম্মেলনের সাফল্য অর্জিত না হলে তা দুঃখজনক হবে বলে মনে করে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে হাঁকডাক করে আয়োজন করা বিনিয়োগ সম্মেলনের সুবিধা বাংলাদেশ পাবে না বলেও আশঙ্কা দলটির।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান (মঞ্জু) এ কথা বলেন।

মজিবুর রহমান বলেন, এবি পার্টি মনে করে গত রেজিমের দেওয়া বিভিন্ন মিথ্যা ও কাল্পনিক তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে ২০২৬ সালের নভেম্বরে অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে এসে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার রূপকল্প দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ যেসব কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য উপযোগী ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছে, তা আর থাকবে না। তাই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্থানীয় বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রাসঙ্গিক সব পরিসংখ্যান যাচাই-বাছাই করে পুনঃপ্রকাশ করা জরুরি। দেশের মোট জনসংখ্যা, জিডিপির পরিমাণ, মাথাপিছু গড় আয় ও আয়ু, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, শিক্ষা ও দক্ষতার হার, ক্রয় ক্ষমতাসম্পন্ন দেশি বাজারের পরিধি, রিজার্ভ ও ঋণের পরিমাণ, বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং ইত্যাদির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রকাশ করা আবশ্যক। যাতে তাঁরা ভেবেচিন্তে সঠিক ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এবি পার্টি মনে করে, যেকোনো বিনিয়োগকারীকে স্থানীয় ও রপ্তানি বাজার সামনে রেখে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হয়। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজারের সক্ষমতা, দুনিয়াজুড়ে রপ্তানির সম্ভাবনা, অবকাঠামোগত সুবিধা, প্রতিযোগিতামূলক কর-ভ‍্যাট আছে কি না, জ্বালানি নিরাপত্তা, স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ, ব‍্যাংক ঋণ-ডলারের মজুত ইত্যাদি সব চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করার বাস্তবভিত্তিক পথনকশা জরুরি। বিনিয়োগ সম্মেলনকে ঘিরে দেশে-বিদেশে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তাঁকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমদ ভূঁইয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন, আনোয়ার সাদাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাক

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান হবে আশা করা যায়। নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে দুই পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়েছে যে ২০২৬ সালের রোজার আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। 

সাম্প্রতিক কালে নানা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের বিরোধ লক্ষ করা যাচ্ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি–দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যু সেই বিরোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করে।

কিন্তু ঈদুল আজহার আগের রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার ব্যাপারে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। এর আগে বিএনপির নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। 

এমনই একটি পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় লন্ডনে তাঁর সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈঠকের ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি সামনে এলেও দুই পক্ষের আলোচনা কেবল এর মধ্যে সীমিত ছিল না। প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সংস্কারের ধারাবাহিকতার ওপরও জোর দেন তঁারা। 

বৈঠকের ফলাফলকে প্রায় সব দলই স্বাগত জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি ঘোষণার ধরন নিয়ে আপত্তি জানালেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা কেউ করেনি। আমরাও মনে করি, কোনো বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমেই তা সমাধান করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ যারা সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারকাজ দৃশ্যমান করার ওপর জোর দিয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরাগমন না ঘটে, সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি ত্বরান্বিত করা জরুরি। আবার অপরাধ করে যাতে কেউ পার না পায়, সে জন্য জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচারও অপরিহার্য। কিন্তু এই দুটি বিষয়কে কোনোভাবে নির্বাচনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা সমীচীন হবে না।

যেসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে নির্বাচন ও সংবিধানের বিষয়টি জড়িত নয়, সেগুলো সরকার নির্বাহী আদেশেও বাস্তবায়ন করা যায়। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে তেমন বাধা আসার কথা নয়। তবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার অর্থ এই নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা না থাকলে সরকার একা কাজটি করতে পারবে না। 

ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্দলীয় ও আন্তদলীয় সংঘাতের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে না চললে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। আমরা আশা করি, দিন-তারিখের বিষয়ে সমঝোতার পর নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। রাজনীতিতে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে; তাই বলে একে অপরকে ‘শত্রুজ্ঞান’ করার পুরোনো সংস্কৃতি থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ