জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেছেন, চাষাড়া মোড়ে কোনো ধরনের স্ট্যান্ড থাকবেনা। সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এখান থেকে সব স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হবে।

ইতিমধ্যেই আমরা চাষাড়ায় ১৬টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি, কোন পরিবহন কোথায় গাড়ি দাড় করিয়ে রাখে, কোথা থেকে যাত্রী তুলে সবই আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।

অতি শীঘ্রই পুরো নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করা হবে। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে একথা বলেন তিনি। রোববার (১৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় মৌমিতা বাসসহ অন্যান্য বাস কেন রাস্তায় দাড়িয়ে যাত্রী তুলে এ বিষয়ে বাস মালিক সমিতির কাছে, সিরাজদ্দৌলা সড়কের ড্রেন সংস্কারের কাজ কবে শেষ হবে এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের কাছে জানতে চান জেলা প্রশাসক।

একইসাথে, চাষাড়া মোড়ে কোনো ধরনের স্ট্যান্ড থাকবেনা, নারায়ণগঞ্জ জেলার বাইরের কোনো সিএনজি শহরে প্রবেশ করতে পারবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া, চাষাড়ায় ট্রেনের লাস্ট স্টপেজ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

ট্রেন স্টপেজ যাতে চাষাড়াতে সীমাবদ্ধ থাকে এবং শহরে প্রবেশ না করে জেলা প্রশাসকের এমন প্রস্তাবকে সমর্থন করেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের এই প্রস্তাবকে পূর্ণ সমর্থন করি।

এটি করতে পারলে শহরের যানজট অনেকাংশেই কমে যেতো। তাই চাষাড়া পর্যন্তই ট্রেন স্টপেজ থাকা দরকার। অতীতে বিভিন্ন জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে বারবার জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে, আমরা আশা করি বর্তমান জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিবেন।

তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক লিখিত আকারে এ বিষয়টি জানাতে বলেন। এছাড়া, জেলা প্রশাসক বলেন, প্রতিদিন ৩ ঘন্টারও বেশী সময় নগরবাসীকে যানজটে আটকা পড়তে হয় ট্রেনের সিগন্যালের কারণে।

আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত স্টেকহোল্ডারদের বিভিন্ন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে জাটকা ধরতে নিষেধ করা হয়। জাতি হিসেবে আমরা নিজেরা কি নির্দিষ্ট এই সময়ে জাটকা বিক্রি থেকে দুরে থাকতে পারিনা। এইসব কালচার থেকে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, অপরাধী যেই হোক, সে অপরাধী। তার কোনো দলীয় পরিচয় নেই, অপরাধীকে অপরাধীর মতোই ট্রিট করতে হবে। কোনো প্রকার ছাড় দেয়া যাবে না।

শহরের যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে রাখা হয় এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সাথে এ বিষয়ে আমি কথা বলেছি, ময়লাগুলো কোনো বক্সে রাখা যায় কিনা এ বিষয়ে আমার কথা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মতো একটি শহর, যার সৃষ্টি বহু আগে থেকে, যাকে প্রাচ্যের ডান্ডি বলা হতো, এমন একটি জেলায় এভাবে উন্মুক্ত অবস্থায় ময়লা রেখে পরিবেশ নষ্ট করার বিষয়টি কাম্য নয়।

সবশেষে তিনি বলেন, মহান স্বাধীণতা দিবস, পবিত্র ঈদ উল ফিতর ও লাঙ্গলবন্দ স্নানসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম ও সময় আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পার করেছি। আপনাদের সকলের সহযোগীতায় এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিলো।

তবে, বিরোধী একটি পক্ষ দেশে নেগেটিভ কাজ করতে চায়, দেশে নেগেটিভ ঘটনা ঘটিয়ে বহির্বিশে^র কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়, এটা যেন করতে না পারে, সেজন্য সকলকে ভুমিকা রাখতে হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, জেলাকে মাদকমুক্ত করতে কাজ করছি, যা চলমান থাকবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, জেলা সিভিল সার্জন ডা.

এ এফ এম মশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, র‌্যাব, আনসার, উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, পিপি এড. আবুল কালাম আজাদ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তর, বেসরকারী সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ।

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারা দেশে সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৮৮
  • জুলাইয়ে মব তৈরি করে ১৬ জনকে হত্যা, অজ্ঞাতনামা ৫১ লাশ উদ্ধার
  • শৈলকুপায় ইউপি কার্যালয়ে তালা, বিএনপি নেতাসহ আটক ৬
  • ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেয়ায় বিএনপি নেতা আটক
  • গোপালগঞ্জে এনসিপির অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল, আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে
  • ‘ভূমিকম্পে ছিন্নভিন্ন হওয়া দেশকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার’
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • কক্সবাজারে ৩৫ পুলিশ সদস্যের পোশাকে থাকবে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’
  • ২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা
  • ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন