কুমিল্লায় রোগীকে ‘ভুল ইনজেকশন’: হাসপাতালের কনসালটেশন বিভাগের কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ
Published: 13th, April 2025 GMT
কুমিল্লা নগরীর একটি বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে নির্ধারিত ইনজেকশনের পরিবর্তে ‘ভুল ইনজেকশন’ পুশ করে অধিক মূল্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে হাসপাতালটির কনসালটেশন বিভাগের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতারণা করা মুন হাসপাতালটি নগরীর ঝাউতলায় অবস্থিত।
রোববার মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহের) পরিচালক ডাক্তার আবু হোসেন মো.
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। রাতে সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ।
স্বাস্থ্য বিভাগের চিঠিতে আরও বলা হয়, ডা. মোহাম্মদ আশরাফুল মতিন (সাগর) এর চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী গত ১০ এপ্রিল মনোয়ারা বেগম নামের রোগীকে ইনজেকশন অ্যাকলাস্টা (প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান-নোভার্টিস, সুইজারল্যান্ড) প্রদান করার কথা বলা হয় এবং যার বাজার মূল্য ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা বলে দাবি করা হয়। কিন্তু জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ইনজেকশন অ্যাকলাস্টা পরিবর্তন করে জোলেনিক (প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা বাংলাদেশ) যার বাজার মূল্য ৬,০০০ টাকা প্রদান করার অভিযোগ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে ডাক্তার মোহাম্মদ আশরাফুল মতিন (সাগর) এর একটি স্বাক্ষর বিহীন প্রতিবাদ লিপি প্রচার হয়। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। এমতাবস্থায় আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর প্রেরণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে ‘তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা পর্যন্ত মুন হাসপাতাল লিমিটেড, কুমিল্লা এর কনসালটেশন সেন্টারের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তবে হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর কার্যক্রম চালু থাকবে। বিষয়টি সিভিল সার্জন কুমিল্লা তত্ত্বাবধায়ন করবেন।’ এই আদেশ অমান্য করলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়। এ বিষয়ে মুন হাসপাতালের দায়িত্বশীল কেউ গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
রাতে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ সমকালকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি লালমাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক। অপর দুই সদস্য হচ্ছেন, মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সুমন চন্দ্র দত্ত এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা. শফিকুল ইসলাম। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, নির্দেশনা অনুসারে মুন হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে তাদের কনসালটেশন সেন্টারের কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত কমিটিকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ভ ল স র জন ইনজ কশন ম হ ম মদ
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।