ভারতে বিজেপি সরকারের পাস করা বিতর্কিত ওয়াক্‌ফ (সংশোধনী) আইন ঘিরে এখনো অশান্ত পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ। সহিংসতার ঘটনায় সেখানে এ পর্যন্ত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ এখন ওই এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার কাজ করছে। বিতর্কিত আইনটি নিয়ে সহিংসতায় ইতিমধ্যে তিনজন নিহত হয়েছেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজ্য পুলিশের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) জাভেদ শামীম বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনতে পুলিশ কাজ করছে। শিগগিরই পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।

আজ সোমবার ভবানী ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শামীম নিশ্চিত করেন, ‘সহিংসতার ঘটনায় ২০০–এর বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে যা ঘটেছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সবাইকে বুঝতে হবে, কোনো রাজ্যে যদি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, সেই রকম পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে।

মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান, সুতি, সামশেরগঞ্জ এলাকার পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল রোরবার থেকে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হয়েছে। ইতিমধ্যে নেমেছে ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। আরও জওয়ান আনা হচ্ছে।

গত তিন দিনে এই মুর্শিদাবাদে অশান্তির জেরে গঙ্গা নদী পেরিয়ে মুর্শিদাবাদের বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে মালদহের বৈষ্ণবনগরে। সেখানে রাজ্য প্রশাসন পালিয়ে আসা মানুষজনের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করেছে। যৌথ বাহিনী ঘোষণা দিয়েছে, কেউ যেন গুজবে কান না দেয়। মুর্শিদাবাদ এবং পাশের মালদহ ও বীরভূমের সীমান্ত এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।

মুর্শিদাবাদের তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য ইউসুফ পাঠানের ভূমিকায় একদল এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ইতিমধ্যে বিতর্কিত ওয়াক্‌ফ আইন ঘিরে সহিংসতায় মুর্শিদাবাদে তিনজন নিহত হয়েছেন।

মুর্শিদাবাদের ঘটনার প্রতিবাদে এবং পশ্চিমবঙ্গের ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করেছে বিজেপি। গতকাল রোববার কলকাতার কলেজ স্কয়ারে দলটির প্রতিবাদ–বিক্ষোভ থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। পরে মিছিল বের হয়। মিছিল শেষ হয় কলকাতার কেন্দ্রস্থল ধর্মতলায়।

বিজেপির বিক্ষোভকারীরা মুর্শিদাবাদের ঘটনায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। বলেছেন, পুলিশ সক্রিয় থাকলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যেত। একই সঙ্গে রাজ্যের ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে বিজেপি।

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতারা বলছেন, এই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি সহিংসতা মোকাবিলায় ব্যর্থ।

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিজেপির সংসদ সদস্য জগন্নাথ সরকার দাবি তুলেছেন, এই রাজ্যের মুর্শিদাবাদ, মালদহসহ সাতটি জেলায় অবিলম্বে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন আফস্পা বলবৎ করা হোক।

অন্যদিকে চাকরিহারাদের সংগঠন ‘যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী ঐক্য মঞ্চ’–এর অন্যতম আহ্বায়ক চিন্ময় মন্ডল গতকাল ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁদের একটি প্রতিনিধিদল আজ দুপুরে বিশেষ বাসে রাজধানী দিল্লি যাচ্ছে। তাঁরা বুধবার দিল্লির যন্তরমন্তরে একটি প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়ে অবস্থান ধর্মঘটে বসবেন। তাঁরা রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করবেন। চাকরিহারা প্রতিনিধিরা বাসে করে যেসব রাজ্যের মধ্য দিয়ে দিল্লি যাবেন, সেসব রাজ্যে তাঁদের দাবিসংবলিত প্রচারপত্র বিলি করবেন।

তৃণমূল সংসদ সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

রাজ্য পুলিশের আইজি রাজীব কুমার রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়ে বলেছেন, কোনো গুন্ডাবাজিকে বরদাশত করা হবে না। গুজবে কান দেবেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র পর স থ ত র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের

মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

এ দিন শিশুকে চিকিৎসা প্রদানকারী তিন চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন– মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ডা. সোহাস হালদার, নাকিবা সুলতানা এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  ডা. ইসরাত জাহান। তারা সবাই শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করেন।  

এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামলার ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, বিগত চার কার্যদিবস একটানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। এ নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আগামী রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদে অন্য সব সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসামিরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। 

বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি। এই ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা সিএমএইচে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৩ মার্চ শিশুটি সেখানে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার বড় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখসহ চারজনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। রিমান্ডে হিটু শেখ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ