ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, চল্লিশেও ‘নবযৌবন’ যাঁর
Published: 14th, April 2025 GMT
৪০ বছর বয়সে কী করা যায়? আপনি বলবেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো হওয়া যায়। তাঁর মতো মাঠ দাপিয়ে খেলা যায়। গোটা দুনিয়া যখন ‘চল্লিশে চালশে’ প্রবাদে বিশ্বাস করে, তখন রোনালদোর মতো ‘অতিমানব’ হয়ে ওঠা যায়। অবশ্য এমন ‘মানব’ তো তিনি বহু আগে থেকে। কিন্তু অতিমানব বিষয়টিকেও রোনালদো যেন দিন দিন অন্য মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছেন। ত্রিশ পর্যন্ত যে খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার গোলসংখ্যা ৪৬৩, সেই খেলোয়াড়েরই ত্রিশ পেরিয়ে চল্লিশ পর্যন্ত গোলসংখ্যা ৪৭০!
ফুটবলারদের ক্যারিয়ারের সেরা সময় ত্রিশের আগে—রোনালদোকে দেখলে বহুল চর্চিত এ কথা আপনার মিথ্যা মনে হবেই। তবে শুধু এটাই নয়, রোনালদোকে দেখে আরও অনেক কিছুই মিথ্যা মনে হয়।
আরও পড়ুনট্রফিতে হাত লিভারপুলের, স্পেন–ইতালি–জার্মানিতে রোমাঞ্চের অপেক্ষা ৫ ঘণ্টা আগেযেমন ধরুন, গোল করার দক্ষতা। চল্লিশেও খেলে যাওয়া একমাত্র খেলোয়াড় নন রোনালদো। তাঁর আগেও এমন দেখা গেছে, বর্তমানেও আছেন। কিন্তু এই বয়সেও রোনালদোর মতো গোলক্ষুধা কজনের আছে? গোলের গন্ধ খুঁজে বেড়ান সব সময়। পরশু রাতেই যেমন সৌদি প্রো লিগে আল রিয়াদের বিপক্ষে তাঁর দল আল নাসরের ২-১ গোলের জয়ে দুটি গোলই তাঁর। এর মধ্যে একটি গোল আবার পুসকাস পুরস্কার পাবে কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষক থেকে সমর্থকদের আলোচনার টেবিল দখল করে নিয়েছে। সেসব আলোচনায় উঠে এসেছে আরও একটি বিষয়। চল্লিশেও দাপিয়ে খেলে যাওয়ার উদাহরণ তো রোনালদো তৈরি করেছেনই, তবে এ মৌসুমে যেটা হচ্ছে, সেটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য।
সৌদি প্রো লিগ, পর্তুগাল জাতীয় দল এবং আল নাসর—চলতি মৌসুমে সব কটি জায়গাতেই রোনালদো সর্বোচ্চ গোলদাতা! এই পরিসংখ্যান চল্লিশে শুধু খেলে যাওয়ার উদাহরণ নয়, এই বয়সেও কীভাবে উৎকর্ষের শীর্ষে থাকা যায় তার জ্বলজ্বলে প্রমাণও।
রোনালদোর পায়ের তুলিতে অবশ্য এমন সব প্রমাণ তাঁর যৌবনে নতুন কিছু মনে হলেও এখন অবিশ্বাস্য লাগাই স্বাভাবিক। যেমন পরশু রাতে আল রিয়াদের বিপক্ষে তাঁর দ্বিতীয় গোলটি। বাঁ প্রান্তে পাসটি দেওয়ার পর রোনালদো গোলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে বক্সের সামনে চলে এসেছিলেন। কারণ, ততক্ষণে সাদিও মানে বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে আল রিয়াদের বক্সে ঢুকে ক্রস করেন, আর বহু বছরের অভিজ্ঞতা থেকে রোনালদো হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন বক্সে বলটি ‘ক্লিয়ার’ করা হলে তাঁর কাছে আসতে পারে এবং ঘটলও ঠিক সেটাই! আল রিয়াদের ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করলেন, বল বাতাসে ভেসে পড়ল ঠিক রোনালদোর পায়ে; ডান পায়ের চোখ জুড়ানো ভলিতে সেটাই দূরের পোস্ট দিয়ে জালে! ধারাভাষ্যকারের কণ্ঠে অবিশ্বাসের সুর, ‘রোনালদো! হাউ অ্যাবাউট দ্যাট! সিম্পলি আনস্টপেবল!’।
আরও পড়ুনএই গায়কের নামেই মেসির নাম রেখেছিলেন তাঁর মা৬ ঘণ্টা আগেচলতি মৌসুমে রোনালদো কিন্তু এমন অপ্রতিরোধ্যই। জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে টানা ৬ ম্যাচে গোল করলেন আর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৫ ম্যাচে করেছেন ৩২ গোল। গোল বানিয়েছেন ৪টি। আল নাসরের হয়ে এ মৌসুমে গোল করায় তাঁর ধারেকাছেও কেউ নেই। দ্বিতীয় সাদিও মানে ৩৯ ম্যাচে ৯ গোল নিয়ে বিস্তর ব্যবধানে পিছিয়ে। রোনালদো গত মৌসুমেও সৌদি প্রো লিগের ক্লাবটির সর্বোচ্চ গোলদাতা।
সৌদি প্রো লিগের এবারের মৌসুমে ২৬ ম্যাচে ২৩ গোল রোনালদোর। ২২ ম্যাচে ২০ গোল নিয়ে দুইয়ে আল শাবাবের ফরোয়ার্ড আবদের রাজ্জাক হামদাল্লাহ। গত মৌসুমেও লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন রোনালদো। এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ এলিটের চলতি মৌসুমে অবশ্য এখনই সর্বোচ্চ গোলদাতার জায়গাটি নিতে পারেননি। ৬ ম্যাচে ৭ গোল নিয়ে তৃতীয় পর্তুগিজ কিংবদন্তি। গুয়াংজু ফরোয়ার্ড জাসির আসানি ও ইয়োকোহামার অ্যান্ডারসন ৯ গোল নিয়ে শীর্ষে। কে জানে মৌসুম শেষে হয়তো দেখা যেতে পারে রোনালদো এশিয়ার চ্যাম্পিয়নস লিগেও গোল করায় শীর্ষে!
সৌদি প্রো লিগে এবারও গোল করায় শীর্ষে রোনালদো.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল র য় দ র গ ল কর
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার
দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।
দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’
তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’
আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা