দিনব্যাপী বাহারি আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উদযাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) বৈশাখী শোভাযাত্রা, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা, জাতীয় কাবাডি খেলা, বউচি খেলা, পুতুলনাচ, নাগরদোলা,  আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দিনব্যাপী মুখর ছিল চবি ক্যাম্পাস।

এ সব লোকজ খেলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্থানীয় জনগণ এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত মানুষদের উৎসুক ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। ভীড় লক্ষ্য করা গেছে দোকানীদের বাহারি পণ্যের মেলায়ও।

আরো পড়ুন:

চবিতে বৈশাখী শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে চবিতে বিক্ষোভ

সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মরণ চত্বরে বৈশাখী শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষ উদযাপন। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের জারুলতলায় এসে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় নববর্ষের আলোচনা অনুষ্ঠান।

বলী খেলায় মেতেছেন চবি শিক্ষার্থীরা

নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড.

মো. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। বিশেষ আলোচক ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু প্রাঙ্গণে দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হয় আকর্ষণীয় বউচি খেলা। মেয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ খেলায় জমে উঠেছিল দর্শকরা।

দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। বিলুপ্তির পথে বসা ঐতিহ্যবাহী এ খেলা দেখে ব্যাপক উল্লসিত ছিলেন দর্শকরা। নির্দিষ্ট স্থানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেকে নিকটবর্তী গাছে উঠেও খেলা উপভোগ করেছিলেন। সকলের চোখমুখ যেন বলছিল- শৈশবের প্রাণের এ খেলা জারি থাকুক সর্বদা।

হাডুডু খেলায় মেতেছেন চবি শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে দুপুর আড়াইটায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা। এতে দুইভাগে ছোট ও বড় বলীরা অংশগ্রহণ করেন।

আজকের আয়োজনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এ খেলা উপভোগ করতে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই উপস্থিত হন দর্শকরা। ঘণ্টাব্যাপী চলমান এ খেলায় দর্শকদের হৈ-হুল্লোড় ছিল চোখে পড়ার মত। তবে কিছু দর্শকদের অভিযোগ, খেলায় পেশাদার অন্তত দুজন বলীকে আনতে পারত চবি কর্তৃপক্ষ।

বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় শুরু হয় নববর্ষের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ইভেন্টে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি এতে প্রধান আকর্ষণ ছিল আমন্ত্রিত ব্যান্ড দল ‘সরলা’র পরিবেশনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান রাফি বলেন, “চব্বিশের নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদমুক্ত এবারের বর্ষবরণ সত্যিই ব্যতিক্রম ছিল। এর আগে এত আয়োজন আর এত মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল বলী খেলা। ঝিমিয়ে পড়া বাংলা নববর্ষকে দারুণভাবে প্রাণবন্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।”

নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “বলীখেলা বাংলার চিরায়িত লোক ঐতিহ্য। বর্ষবরণে নানা আয়োজনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বলীখেলা বাড়তি আমেজ তৈরি করেছে। বলীখেলা ছাড়াও আমরা শোভাযাত্রা, বউচি খেলা, কাবাডি খেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।” 

তিনি বলেন, “চব্বিশের বিপ্লবোত্তর এবারের নববর্ষ সকলের অংশগ্রহণে অনন্য হয়ে উঠেছে।   নিজস্ব সংস্কৃতিতে উজ্জীবিত হওয়াই হোক বাংলা  নববর্ষের অঙ্গিকার।”

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন উপ চ র য নববর ষ বর ষ র বল খ ল উদয প

এছাড়াও পড়ুন:

যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের

কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। 

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে "বাংলা নববর্ষ: ইতিহাস, সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার" শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখা জরুরি। রাজনীতির সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক সঠিকভাবে গড়ে উঠলে কোনো উৎসবই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয় না। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সাংস্কৃতিক চিন্তা-চেতনার যে স্বকীয়তা রয়েছে, তা অক্ষুণ্ন রাখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। বুদ্ধিভিত্তিক ও সচেতন উদ্যোগের মাধ্যমে ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। বাংলা নববর্ষের প্রতি জনগণের গভীর অনুরাগ রয়েছে, তাই এটিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।

সেমিনারে আইআরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন 
আইআরডিসি-এর সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন।

সেমিনারে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছির আহমেদ তার মূল প্রবন্ধে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং নববর্ষ উদযাপনের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার নিয়ে দুই পর্বে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ কেবল বাঙালিদের উৎসব নয়, বরং এটি ধর্ম, গোত্র ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশির একটি সমন্বিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া, বাংলা সনের উৎপত্তি, এর অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মাত্রা নিয়েও তিনি গভীরভাবে আলোকপাত করেন।

এছাড়াও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্‌দীন এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলে এলাহি চৌধুরী প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁরা বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক ও  সামাজিক সংহতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে এর ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। একইসাথে বাংলা নববর্ষের বহুমাত্রিক তাৎপর্য ও এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন।

এসময় সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপহার পেল পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া জেরিনের পরিবার
  • ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে উৎসবকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে: মোহাম্মদ আজম
  • দৃশ্যপটে ‘আনন্দ’, মঙ্গল কোথায়
  • যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের