বউচি খেলায় ঐতিহ্যের স্মৃতি ফিরল চবিতে
Published: 14th, April 2025 GMT
দিনব্যাপী বাহারি আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উদযাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বৈশাখী শোভাযাত্রা, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা, জাতীয় কাবাডি খেলা, বউচি খেলা, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দিনব্যাপী মুখর ছিল চবি ক্যাম্পাস।
এ সব লোকজ খেলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্থানীয় জনগণ এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত মানুষদের উৎসুক ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। ভীড় লক্ষ্য করা গেছে দোকানীদের বাহারি পণ্যের মেলায়ও।
আরো পড়ুন:
চবিতে বৈশাখী শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে চবিতে বিক্ষোভ
সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মরণ চত্বরে বৈশাখী শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষ উদযাপন। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের জারুলতলায় এসে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় নববর্ষের আলোচনা অনুষ্ঠান।
বলী খেলায় মেতেছেন চবি শিক্ষার্থীরা
নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড.
বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু প্রাঙ্গণে দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হয় আকর্ষণীয় বউচি খেলা। মেয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ খেলায় জমে উঠেছিল দর্শকরা।
দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। বিলুপ্তির পথে বসা ঐতিহ্যবাহী এ খেলা দেখে ব্যাপক উল্লসিত ছিলেন দর্শকরা। নির্দিষ্ট স্থানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেকে নিকটবর্তী গাছে উঠেও খেলা উপভোগ করেছিলেন। সকলের চোখমুখ যেন বলছিল- শৈশবের প্রাণের এ খেলা জারি থাকুক সর্বদা।
হাডুডু খেলায় মেতেছেন চবি শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে দুপুর আড়াইটায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা। এতে দুইভাগে ছোট ও বড় বলীরা অংশগ্রহণ করেন।
আজকের আয়োজনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এ খেলা উপভোগ করতে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই উপস্থিত হন দর্শকরা। ঘণ্টাব্যাপী চলমান এ খেলায় দর্শকদের হৈ-হুল্লোড় ছিল চোখে পড়ার মত। তবে কিছু দর্শকদের অভিযোগ, খেলায় পেশাদার অন্তত দুজন বলীকে আনতে পারত চবি কর্তৃপক্ষ।
বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় শুরু হয় নববর্ষের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ইভেন্টে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি এতে প্রধান আকর্ষণ ছিল আমন্ত্রিত ব্যান্ড দল ‘সরলা’র পরিবেশনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান রাফি বলেন, “চব্বিশের নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদমুক্ত এবারের বর্ষবরণ সত্যিই ব্যতিক্রম ছিল। এর আগে এত আয়োজন আর এত মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল বলী খেলা। ঝিমিয়ে পড়া বাংলা নববর্ষকে দারুণভাবে প্রাণবন্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।”
নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “বলীখেলা বাংলার চিরায়িত লোক ঐতিহ্য। বর্ষবরণে নানা আয়োজনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বলীখেলা বাড়তি আমেজ তৈরি করেছে। বলীখেলা ছাড়াও আমরা শোভাযাত্রা, বউচি খেলা, কাবাডি খেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।”
তিনি বলেন, “চব্বিশের বিপ্লবোত্তর এবারের নববর্ষ সকলের অংশগ্রহণে অনন্য হয়ে উঠেছে। নিজস্ব সংস্কৃতিতে উজ্জীবিত হওয়াই হোক বাংলা নববর্ষের অঙ্গিকার।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন উপ চ র য নববর ষ বর ষ র বল খ ল উদয প
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।