নদী মাতৃক বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ এক সময় ছিল ঘড়িয়ালের আপন ঠিকানা। বর্তমানে এই জলজ সরীসৃপ প্রাণীটি মহাবিপন্ন। প্রজনন হার কমে যাওয়ায় একপ্রকার বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে ঘড়িয়াল। এমন সংকটময় প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গড়ে তোলা হয়েছে ঘড়িয়ালের প্রজনন কেন্দ্র। সামাজিক বন বিভাগের রাজশাহীর পবা নার্সারির একটি পুকুরে এটি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে আনা একটি পুরুষ ও একটি নারী ঘড়িয়াল অবমুক্ত করা হয় এই প্রজনন কেন্দ্রে। ঘড়িয়াল দুইটি অবমুক্ত করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী। 

তিনি বলেন, “নদী দূষণ, নাব্যতা হ্রাস, অতিরিক্ত মাছ আহরণ, অবৈধ শিকার, পাচার, ডিম নষ্ট হওয়া ও খাদ্যের সংকটের কারণে ঘড়িয়ালের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটে। এসব কারণেই আজ তারা বিলুপ্তির পথে। রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে যেন এ প্রাণীর অস্তিত্ব টিকে থাকে।”

আরো পড়ুন:

১৫ সাঁতারুর কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি

শামুক সংগ্রহে গিয়ে নদীতে ২ জনের মৃত্যু

ঘড়িয়াল অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, সামাজিক বন অঞ্চল বগুড়ার বন সংরক্ষক মুহাম্মদ সুবেদার ইসলাম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড.

কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ. এম সালেহ রেজা, আইইউসিএনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এবিএম সরোয়ার আলম এবং সেভ দ্য ন্যাচার অ্যান্ড লাইফ, রাজশাহীর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

ঘড়িয়াল মূলত খুবই শান্ত ও উপকারী জলজ প্রাণী। এটি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর তালিকাভুক্ত একটি রক্ষিত প্রজাতি। আন্তর্জাতিকভাবে এটি সাইটিস-এর অ্যাপেন্ডিক্স-১ ভুক্ত প্রাণী এবং বর্তমানে “মহাবিপন্ন” হিসেবে চিহ্নিত। এর ইংরেজি নাম Gharial এবং বৈজ্ঞানিক নাম Gavialis gangeticus।

ঘড়িয়াল সংরক্ষণে এই উদ্যোগ নতুন নয়। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট রাজশাহীর শহীদ এএইচএ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার একটি পুকুরে ঘড়িয়ালের প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় চিড়িয়াখানায় দুইটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ছিল, যেগুলো আগে জেলেদের জালে ধরা পড়ে উদ্ধার করা হয়। এর একটিকে পাঠানো হয় ঢাকা চিড়িয়াখানায়, যার নাম রাখা হয় ‘যমুনা’। ঢাকায় ছিল চারটি পুরুষ ঘড়িয়াল। অন্যদিকে ঢাকা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল এনে রাজশাহীর পুকুরে ছাড়া হয়, তার নাম দেওয়া হয় ‘গড়াই’। আর রাজশাহীতে আগে থেকেই থাকা স্ত্রী ঘড়িয়ালটির নাম হয় ‘পদ্মা’।

এই আন্তঃচিড়িয়াখানা বিনিময়ের মাধ্যমে ‘যমুনা’ ঢাকা চিড়িয়াখানায় তিনটি পুরুষ সঙ্গী পায়, আর রাজশাহীর ‘পদ্মা’ পায় ‘গড়াই’-কে। তবে আট বছরেও তাদের কোনো বাচ্চা হয়নি, কারণ ছিল প্রজননের অনুপযোগী পরিবেশ। তাই এবার আইইউসিএন এবং সামাজিক বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে রাজশাহীতে গড়ে তোলা হলো ঘড়িয়ালের উপযোগী প্রজনন কেন্দ্র।

নতুন ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র ঘিরে নতুন করে আশার আলো দেখছেন প্রাণিবিজ্ঞানীরা ও পরিবেশবাদীরা। যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তবে ঘড়িয়াল আবার ফিরতে পারে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে—পদ্মা-মেঘনায়।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ প রজনন ক ন দ র ল প রজনন

এছাড়াও পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কাকাপো একটি ব্যতিক্রমী পাখির নাম। এই পাখি চেনা পরিচিত পাখির মতো আচরণ করে না। ‘‘কাকাপোর আচারণ মানব শিশুর মতো।’’–কাকাপো বিশেষজ্ঞ ডা. রাগবী এই মন্তব্যই করেছেন। 

নিউজিল্যান্ডের একটি অনন্য এবং অত্যন্ত বিপন্ন তোতাপাখি হলো কাকাপো। এটি ‘আউল প্যারট’ নামে পরিচিত। এটি হলো বিশ্বের একমাত্র তোতাপাখি যা দূরে উড়ে যেতে পারে না, তবে গাছে চড়তে পারে। এর ডানা তুলনামূলকভাবে ছোট এবং ওড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পেশী সংযুক্ত করার ক্ষমতা নেই। 

আরো পড়ুন:

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

কাকাপো একটি নিশাচর পাখি, দিনের বেলা ঘুমায়। তোতাপাখির ভেতর কাকাপো বিশ্বের সবচেয়ে ভারী । একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখির ওজন ৪ কেজি (৮.৮ পাউন্ড) পর্যন্ত হতে পারে।

কাকাপোর পালক হলুদাভ সবুজ রঙের হয়। এই পাখি বনের মধ্যে ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। এদের মুখের পালক চাকতির মতো সাজানো থাকে, যে কারণে একে পেঁচা-তোতাও বলা হয়। এই পাখির প্রিয় খাবার রিমু বেরি।

কাকাপো প্রতি দুই থেকে চার বছর অন্তর প্রজনন করে। এর  আবাসস্থল হলো নিউজিল্যান্ডে। বিপন্ন হতে যাওয়া এই পাখিকে বর্তমানে শিকারী-মুক্ত কয়েকটি দ্বীপে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এই পাখি একাকী বাস করতে পারে।

পুরুষ কাকাপো প্রজনন ঋতুতে সঙ্গীকে আকর্ষণ করার জন্য এক ধরনের গম্ভীর ‘বুমিং’ (booming) শব্দ করে। স্ত্রী কাকাপো একবারে সাধারণত ১ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফুটে বাচ্চা বের হতে প্রায় ৩০ দিন সময় লাগে এবং এই সময়ে মা কাকাপো-ই ডিমে তা দেয় ও বাচ্চার যত্ন নেয়।

মাউরি লোক সাহিত্যে এবং বিশ্বাসের সাথে কাকাপো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তারা বিশ্বাস করে কাকাপো পাখি ভবিষ্যত বলতে পারে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একা বাস করতে পারে যে পাখি