বিডা আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে দেখলাম, অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠানই এ দেশে আসার কথা ভাবছে। বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরইএ) এবং সোলার পাওয়ার ইউরোপের সঙ্গে দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিতে উন্নয়নের জন্য এমওইউও স্বাক্ষরিত হয়। তারা বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দ্রুত বিকাশের জন্য নবায়নযুক্ত জ্বালানি আইনের খোঁজ নিচ্ছিল। সরকার অবশ্য গত ফেব্রুয়ারিতে একটা খসড়া প্রস্তুত করে এবং বিভিন্ন অংশীদারের মতামতের জন্য প্রেরণ করে। সরকার সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য হলেও এই আইনকে টেকসই করতে হলে অনেক কিছু সংশোধন, পরিবর্ধন এবং পরিমার্জনের দরকার আছে।

এই প্রস্তাবিত আইনে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) হাতে পুরো নবায়নযোগ্য জ্বালানির সব ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইনের বেশির ভাগ ধারাতেই ‘করবে’, ‘হবে’, ‘দেখবে’ এ রকম ভবিষ্যতের ধারা থাকায় এবং যা কোনো সময়সীমা দিয়ে নির্দিষ্ট করে না দেওয়ায় এবং কোথাও জবাবদিহির সুযোগ না থাকায় কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তার ধারণা পাওয়া যায় না।

প্রথমেই এই আইনকে আরও ব্যাপক করে ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টারপ্ল্যান (আইইপিএমপি) এবং ক্লাইমেট পলিসির সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। যদি না হয়, তাহলে আবারও সব আলাদাভাবে থাকবে এবং দেশের রিসোর্স নষ্ট হবে।

টেকসই এনার্জি উন্নয়ন ফান্ড নিয়ে বলা থাকলেও তা কীভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে বেসরকারি খাত পেতে পারে বা কোন কোন খাতে পারে, তা বলা নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য আসল সমস্যা ঋণের সহজলভ্যতা। বাংলাদেশে ব্যাংক, ইডকল এ ব্যাপারে কাজ করলেও তাদের থেকে ঋণ পেতে গেলে অনেক সময় লাগে। এদিকে বিদেশি ঋণ কম সুদে হলেও তা পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। এ বিষয়টা স্রেডার দায়িত্ব নিয়ে ঠিক করতে হবে এবং পলিসিতে এই দায়িত্বের কথা লেখা থাকতে হবে। 

এ দেশে আইপিপি সোলার যারা করে, তাদের জন্য আর্থিক সুবিধা দেওয়া আছে, কিন্তু দেশের প্রধান খাত হচ্ছে ছাদে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, সেখানে কোনো প্রণোদনাই নেই। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই এই প্রণোদনা দেওয়া হয়

এই আইনের সফলতার জন্য বেসরকারি খাতের একটা বড় ভূমিকা থাকতে হবে। কিন্তু এই পার্টনারশিপের কথা বলা হয়নি। এদিকে প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টের কথা বলা হলেও তা কতটুকু এবং কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, লেখা হয়নি কোথাও।

এখানে দেশীয় উৎপাদকদের জন্য বিশেষ সুবিধা যোগ করা উচিত। বাংলাদেশে এর আগে সাতটা সোলার প্যানেল ফ্যাক্টরি হয়েছিল। সরকারের সুবিধা না পাওয়ার জন্য একটাও তখন চলতে পারেনি। এখন অবশ্য একটা চালু হয়েছে। এটা যদি বাস্তবায়ন করা যায়, বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে যাবে না এবং কর্মসংস্থানও বাড়বে। এ ছাড়া দেশে ইনভার্টার তৈরি হয় না। এমন কোনো কোম্পানি ইনভার্টার এই দেশে যেন নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার ছাড়া ব্যবসা করতে না পারে, সে ব্যাপারে আইন দরকার। এ ছাড়া ইনভার্টারের ওপর অতিরিক্ত ট্যাক্স নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে অন্তরায়।

মিনি গ্রিড এবং মাইক্রো গ্রিড সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রত্যন্ত গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে, স্রেডার সে বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। অফ গ্রিড এলাকার জন্য এলাকাভিত্তিক এনার্জি স্টোরেজ সুবিধাসহ বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে হবে। এ ছাড়া নতুন প্রযুক্তি যেমন বিল্ডিং ইন্টিগ্রেটেড ফটোভলটেইক (বিআইপিভি) এবং ফ্লোটিং সোলারকে অনুপ্রাণিত করার জন্য নীতিমালা করতে হবে।

বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আমাদের সুযোগ থাকলেও প্রস্তাবিত এই পলিসিতে বেশি কিছু বলা নেই। বায়ুবিদ্যুৎ নিয়ে আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যা নিয়ে সম্ভবত সরকার কাজও করছে। এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (ইএসএস) আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ টেকনোলজি। শুধু বিদ্যুতের দাম কমানো না, এটা গ্রিড স্ট্যাবল করতেও কাজে লাগবে।

নতুন নিট মিটারিং গাইডলাইন করতে হবে, তা অবশ্যই সবার মতামত নিয়ে করা উচিত। গ্রিডের সঙ্গে কানেকশনের ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে লেখা থাকতে হবে। আমরা যারা রুফটপ সোলার নিয়ে কাজ করি, তাদের গ্রিড কানেকশনের জন্য বেশ ভুগতে হয়। ইউটিলিটি সার্ভিস প্রোভাইডাররা এই কাজে খুব সহযোগিতাপরায়ণ নয়।

আমাদের কোয়ালিটি কন্ট্রোল স্রেডা দেখবে বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে বেসরকারি মানসম্পন্ন টেস্টিং পরীক্ষাগার ছাড়া তা সম্ভব নয়। যা করতে হলে পিপিপির মাধ্যমেই করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে গবেষণা, উন্নয়ন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ করতে হবে। স্কুল থেকেই সবাইকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপযোগিতা নিয়ে সচেতন করতে হবে।

এ পলিসিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির হাবের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কীভাবে বা কে বাস্তবায়ন করবে বলা নেই। জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে অধিগ্রহণের জন্য এত বেশি অনুমতি নেওয়া লাগে, তা কমিয়ে অল্প কিছু অধিদপ্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে হবে।

এ দেশে আইপিপি সোলার যারা করে, তাদের জন্য আর্থিক সুবিধা দেওয়া আছে, কিন্তু দেশের প্রধান খাত হচ্ছে ছাদে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, সেখানে কোনো প্রণোদনাই নেই। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই এই প্রণোদনা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে কার্বন ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আসার সুযোগ আছে, তা ভারতীয় কনসালট্যান্ট দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। তা দেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

পরিশেষে ২০৩০–এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মোট বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১–এর মধ্যে ৪০ শতাংশ করতে হলে সব বিদ্যুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে সরকারি আদেশ প্রদান করতে হবে। প্রতিবছর বেসরকারি খাতের এবং একাডেমিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটা রিভিউ কমিটি করে পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব সরক র এই প র র জন য প রস ত ন করত ট কসই

এছাড়াও পড়ুন:

সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী শহীদ মিনার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে মিছিল করছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আসলাম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা ‘দুর্দিনের আসলাম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ‘আসলাম ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, আসলাম চৌধুরী দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তিনি দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে কারাবন্দী হন। দীর্ঘ সময় তিনি জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। অথচ এখন সুসময়ে দল তাঁকে বঞ্চিত করছে। তাঁরা দলের এ সিদ্ধান্ত মানেন না। তাই প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. মোরসালীন প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা যে যাঁর জায়গা থেকে মহাসড়কে উঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁরা অন্তত সীতাকুণ্ডের ৩০টি স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

ঘোষিত প্রার্থী কাজী মুহাম্মদ সালাউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাঁকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।

ফৌজদারহাট পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের মাথা, ফৌজদারহাট, জলিল গেইট, ভাটিয়ারী, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ রয়েছে। ফলে উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ। পুলিশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ