বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে তখন ব্যস্ত সারাদেশ। চলছে শোভাযাত্রা, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। কিন্তু এ দিনে একটি নবজাত শিশুকে ঘিরে আরও আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে কুমিল্লায় আহসান হাবিব তুষার ও শামীমা আক্তার শান্তা দম্পতির ঘরে, তার কাছে যেন বাইরের সব আয়োজন ফিকে। পহেলা বৈশাখের সকালেই তাদের কোলজুড়ে এসেছে দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। শিশুটিকে ঘিরে আনন্দাশ্রু যেন বাঁধ মানছে না বাবা-মার। দাদার দেওয়া নামে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে সুফিয়া আহসান রোয়া। তুষার ও শান্তার চাওয়া, তাদের দুই মেয়ে প্রথমে হোক ভালো মানুষ, পরে একজন চিকিৎসক।

গত সোমবার ভোর সাড়ে ৬টায় দেবিদ্বার উপজেলা সদরের সেন্ট্রাল হসপিটালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন শান্তা। এ হাসপাতালটি তুষারের পারিবারিক যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। এ দম্পতির ৯ বছর বয়সী আরেকটি কন্যাসন্তান আছে। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স শেষ করা তুষার পেশায় একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় পরিবেশক। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা তাঁর স্ত্রী শান্তা প্যাথলজি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। তুষার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী মো.

সেলিমের ছেলে। শান্তা একই উপজেলার বাঙ্গুরী এলাকার বাসিন্দা। তাদের তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক বিয়েতে পরিণতি পায় ২০১৪ সালে। বিয়ের পর ২০১৬ সালে দেবিদ্বার সেন্ট্রাল হসপিটালেই তাদের প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম। এবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে ঘর আলো করে এসেছে দ্বিতীয় সন্তান রোয়া।
 
তুষার বলেন, নববর্ষের কাছাকাছি সময়ে আমার স্ত্রীর প্রসবের সময় ছিল। কিন্তু পহেলা বৈশাখের বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিনেই সিজার করতে আমরা চিকিৎসকের মতামত নিয়েছিলাম। চিকিৎসকও সিজারিয়ানের জন্য নববর্ষকেই বেছে নেন। এ দিনে সন্তানের জন্ম হওয়ায় আমরা খুব খুশি। ওর জন্মদিন উদযাপনে কাউকে আর তারিখ মনে করিয়ে দিতে হবে না। 

তুষার আরও বলেন, আমাদের প্রথম বাচ্চা হয়েছে সিজারিয়ানের মাধ্যমে। তাই দ্বিতীয় বাচ্চার ক্ষেত্রেও চিকিৎসক স্বাভাবিক প্রসবের ঝুঁকি নেননি। শান্তার গাইনি সার্জন ছিলেন আমার চাচি ডা. হনুফা আক্তার। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে আমাদের বাসা হওয়ায় নিয়মিত ডা. হনুফার তত্ত্বাবধানে আমার স্ত্রী চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতেন। তবু মনে শঙ্কা তো ছিলই। অপারেশন থিয়েটারের সামনে মা-বাবা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। মনে মনে আল্লাহকে ডেকেছি, যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। আমার মা যখন বাচ্চা কোলে নিয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হন, তখন সব দুশ্চিন্তা দূর হয়। বাচ্চার জন্য নতুন কাপড়, তোয়ালে উপহার দিয়েছে আমার বোনসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। 

শান্তা বলেন, স্থানীয় রীতি অনুসারে আমি সন্তান সম্ভবা হওয়ার ৯ মাসের মাথায় আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে বিশেষ খাবার ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এখন বাচ্চার জন্য দোয়া কামনায় সাত দিন বয়সের সময় আবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। 

হাসপাতালের আবাসিক গাইনি সার্জন হনুফা আক্তার বলেন, প্রসূতি শান্তা আমার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। যেন কোনো ঝুঁকিতে না পড়তে হয় এবং গর্ভের সন্তান যেন ভালো থাকে এ বিষয়ে শান্তা ও তুষার আগে থেকেই চেম্বারে এসে নিয়মিত ফলোআপ করতেন। এ ক্ষেত্রে স্বামীদের যতটুকু সচেতন থাকা দরকার, তুষার তার শতভাগ ছিলেন। নবজাতকের ওজন সাধারণত আড়াই কেজি হলেও সমস্যা নেই। শান্তা ও তুষারের মেয়ের ওজন হয়েছে ২ কেজি ৯০০ গ্রাম; যা একজন সুস্থ নবজাতকের জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে মা ও সন্তান সুস্থ আছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প রথম নববর ষ ন র জন র জন ম র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ