সুনামগঞ্জের সব বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পরিবহন ও মজুত নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রশাসন। এতে জানানো হয়, জেলায় থাকা কোনো বালুমহাল ১৪৩২ বাংলা সনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়নি। তাই সোমবার পহেলা বৈশাখ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে।
রোববার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সুনামগঞ্জে অবস্থানরত সেনাবাহিনী ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিজিবি ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও জেলা পুলিশ সুপারকে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা ট্রাক মালিক ও শ্রমিক সমিতিকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। যেহেতু সুনামগঞ্জ জেলার কোনো বালুমহাল নতুন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়নি, তাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পরিবহন ও মজুত বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সড়ক পথে টহল জোরদারের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
গত বছর যাদুকাটা নদীর বালুমহালগুলো ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে ২৭ ফেব্রুয়ারি ইজারা কার্যক্রম স্থগিত ও মহাল বিলুপ্ত ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষ থেকে তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ ১৩ ব্যক্তিকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। অবাধে বালু উত্তোলন বন্ধ, নদী ও এলাকার প্রকৃতি-পরিবেশ, মানুষের বাড়িঘর রক্ষার স্বার্থে প্রতিকার চেয়ে এই নোটিশ প্রদান করে বেলা।
জেলার সর্ববৃহৎ বালুমহাল তাহিরপুরের যাদুকাটায় ইজারাসীমা অতিক্রম করে চলেছে পরিবেশ বিধ্বংসী বোমা মেশিনের তাণ্ডব। কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজার ও সেইভ মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। সনাতনী পদ্ধতিতেও তীর কাটা হয়েছে। এতে বিলীন হচ্ছে রাস্তাঘাট, মানুষের ঘরবাড়ি ও সরকারি খাসজমি।
পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য, দুর্গম এলাকা হওয়ায় অভিযানের খবর আগেভাগে পেয়ে সরে যায় দুর্বৃত্তরা। এ কারণে বালু লুটপাটের সঙ্গে জড়িত মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। গত কয়েক বছর ধরে ইজারার দোহাই দিয়ে নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী তাণ্ডব চলছে। এ কারণে নদীর তীরবর্তী কাঁচা-পাকা রাস্তা, ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীতে। নদীর তীরের সরকারি খাসজমির দখলদার এবং কিছু রেকর্ডীয় জমির মালিকরাও নদীতে বালু লুটপাটের অংশীদার।
সরেজমিন এপ্রিলের ৬ তারিখে ঘাগড়া গ্রাম তীরবর্তী যাদুকাটা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, নদীর ইজারাকৃত অংশের বাইরে নদীর তীর থেকে শতাধিক শ্রমিক বেলচা দিয়ে নৌকায় বালু তুলছেন। রোববার প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ফলে যাদুকাটায় বালুখেকোদের দীর্ঘদিনের তাণ্ডব বন্ধ হবে বলে আসা করছেন স্থানীয়রা।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ