সব মহাল থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা
Published: 15th, April 2025 GMT
সুনামগঞ্জের সব বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পরিবহন ও মজুত নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রশাসন। এতে জানানো হয়, জেলায় থাকা কোনো বালুমহাল ১৪৩২ বাংলা সনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়নি। তাই সোমবার পহেলা বৈশাখ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে।
রোববার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সুনামগঞ্জে অবস্থানরত সেনাবাহিনী ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিজিবি ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও জেলা পুলিশ সুপারকে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা ট্রাক মালিক ও শ্রমিক সমিতিকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। যেহেতু সুনামগঞ্জ জেলার কোনো বালুমহাল নতুন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়নি, তাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পরিবহন ও মজুত বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সড়ক পথে টহল জোরদারের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
গত বছর যাদুকাটা নদীর বালুমহালগুলো ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে ২৭ ফেব্রুয়ারি ইজারা কার্যক্রম স্থগিত ও মহাল বিলুপ্ত ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষ থেকে তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ ১৩ ব্যক্তিকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। অবাধে বালু উত্তোলন বন্ধ, নদী ও এলাকার প্রকৃতি-পরিবেশ, মানুষের বাড়িঘর রক্ষার স্বার্থে প্রতিকার চেয়ে এই নোটিশ প্রদান করে বেলা।
জেলার সর্ববৃহৎ বালুমহাল তাহিরপুরের যাদুকাটায় ইজারাসীমা অতিক্রম করে চলেছে পরিবেশ বিধ্বংসী বোমা মেশিনের তাণ্ডব। কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজার ও সেইভ মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। সনাতনী পদ্ধতিতেও তীর কাটা হয়েছে। এতে বিলীন হচ্ছে রাস্তাঘাট, মানুষের ঘরবাড়ি ও সরকারি খাসজমি।
পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য, দুর্গম এলাকা হওয়ায় অভিযানের খবর আগেভাগে পেয়ে সরে যায় দুর্বৃত্তরা। এ কারণে বালু লুটপাটের সঙ্গে জড়িত মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। গত কয়েক বছর ধরে ইজারার দোহাই দিয়ে নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী তাণ্ডব চলছে। এ কারণে নদীর তীরবর্তী কাঁচা-পাকা রাস্তা, ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীতে। নদীর তীরের সরকারি খাসজমির দখলদার এবং কিছু রেকর্ডীয় জমির মালিকরাও নদীতে বালু লুটপাটের অংশীদার।
সরেজমিন এপ্রিলের ৬ তারিখে ঘাগড়া গ্রাম তীরবর্তী যাদুকাটা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, নদীর ইজারাকৃত অংশের বাইরে নদীর তীর থেকে শতাধিক শ্রমিক বেলচা দিয়ে নৌকায় বালু তুলছেন। রোববার প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ফলে যাদুকাটায় বালুখেকোদের দীর্ঘদিনের তাণ্ডব বন্ধ হবে বলে আসা করছেন স্থানীয়রা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।