মাত্র সপ্তাহখানেক আগে বাংলাদেশে যে বড় আকারের বিনিয়োগ সম্মেলনটি হয়ে গেল, তাতে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি মিলেছে বলে জানিয়েছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। এটা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক খবর।
কিন্তু এর সঙ্গে দুঃসংবাদটি হলো নতুন শিল্পকারখানার জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এ সিদ্ধান্ত এমন সময়ে নেওয়া হলো, যখন অর্থনীতির গতি মন্থর, ব্যাংকঋণের সুদের চড়া হার এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে যোগ হয়েছে ডলার–সংকট।
বিইআরসি রোববার নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ৩৩ শতাংশ। তারা বলেছে, প্রতিশ্রুত শিল্প গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে বাড়তি দাম দিতে হবে। অন্যদিকে পুরোনো শিল্পকারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে গ্যাসের বাড়তি দাম আরোপ হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈষম্যমূলক এই দামের কারণে নতুন বিনিয়োগকারীরা অসম প্রতিযোগিতায় পড়বেন এবং বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবেন। গ্যাসের দাম নির্ধারণের এই প্রক্রিয়া শিল্পের জন্য বৈষম্য তৈরি করবে। একই খাতে পুরোনো কারখানা কম দামে গ্যাস পাবে আর নতুনদের বেশি দামে গ্যাস কিনতে হবে, এটা কী ধরনের নীতি?
বাংলাদেশে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ সব সময়ই তুলনামূলক কম ছিল, সাম্প্রতিককালে সেটা আরও কমছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগের হার ছিল ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমে ২৩ দশমিক ৯৬ শতাংশে নেমেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম ছয় মাসে মাত্র ২১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণের প্রবৃদ্ধি গত ফেব্রুয়ারিতে যে পর্যায়ে নেমেছে, তা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন (৬ দশমিক ৮২ শতাংশ)। গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৫ শতাংশের মতো। শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ বিতরণও কমছে। বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাওয়া শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতারই ইঙ্গিত।
বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশি–বিদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল, তার অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে। সব দেশেই নতুন বিনিয়োগকারীদের বাড়তি প্রণোদনা দিয়ে থাকে। কিন্তু গ্যাসের দামের ক্ষেত্রে করা হলো উল্টো।
জনমনে এই ধারণা পোক্ত হয়েছে যে আইএমএফএর ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবেই সরকার জ্বালানি পণ্যের ওপর থেকে ভর্তুকি কমিয়ে দিচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে আইএমএফের ঋণ আমাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু ভর্তুকি কমানোর কারণে জনজীবনে যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, সেটাও উপেক্ষা করা যাবে না। সরকার এমন সময়ে গ্যাসের দাম বাড়াল, যখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ নতুন কর ধার্য করেছে। তিন মাসের জন্য এই সিদ্ধান্ত স্থগিত আছে, এটা সাময়িক স্বস্তি হলেও ভবিষ্যতে নাটকীয় পরিবর্তন আশা করা যায় না।
জ্বালানি খাতে ঘাটতির কথা বলে এর আগেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এই খাতে যে সিস্টেম লসের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় ও চুরি হচ্ছে, সেদিকে সরকারের নজর নেই। গ্যাস খাতে বর্তমানে কারিগরি ক্ষতির হার প্রায় ৩ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে, কারিগরি ক্ষতি শূন্য দশমিক ২০ থেকে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে কারিগরি ক্ষতি কমিয়ে এনেও সরকার ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পারে। গ্যাসের দাম যদি বাড়াতেই হয়, সেটা করতে হবে সহনীয় পর্যায়ে। এক লাফ ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব সরক র র জন য দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল