গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নেতাকে বাসা থেকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী
Published: 16th, April 2025 GMT
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য সেলিম মাহমুদকে তাঁর বাসা থেকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার রেলস্টেশন এলাকার বাড়ি থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
সেলিম মাহমুদের স্ত্রী বিথী মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, রাত একটার দিকে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের বাড়ির গেট ভেঙে ঘরে ঢুকে সেলিম মাহমুদকে তুলে নিয়ে যান। এ সময় বাসা থেকে তিনটি মুঠোফোন নিয়ে যান এবং তাঁদের নবম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে ওয়াজিদ মাহমুদকে মারধর করেন। তাঁর স্বামী উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন বলে জানান তিনি।
বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক নিখিল দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেলিম মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করছেন। যেখানেই শ্রমিকেরা সমস্যায় পড়েন, সেলিম মাহমুদ তাঁদের পাশে দাঁড়ান। রবিনটেক্স কারখানায় ইউনিয়ন গঠনের জন্য গত দেড় বছর আগে ওই কারখানার শ্রমিকেরা শ্রম আদালতে কমিটি জমা দিয়েছিল। এটা বানচাল করার জন্য কয়েক দিনে ইউনিয়ন নেতাসহ ২২ জন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। শ্রমিকদের আটকের প্রতিবাদ করার কারণেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। যে মুজিববাদের বিরুদ্ধে এত কথা হচ্ছে, অথচ মুজিবের আমলের আইন দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। এটা কী অসংগতি নয়। আমাদের প্রশ্ন, শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো কি অপরাধ? আমরা তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’
নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মেহেদী ইসমাইল বলেন, রূপগঞ্জের পোশাক কারখানা রবিনটেক্সে শ্রমিক আন্দোলনের উসকানিদাতা হিসেবে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী সেলিম মাহমুদকে আটক করে। পরে তাঁকে রূপগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রবিনটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় ছাঁটাই বন্ধের দাবিতে শ্রমিকেরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। এ ঘটনায় হামলা, ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে রূপগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র পগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।