কুমিল্লায় মহাসড়ক অবরোধ করে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
Published: 16th, April 2025 GMT
ছয়দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা কোটবাড়িতে মহাসড়ক অবরোধ করেছে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কুমিল্লা বিভিন্ন এলাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বেলা পৌনে ১২ টায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী মহাসড়কে সমবেত হয়। শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে বসে পড়ে। এতে সড়কের উভয় লেনে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে অবরোধের খবর পেয়ে হাইওয়ে ও থানা পুলিশ অবরোধ স্থলে আসে। পরে সেনাবাহিনী এসে শিক্ষার্থীদের সড়িয়ে দেয়। তবে দুপুর পৌনো ২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের দুই লেনে অন্তত ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট ছিল।
শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবী পরিবর্তন ও মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরীচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদী মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিক ভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) এর পদ চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষার্থী সালেহ আকরাম বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের এসব দাবী যৌক্তিক। তাই এসব দাবি না মানলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
আজ দুপুর পৌনে ২টার দিকে ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে ৬৮% কারখানা
দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৩৮৫টি কারখানার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ন্যূনতম মজুরি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেছে ৬৮ শতাংশ কারখানা। বাকি ৩২ শতাংশ বিভিন্ন কারণে সরকারের সর্বশেষ ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এসব কারখানার মধ্যে ২২ শতাংশ আগের চেয়ে মজুরি বাড়িয়েছে।
সাসটেইনেবল টেক্সটাইল ইনিশিয়েটিভ: টুগেদার ফর চেঞ্জ (স্টিচ) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এ গবেষণা করে। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে জরিপ করা হয়। স্টিচ একটি বহুদেশভিত্তিক কর্মসূচি, যা তৈরি পোশাক এবং বস্ত্র খাতের সরবরাহ চেইনে থাকা শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করে। নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ, মনডিয়া এফএনভি এবং ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন।
শ্রমিক সংখ্যা বিবেচনায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের হার বেশি। জরিপে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ১ হাজার ১১৩ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি পান বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) থাকা সব কারখানা এবং ইপিজেডের বাইরে থাকা বড় কারখানাগুলো ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে। যেসব কারখানা বাস্তবায়ন করেছে, তাদের ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য।
জরিপের ফল নিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শ্রমিক সংগঠন, উদ্যোক্তা, সরকার ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন। তারা পোশাকশিল্পের ব্যয়, শ্রমিকদের জীবনমান, তাদের ব্যয়ের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও গবেষণার সুপারিশ করেন। তারা ন্যূনতম মজুরির ওপর শিল্পের অংশীজন নিয়ে সংলাপেরও পরামর্শ দেন।
জরিপে ঢাকার ১৩৫টি, গাজীপুরের ১২৮টি, নারায়ণগঞ্জের ৭১টি, চট্টগ্রামের ৪৬টি, ময়মনসিংহের ৪টি এবং কুমিল্লার ১টি কারখানাকে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়। শ্রমিকদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী এবং ৪০ শতাংশ পুরুষ। শ্রমিকের বাইরে সরকার, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, উদ্যোক্তা, বাণিজ্য সংগঠন এবং নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তৈরি পোশাক খাতের ওপর সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ইপিজেডের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করে। ইপিজেডের বাইরের কারখানার জন্য নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, সব গ্রেডে আলাদা ন্যূনতম মজুরি রয়েছে। তৈরি পোশাক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প খাত। এ খাতে শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি, যার অর্ধেকের বেশি নারী। কারখানার সংখ্যা চার হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য।
গবেষণার ফলাফলের বিষয়ে এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের পরিচালক (কর্মসূচি ও গবেষণা) মুনীর উদ্দীন শামীম সমকালকে বলেন, নমুনাভুক্ত যেসব কারখানা ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি তার বেশির ভাগই মাঝারি বা ছোট কারখানা। অন্যদিকে ইপিজেডভুক্ত এবং বড় কারখানার বেশির ভাগ অতি অল্পসময়ে বাস্তবায়ন শুরু করতে পেরেছে। বাস্তবায়নকারী কারখানার ৮০ শতাংশ বিজিএমইএ অথবা বিকেএমইএর সদস্য। এর মানে তারা সরাসরি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। এ প্রবণতার একটি অর্থ হচ্ছে– কারখানাগুলোর বিদ্যমান সক্ষমতা মজুরি বাস্তবায়নে একটি বড় ফ্যাক্টর।
তিনি বলেন, গবেষণায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো–পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, মজুরি বাড়ার হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্রেতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পণ্যের দাম না বাড়ানো, প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যবস্থা না থাকা, সরকারি সহযোগিতার অভাব, কিছু ক্ষেত্রে মালিকদের অনিচ্ছা, নিয়মিত ও ধারাবাহিক কার্যাদেশ না থাকা ইত্যাদি। অনেকে বলেছেন, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সেবা খাতে ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। অংশীজনরা আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনায় এমন মত এসেছে যে, ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে তদারকি সংস্থাগুলোর তেমন কার্যকর উদ্যোগও দেখা যায় না। এছাড়া কার্যকর শ্রমিক প্রতিনিধিত্বের অভাব রয়েছে। কারখানা পর্যায়ে একটি কার্যকর শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা গেলে এবং মালিক-শ্রমিক পক্ষের মধ্যে কার্যকর সামাজিক সংলাপের সংস্কৃতি তৈরি করতে পারলে পারস্পরিক জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন আরও সহজতর হয়ে উঠবে বলে তারা মনে করেন।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, যারা ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে পারছে না, তাদের ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হলো– ক্রেতা ন্যায্য দাম দিচ্ছে না। তিনি জানান, কোনো কোনো কারখানার মালিক শ্রমিকদের নিয়োগের সময় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের অক্ষমতার কথা আগেই বলে নেন। তবে ন্যূনতম মজুরি সব কারখানার বাস্তবায়ন করা উচিত। এ কারণে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং ব্র্যান্ড–ক্রেতাদের সংগঠনগুলোকে পোশাকের দাম বাড়ানোর জন্য মধ্যস্ততা করতে হবে।
জরিপে পাওয়া আরও কিছু তথ্য
ন্যূনতম মজুরি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না করা কারখানার ৩৩ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের পরিচালন ব্যয় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ২৪ শতাংশ জানিয়েছে, তারা ব্র্যান্ড ক্রেতাদের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি। যারা বাস্তবায়ন করেছেন, তাদের ৭৫ শতাংশ খরচ বাড়ার কথা জানিয়েছেন। জরিপের আওতায় থাকা ৮৩ শতাংশ কারখানা জানিয়েছে, নতুন মজুরি বাস্তবায়নে তারা সরকার কিংবা ক্রেতার সহযোগিতা পাননি। ইপিজেডের ১৮ শতাংশ এবং ইপিজেডের বাইরের ৩৩ শতাংশ কারখানা ক্রেতারা কিছুটা দাম বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের মজুরি বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। কেননা বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বেশি হারে। অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীর বেতনের বৈষম্য রয়েছে।