যেসব দাবিতে আন্দোলন করছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
Published: 16th, April 2025 GMT
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ও এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন সরকারি–বেসরকারি পলিটেকনিকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল ১১টার পর থেকে তারা ছয় দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীরা রাজধানীর সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা কোটবাড়ি, পাবনা টার্মিনাল গোল চত্বরে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক, নওগাঁ-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক, রাজশাহীতে সড়ক ও রেলপথ, চট্টগ্রামের ষোলশহরে সড়ক ও বগুড়ার বনানী এলাকায় মহাসড়ক অবরোধসহ আরও অনেক এলাকায় অবরোধ করেন।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিগুলো হলো-
প্রথমত, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
আর ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ সড়ক অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের শয্যাসংখ্যা ৫২। তবে গত সোমবার হাসপাতালের এই ওয়ার্ডে সাতটি শয্যা খালি দেখা গেছে। একই চিত্র সার্জারি ওয়ার্ডেরও। নগরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে রোগীর চাপ থাকে শয্যার দেড় গুণ, সেখানে জেনারেল হাসপাতালে এই সংখ্যা অর্ধেক। বছরে সাড়ে তিন লাখের মতো রোগী এখানে সেবা নিলেও তাঁদের মাত্র আড়াই শতাংশ ভর্তি হন এখানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। প্রতি মাসে শয্যা অনুপাতে আবাসিক রোগী ভর্তি গড়ে ৪৭ শতাংশ; অর্থাৎ মোট শয্যার অর্ধেকের বেশি ফাঁকা থাকে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এই হার আরও কম; ৩৭ শতাংশ।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার কারণ জানা গেছে। সেগুলো হলো হাসপাতালের অবস্থান, নিরাপত্তাঝুঁকি, রাতের বেলায় ওষুধ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত যাতায়াতব্যবস্থা না থাকা। হাসপাতালটিতে জনবলেরও ঘাটতিও রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় নার্সদের পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে রোগীরা এখানে থাকতে চান না।
ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। মোহাম্মদ একরাম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচট্টগ্রাম নগরে সরকারি দুই হাসপাতালের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ২০০ হলেও প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী থাকেন। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ১২০ থেকে ১৪০ জন রোগী থাকেন।
রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা চিকিৎসা নেন, তার অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। দূরের রোগীরা এখানে আসতে চান না। কারণ, পাহাড়ের ওপর হাসপাতালটির অবস্থান। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। রাতে পাহাড়ের পথ ধরে মাদকসেবীরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশে অবস্থান করে। ছিনতাই ও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণেই রোগীরা অন্যত্র চলে যান।
চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য ২৫টি শয্যা সংরক্ষিত আছে। এসব শয্যায় অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল ভবন দুটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে গেছে। ফাটল ধরেছে কিছু স্থানে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন গুটিকয় নার্স। প্রসূতি বিভাগে নার্সের উপস্থিতি বেশি। সার্জারি বিভাগের পুরুষ ব্লকের অন্তত ৫টি বেড খালি। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। রোগী বেশি মেডিসিন বিভাগে।
হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায়ই অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হচ্ছে না।চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার রংমহল পাহাড়ের ওপর। এর পেছনের দিকে কাটা পাহাড় লেন। আগে এ সড়ক দিয়েই হাসপাতালে ঢুকতে হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা হলেই বন্ধ এ পাহাড়ি পথ ধরে বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঢোকে। নিরাপত্তা না থাকায় মাদকসেবীরাও পাহাড়ে ওঠে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ একরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।
শুরুতে এটি কেবল একটি ডিসপেনসারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯০১ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতাল ১৯৮৬ সালে ৮০ শয্যা এবং পরে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল থেকে যায় ১০০ শয্যার। সেই পুরোনো জনবল কাঠামোতেই সর্বশেষ ২০১২ সালে হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার সেবা শুরু হয়। তবে এখনো জনবল সে–ই অর্ধেক।
হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শয্যা ২৫০টি হলেও এখানে চিকিৎসক ও নার্স আছেন প্রয়োজনের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কনসালট্যান্ট মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ জন চিকিৎসক আছেন। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৬৫ থেকে ৬৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে, যে সংখ্যক রোগী এখানে আসেন, এর জন্য ১০০ জনের বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন। নেই পর্যাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফও।
এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায় সময় অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে সংকট সত্ত্বেও বহির্বিভাগের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন রোগীরা। তবে বিভিন্ন সময় এসে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৭২ জন রোগী। জরুরি সেবা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার রোগী।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিক আমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবল স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে রোগীদের পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কথা, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে সেবা চলছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হলে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতালে বিভিন্ন চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা বাড়লেও সেখানে পদ বাড়ানো হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁদের ৩০ জন আনসার অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।