প্রায় তিন ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়েছেন চট্টগ্রামে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করা কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে সড়ক ছেড়ে সরে যান তাঁরা। এর আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাস, ট্রাক ও সিএনজি অটোরিকশাচালকদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়ে। এ সময় চালকেরা হর্ন বাজিয়ে হট্টগোল করেন। এরপর সড়ক ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা মিছিল নিয়ে কোতোয়ালি এলাকায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছেন।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ছয় দফা দাবিতে চট্টগ্রাম নগরের সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের ২ নম্বর গেট মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা৷ কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন।

আজ বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভেতর ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা ২ নম্বর গেট এলাকায় এসে অবস্থান নেন। এতে সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা বৈষম্যের কথা তুলে ধরে এর বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুর পর্যন্ত সেখানে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ছিলেন।

দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের ২ নম্বর গেট মোড়ে বসে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে বাঁশ ফেলে ও দড়ি টাঙিয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অদূরে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইনে ওপর অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা দাবি আদায়ে স্লোগান দিচ্ছেন। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়ক ও বায়েজীদ সড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়ে। তাঁরা সড়কে বাঁশ ফেলে ও ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান নেন। বেলা দুইটার দিকে চালকদের কয়েকজন হর্ন বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে দিতে হট্টগোল করেন। এর পর্যায়ে তাঁরা সড়কের বেরিক্যাড সরিয়ে ফেলেন। ছাত্রদের একটি পক্ষ তাদের বাঁধা দিতে গেলে সেখানে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কবির হোসেন নামে এক সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন, দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সড়কে বসে আছি। আমাদের তো গাড়ি চালিয়ে খেতে হয়। উনারা আন্দোলন করুক। কিন্তু এভাবে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে কেন। শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের যখন যেখানে বলার সেখানে দাবি তুলে ধরুক তাঁরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েকজন বিক্ষুব্ধ চালক ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগিয়ে আসে। পরে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানান। সে সময় চালকেরা শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হয়। পরে মিটমাট হয়ে গেছে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দেয়।

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আহামদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে কোতোয়ালি এলাকায় ডিসি অফিসের দিকে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। ডিসি অফিসের সামনে আমরা অবস্থান নেব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ড এ অ য ভ ন উ সড়ক র সড়ক ছ ড় অবস থ ন ন এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ