রিয়ালের প্রত্যাবর্তনের কথা ভুলে যেতে বললেন আর্তেতা
Published: 16th, April 2025 GMT
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মাঠে নামতে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ-আর্সেনাল। প্রথম লেগটা ৩-০ ব্যবধানে জিতে বেশ এগিয়ে আছে লন্ডনের ক্লাবটি। তাই গানার্স কোচ মিকেল আর্তেতা তাঁর দলকে আহবান জানিয়েছেন, তারা যেন রিয়ালের আরেকটি ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশা ভুলে গিয়ে ‘মাঠে কথা বলে’।
রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আর্সেনাল যাচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠার মিশন নিয়ে। লন্ডনের ক্লাবটি শেষবার ২০০৯ সালে এই টুর্নামেন্টের শেষ চারে খেলেছিল। তবে আর্তেতার দলের প্রতিপক্ষ রেকর্ড ১৫ বার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী রিয়াল। যারা অতীতে অনেকবার অসম্ভব বলে মনে হওয়া ম্যাচে ফিরে আসার ইতিহাস রয়েছে। তবে তারা ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় একমাত্র একবারই তিন গোলের ঘাটতি থেকে ফিরেছে। সেটা ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে, যখনও টুর্নামেন্টটির নাম ইউরোপিয়ান কাপ ছিল।
রিয়াল মাদ্রিদের মিডফিল্ডার জুড বেলিংহ্যাম মঙ্গলবার বলেছেন, “এই রাতটি রিয়াল মাদ্রিদের জন্য তৈরি।” এই ইংলিশ মিডফিল্ডার স্বীকার করেন যে গত সপ্তাহ থেকে তিনি স্প্যানিশ শব্দ ‘রেমন্তাদা’ (প্রত্যাবর্তন) শব্দটি প্রায় এক মিলিয়ন বার শুনেছেন।
আরো পড়ুন:
‘রিয়ালের জন্য কোনো লক্ষ্যই অসম্ভব নয়’- আর্সেনাল ম্যাচের আগে মার্সেলো
১০ জনের রিয়ালের কষ্টার্জিত জয়, এমবাপ্পের প্রথম লাল কার্ড
বেলিংহ্যামের এই কথার প্রেক্ষিতে ম্যাচে পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে আর্তেতা বলেন, “আমরা ঠিক তার উল্টো বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। খেলোয়াড়দের মাথায় গত ৭২ ঘণ্টায় যেটা আমরা ঢুকিয়েছি, সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আবারও বলছি, মাঠে নেমে সেটা অনুভব করতে হবে, সেটা পেরোতে হবে। এটাই আমাদের কাল (বুধবার রাতে) করতে হবে। আমি বুঝতে পারি এই ‘ন্যারেটিভ’ (বেলিংহ্যামের বলা প্রত্যাবর্তন) তাদের (মাদ্রিদের) জন্য জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে।”
আর্সেনাল প্রায় দুই বছর ধরে কোনো ম্যাচ তিন গোলের ব্যবধানে হারেনি এবং চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মাত্র চারবার এমন ঘাটতি থেকে ফিরে আসা সম্ভব হয়েছে। আর্তেতা বলেন, “এখন আমাদের এই প্রেক্ষাপটে তা প্রমাণ করতে হবে এবং এটাই আসল সৌন্দর্য। এটাই চ্যালেঞ্জ এবং এটাই খেলাধুলার সবচেয়ে চমৎকার দিক। আমরা দেখিয়েছি আমরা তা করতে পারি, সেটাই আমাদের আত্মবিশ্বাস ও নিশ্চয়তা দেবে। আর এখন, মাঠেই কথা বলতে হবে। মাঠের খেলাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ।”
“খেলার তিনটি মূল দিক আছে- শারীরিক, প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত এবং আবেগ। এই আবেগের দিকটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সারা মৌসুম ধরে দল (আর্সেনাল) যেভাবে ইতিবাচক ও কঠিন পরিস্থিতিতে খেলেছে, সেটাতেই আমার আত্মবিশ্বাস আছে। তাই, আমাদের এই সেমিফাইনালের জন্য প্রস্তুত হতে হবে এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যেকোনো পরিস্থিতি আমরা সামাল দিতে পারি। খেলায় যে ধরণের চ্যালেঞ্জই আসুক না কেন, আমরা সেটা উপভোগ করতে চাই।”
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ য ম প য়নস ল গ আর স ন ল আর স ন ল আর ত ত আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’