পায়ুপথে বাতাস দিয়ে চার বছরের শিশু হত্যা
Published: 16th, April 2025 GMT
মোটরসাইকেল ওয়াশে ব্যবহৃত যন্ত্রের সাহায্যে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে চার বছরের শিশু আবুবক্কর সিদ্দিককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার এই হৃদয়বিদারক ও অমানবিক ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর মিরপুর বাউনিয়াবাদ এলাকায়। এ ঘটনায় নিহতের মা আয়শা বেগম পল্লবী থানায় ৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় রাজু (২০), সূজন (৩৬), এক কিশোর ও অজ্ঞাতপরিচয় একজনকে আসামি করা হয়েছে।
শিশু আবুবক্কর তার ১১ বছরের বড় ভাই জিহাদ ও মায়ের সঙ্গে মিরপুর বাউনিয়াবাদের পোড়াবস্তি এলাকায় থাকতো। মা আয়শা বেগম একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। বাবা মো.
ঘটনার দিন দুপুর ৩টার দিকে বড় ভাইয়ের সঙ্গে গ্যারেজে যায় আবুবক্কর। মামলার এজাহার ও পরিবারের বর্ণনা মতে, ওই সময় জিহাদকে রুটি-কলা আনতে পাঠিয়ে শিশু আবুবক্করের
পায়ুপথে মোটরসাইকেল পরিষ্কার করার পাইপ দিয়ে বাতাস ঢোকান অভিযুক্তরা। জিহাদ এসে দেখে তার ভাইয়ের পায়ুপথ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, আর সে বমি করছে। জিহাদ উপস্থিত এক কিশোর, রাজু ও সূজনের কাছে জানতে চাইলে তারা ঘটনা স্বীকার করেন। তারা বলেন, আবুবক্কর নিজেই পায়ুপথে হাওয়ার মেশিন দিয়ে বাতাস ঢুকিয়েছে। এ সময় গ্যারেজের আরেক মালিক রাতুল উপস্থিত ছিলেন না।
পরে জিহাদ বাড়িতে এসে ঘটনা সবাইকে জানালে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরা আবুবক্করকে প্রথমে মিরপুরে একটি ক্লিনিকে, পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয়রা অভিযুক্ত কিশোরকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। বাকিরা পলাতক।
বুধবার সকালে পল্লবী থানায় গিয়ে দেখা যায়, সিঁড়িতে বসে আবুবক্করের মা ছেলে জিহাদকে নিয়ে কাদঁছেন। তখনো হাসপাতাল থেকে আবুবক্করের লাশ আসেনি।
আয়শা বেগম বলেন, দুই ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছিলাম। আমার মা চঁন্দ্র বানু ও বড় ছেলে জিহাদের কাছে ছোট ছেলেকে রেখে কাজে যেতাম। আমার ছোট্ট ছেলেকে কী নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলো, আমি এর বিচার চাই।
নিহতের নানি চঁন্দ্র বানু বলেন, দুই ছেলেকে নিয়ে আমার মেয়ে অনেক কষ্ট করছে। ভিক্ষা করে পর্যন্ত ছেলেদের খাইয়েছে। সেই বুকের ধন আজ কোথায় গেল।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত কিশোরকে কোর্টে তোলা হয়েছে। শিশু বলে তার বিচার শিশু আইনের আওতায় হবে। অন্য আসামিরা পালাতক।
ওসি বলেন, প্রথামিক তদন্তে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্র ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা না থাকলেও আশপাশের সিসি ক্যামেরা থেকে সংশ্লিষ্ট কিছু ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এখন বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের
মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
এ দিন শিশুকে চিকিৎসা প্রদানকারী তিন চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন– মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ডা. সোহাস হালদার, নাকিবা সুলতানা এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. ইসরাত জাহান। তারা সবাই শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামলার ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, বিগত চার কার্যদিবস একটানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। এ নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আগামী রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদে অন্য সব সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসামিরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি। এই ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা সিএমএইচে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৩ মার্চ শিশুটি সেখানে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার বড় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখসহ চারজনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। রিমান্ডে হিটু শেখ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।