পায়ে অস্ত্রোপচারের জন্য রাজধানীর নিটোরে (পঙ্গু হাসপাতাল) যাচ্ছিলেন গৃহিণী মারিয়া আক্তার। গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলার বাসা থেকে বের হন। বেলা ১১টার দিকে মগবাজার রেলগেট এলাকায় আটকা পড়েন।

সাধারণ যানজট ভেবে বড় বোন আয়েশা নূরসহ তিনজন প্রাইভেটকারে বসে থাকেন। পরের প্রায় এক ঘণ্টায় গাড়ি সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত এসে মারিয়া জানতে পারেন, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত গাড়ি এক ইঞ্চিও নড়েনি। বিরক্ত হয়ে তিনজনই নেমে পড়েন।

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটার সময় ক্ষুব্ধ মারিয়া বললেন, ‘সড়কে এমন ভোগান্তি আর কতদিন? দেখারও কেউ নাই।’ পরে অটোরিকশায় উঠে চলে যান তিনজন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে গতকাল দিনভর চরম দুর্ভোগে পড়েন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। সকাল ১০টা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা, মিরপুর-১০, বছিলা ও মোহাম্মদপুর সড়ক অবরোধ করা হয়। সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টিএসসিসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের জোট ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’ ছয় দফা দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতে ঢাকা পলিটেকনিকসহ অন্যান্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

 টানা ৯ ঘণ্টা অবরোধের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা সড়ক ছাড়েন। আজ বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে রেলপথ অবরোধের নতুন কর্মসূচি দিয়েছেন। আন্দোলনের প্রভাবে সারাদিনের অসহনীয় যানজট আরও তীব্র হয় শেষ বিকেলের মুষলধারের বৃষ্টিতে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো.

সরওয়ার সমকালকে বলেন, আন্দোলনের কারণে ঢাকার মধ্যে গাড়ির চাপ বাড়লে কিছু গাড়ি মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে মহাখালীর দিকে পাঠানো হয়। পরে শিক্ষার্থীরা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে এসে ফ্লাইওভারে গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়। কয়েক স্থানে অবরোধ করায় ঢাকার মধ্যে তীব্র যানজট দেখা দেয়। জনদুর্ভোগ কমাতে গভীর রাত পর্যন্ত এসব গাড়ি বের করতে কাজ করতে হয়েছে পুলিশকে।

সরেজমিন মগবাজার ফ্লাইওভার, সাতরাস্তা ও এফডিসি মোড়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা অবরোধে আটকা গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে তর্কে জড়াচ্ছেন। কেউ সামনে যেতে চাইলে গালাগাল করছেন। অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার গাড়িও যেতে দেননি আন্দোলনকারীরা। এতে বনানী, মহাখালী থেকে মগবাজারগামী এবং গুলিস্তান, পুরানা পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, মগবাজার ও মিন্টো রোড হয়ে উত্তরাগামী কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে এফডিসি মোড়ে নামার সময় বাধার কারণে উত্তরা পর্যন্ত যানজট দীর্ঘ হয়। পুরো রাজধানীতে ছিল দুর্ভোগের একই চিত্র। অনেককে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে সবচেয়ে নাকাল হয়েছেন নারী ও শিশুরা।

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ-সংলগ্ন মগবাজার ফ্লাইওভারের মুখে এক দল শিক্ষার্থী বাঁশ ও বেঞ্চ রেখে অবরোধ করেন। মহাখালী থেকে মালিবাগ-মৌচাক যেতে ফ্লাইওভারের মুখে এবং এফডিসি-হাতিরঝিলের প্রবেশমুখে একই ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখা যায়।

পুলিশ কিছু যানবাহন হাতিরঝিল হয়ে গুলশান ও মহাখালীর দিকে ঘুরিয়ে দেয়। আবার কিছু গাড়ি কারওয়ান বাজার হয়ে ফার্মগেটের দিকে পাঠায়। ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, দিনভর সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শিক্ষার্থীরা যান চলাচল বন্ধ করে দিলে তীব্র যানজট হয়। কিছু ডাইভারশন দিলেও কাজে আসেনি। গাড়ির চাপ ঠেকেছে বিজয় সরণিতে। ট্রাফিকের সদস্যরা খেয়ে-না খেয়ে যানজট নিরসনে কাজ করেছেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়লে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তবে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। গন্তব্যে যেতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ সময় লেগেছে মানুষের।

বিকেল ৫টার দিকে সাতরাস্তা মোড়ে প্রাইভেটকার চালক দেবনাথ চন্দ্র বলেন, মগবাজারের বাসা থেকে বের হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। এফডিসি মোড় পার হয়ে এক জায়গায় ছয় ঘণ্টা আটকে রয়েছি। শিক্ষার্থীদের অনেক অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। উল্টো খারাপ ব্যবহার করেছে।

উত্তরাগামী আজমেরী পরিবহনের বাসচালক ইয়াছিন কাজী দুপুর ১টার দিকে বলেন, দুই ঘণ্টা একই জায়গায় আছি। সামনে-পেছনে কোনো দিকেই যেতে পারছি না। যাত্রীরা নেমে গেছে। সহকারী আল আমিনকে নিয়ে বসে আছি। মালিককে জানিয়েছি। কিন্তু জমা মাফ করবেন বলে মনে হয় না। ক্ষুব্ধ এ বাসচালক বলেন, ‘শেখ হাসিনা হটাও আন্দোলন আমরাও করেছি। শরীরে এখনও পুলিশের লাঠিপেটার দাগ রয়েছে। সবাই কষ্ট করে একটি ভালো সময় নিয়ে এলাম। আজকে ছাত্রদের জন্য জনগণ সুফল পাচ্ছে না। রাস্তা আটকে গরিবের পেটে লাথি কেমন আন্দোলন!’

তীব্র যানজটের মধ্যে বেলা ৩টার পর মুষলধারে বৃষ্টি নামে। এতে ভোগান্তি হয় কয়েক গুণ। বৃষ্টির মধ্যেও সড়কে ছিলেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন তারা। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মাশফিক ইসলাম বলেন, ‘ছয় দফা দাবি আদায় করেই রাজপথ ছাড়ব।’

বৃষ্টিতে বাড়ে ভোগান্তি

দুপুরে তীব্র গরম থাকলেও বিকেলে ঘন কালো মেঘ করে রাজধানীর বুকে নামে বৈশাখের প্রথম বৃষ্টি। এতে তীব্র গরমে কিছুটা স্বস্তি নেমে এলেও শেষ বিকেলের বৃষ্টি শহুরে জীবনে ভোগান্তি বাড়িয়েছে অনেক। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যান বন্ধ হয়ে যায়। মহাখালী এলাকায় যানজটে আটকে পড়া মোতালেব হোসেন বলেন, ‘এক জায়গায় পাঁচ ঘণ্টা আছি। বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তি আরও বাড়বে।’

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, আগামী তিন দিন সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি হবে, থেমে যাবে, আবার হবে– এমন চক্রে চলবে। কখনও বেশি, কখনও কম বৃষ্টি হবে। এতে তাপমাত্রা সহনশীল থাকবে।

এদিকে অফিস ছুটির সময় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় অনেকেই আটকা পড়েন কর্মস্থলে। ঘণ্টা পার হওয়ার পরও বৃষ্টি থামার নাম নেই। বাধ্য হয়ে কেউ হেঁটে, কেউ রিকশাসহ অন্যান্য যানে বাসায় ফেরেন কাকভেজা হয়ে। বিকেল সোয়া ৫টায় পুরান ঢাকার আদালত চত্বর থেকে মোটরসাইকেলে তেজগাঁও সাতরাস্তায় আসতে সাইফুল ইসলামের সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা, যা অন্য সময় আধা ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়।

সরেজমিন দেখা যায়, আদালত এলাকা থেকে তাঁতীবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে তেমন যানজট ছিল না। তবে সেখান থেকে গুলিস্তানমুখী রাস্তায় প্রবেশ করার পরই যানজটে পড়তে হয়। একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে মানুষ। পুলিশ সদরদপ্তরের সামনের সড়ক থেকে শিক্ষা ভবন পর্যন্ত গাড়ির চাপ কিছুটা কম ছিল। তবে হাইকোর্টের সামনের কদম ফোয়ারা থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত গাড়ি থমকে থাকায় এ পথ আসতে সময় লাগে ১৫ মিনিটের বেশি। মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল মসজিদ, হেয়ার রোড, মিন্টো রোড ও মগবাজার এলাকায় গাড়ির চাকা ছিল থমকে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ ল ইওভ র মগব জ র র ধ কর এফড স য নজট র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ