অবরোধ যানজট বৃষ্টিতে ঢাকায় দিনভর দুর্ভোগ
Published: 17th, April 2025 GMT
পায়ে অস্ত্রোপচারের জন্য রাজধানীর নিটোরে (পঙ্গু হাসপাতাল) যাচ্ছিলেন গৃহিণী মারিয়া আক্তার। গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলার বাসা থেকে বের হন। বেলা ১১টার দিকে মগবাজার রেলগেট এলাকায় আটকা পড়েন।
সাধারণ যানজট ভেবে বড় বোন আয়েশা নূরসহ তিনজন প্রাইভেটকারে বসে থাকেন। পরের প্রায় এক ঘণ্টায় গাড়ি সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত এসে মারিয়া জানতে পারেন, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত গাড়ি এক ইঞ্চিও নড়েনি। বিরক্ত হয়ে তিনজনই নেমে পড়েন।
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটার সময় ক্ষুব্ধ মারিয়া বললেন, ‘সড়কে এমন ভোগান্তি আর কতদিন? দেখারও কেউ নাই।’ পরে অটোরিকশায় উঠে চলে যান তিনজন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে গতকাল দিনভর চরম দুর্ভোগে পড়েন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। সকাল ১০টা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা, মিরপুর-১০, বছিলা ও মোহাম্মদপুর সড়ক অবরোধ করা হয়। সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টিএসসিসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের জোট ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’ ছয় দফা দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতে ঢাকা পলিটেকনিকসহ অন্যান্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
টানা ৯ ঘণ্টা অবরোধের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা সড়ক ছাড়েন। আজ বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে রেলপথ অবরোধের নতুন কর্মসূচি দিয়েছেন। আন্দোলনের প্রভাবে সারাদিনের অসহনীয় যানজট আরও তীব্র হয় শেষ বিকেলের মুষলধারের বৃষ্টিতে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো.
সরেজমিন মগবাজার ফ্লাইওভার, সাতরাস্তা ও এফডিসি মোড়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা অবরোধে আটকা গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে তর্কে জড়াচ্ছেন। কেউ সামনে যেতে চাইলে গালাগাল করছেন। অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার গাড়িও যেতে দেননি আন্দোলনকারীরা। এতে বনানী, মহাখালী থেকে মগবাজারগামী এবং গুলিস্তান, পুরানা পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, মগবাজার ও মিন্টো রোড হয়ে উত্তরাগামী কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে এফডিসি মোড়ে নামার সময় বাধার কারণে উত্তরা পর্যন্ত যানজট দীর্ঘ হয়। পুরো রাজধানীতে ছিল দুর্ভোগের একই চিত্র। অনেককে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে সবচেয়ে নাকাল হয়েছেন নারী ও শিশুরা।
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ-সংলগ্ন মগবাজার ফ্লাইওভারের মুখে এক দল শিক্ষার্থী বাঁশ ও বেঞ্চ রেখে অবরোধ করেন। মহাখালী থেকে মালিবাগ-মৌচাক যেতে ফ্লাইওভারের মুখে এবং এফডিসি-হাতিরঝিলের প্রবেশমুখে একই ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখা যায়।
পুলিশ কিছু যানবাহন হাতিরঝিল হয়ে গুলশান ও মহাখালীর দিকে ঘুরিয়ে দেয়। আবার কিছু গাড়ি কারওয়ান বাজার হয়ে ফার্মগেটের দিকে পাঠায়। ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, দিনভর সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শিক্ষার্থীরা যান চলাচল বন্ধ করে দিলে তীব্র যানজট হয়। কিছু ডাইভারশন দিলেও কাজে আসেনি। গাড়ির চাপ ঠেকেছে বিজয় সরণিতে। ট্রাফিকের সদস্যরা খেয়ে-না খেয়ে যানজট নিরসনে কাজ করেছেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়লে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তবে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। গন্তব্যে যেতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ সময় লেগেছে মানুষের।
বিকেল ৫টার দিকে সাতরাস্তা মোড়ে প্রাইভেটকার চালক দেবনাথ চন্দ্র বলেন, মগবাজারের বাসা থেকে বের হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। এফডিসি মোড় পার হয়ে এক জায়গায় ছয় ঘণ্টা আটকে রয়েছি। শিক্ষার্থীদের অনেক অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। উল্টো খারাপ ব্যবহার করেছে।
উত্তরাগামী আজমেরী পরিবহনের বাসচালক ইয়াছিন কাজী দুপুর ১টার দিকে বলেন, দুই ঘণ্টা একই জায়গায় আছি। সামনে-পেছনে কোনো দিকেই যেতে পারছি না। যাত্রীরা নেমে গেছে। সহকারী আল আমিনকে নিয়ে বসে আছি। মালিককে জানিয়েছি। কিন্তু জমা মাফ করবেন বলে মনে হয় না। ক্ষুব্ধ এ বাসচালক বলেন, ‘শেখ হাসিনা হটাও আন্দোলন আমরাও করেছি। শরীরে এখনও পুলিশের লাঠিপেটার দাগ রয়েছে। সবাই কষ্ট করে একটি ভালো সময় নিয়ে এলাম। আজকে ছাত্রদের জন্য জনগণ সুফল পাচ্ছে না। রাস্তা আটকে গরিবের পেটে লাথি কেমন আন্দোলন!’
তীব্র যানজটের মধ্যে বেলা ৩টার পর মুষলধারে বৃষ্টি নামে। এতে ভোগান্তি হয় কয়েক গুণ। বৃষ্টির মধ্যেও সড়কে ছিলেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন তারা। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মাশফিক ইসলাম বলেন, ‘ছয় দফা দাবি আদায় করেই রাজপথ ছাড়ব।’
বৃষ্টিতে বাড়ে ভোগান্তি
দুপুরে তীব্র গরম থাকলেও বিকেলে ঘন কালো মেঘ করে রাজধানীর বুকে নামে বৈশাখের প্রথম বৃষ্টি। এতে তীব্র গরমে কিছুটা স্বস্তি নেমে এলেও শেষ বিকেলের বৃষ্টি শহুরে জীবনে ভোগান্তি বাড়িয়েছে অনেক। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যান বন্ধ হয়ে যায়। মহাখালী এলাকায় যানজটে আটকে পড়া মোতালেব হোসেন বলেন, ‘এক জায়গায় পাঁচ ঘণ্টা আছি। বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তি আরও বাড়বে।’
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, আগামী তিন দিন সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি হবে, থেমে যাবে, আবার হবে– এমন চক্রে চলবে। কখনও বেশি, কখনও কম বৃষ্টি হবে। এতে তাপমাত্রা সহনশীল থাকবে।
এদিকে অফিস ছুটির সময় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় অনেকেই আটকা পড়েন কর্মস্থলে। ঘণ্টা পার হওয়ার পরও বৃষ্টি থামার নাম নেই। বাধ্য হয়ে কেউ হেঁটে, কেউ রিকশাসহ অন্যান্য যানে বাসায় ফেরেন কাকভেজা হয়ে। বিকেল সোয়া ৫টায় পুরান ঢাকার আদালত চত্বর থেকে মোটরসাইকেলে তেজগাঁও সাতরাস্তায় আসতে সাইফুল ইসলামের সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা, যা অন্য সময় আধা ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়।
সরেজমিন দেখা যায়, আদালত এলাকা থেকে তাঁতীবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে তেমন যানজট ছিল না। তবে সেখান থেকে গুলিস্তানমুখী রাস্তায় প্রবেশ করার পরই যানজটে পড়তে হয়। একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে মানুষ। পুলিশ সদরদপ্তরের সামনের সড়ক থেকে শিক্ষা ভবন পর্যন্ত গাড়ির চাপ কিছুটা কম ছিল। তবে হাইকোর্টের সামনের কদম ফোয়ারা থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত গাড়ি থমকে থাকায় এ পথ আসতে সময় লাগে ১৫ মিনিটের বেশি। মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল মসজিদ, হেয়ার রোড, মিন্টো রোড ও মগবাজার এলাকায় গাড়ির চাকা ছিল থমকে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ ল ইওভ র মগব জ র র ধ কর এফড স য নজট র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু
তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
রোববার তেহরান দূতাবাস এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস ইমার্জেন্সি হটলাইন স্থাপন করেছে। ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকদের নিম্নোক্ত মোবাইলফোন নম্বরগুলোতে হোয়াটসঅ্যাপসহ সরাসরি যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
+ ৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫।