নিজেদের চেনা রূপে ফেরার সুযোগ ছিল, ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আরেকটি ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের আশা। তবে কিছুই হলো না। বরং নিজেদের মাঠেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে মুখ থুবড়ে বিদায় নিল রিয়াল মাদ্রিদ। ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের কাছে দ্বিতীয় লেগে ২-১ গোলে হেরে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানে শেষ হলো তাদের ইউরোপীয় অভিযান।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচটা শুরু থেকেই রিয়ালের জন্য কঠিন ছিল। যদিও প্রথমার্ধে তাদের কিছুটা আশার আলো দেখান থিবো কর্তোয়া। পেনাল্টি থেকে বুকে বল ঠেকিয়ে দেন বুকায়ো সাকার শট। তবে সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এমবাপ্পেকে নিয়ে যতটা আশা ছিল, মাঠে তিনি ছিলেন নিস্তেজ। একই চিত্র ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ক্ষেত্রেও।

দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত দলীয় প্রচেষ্টায় এগিয়ে যায় আর্সেনাল, গোল করেন সাকা। তবে এক ভুলে আবারও রিয়ালকে ম্যাচে ফেরান আর্সেনালের ডিফেন্ডার উইলিয়াম সালিবার। তার ভুলের সুযোগ নিয়ে সমতায় ফেরান ভিনিসিয়ুস। কিন্তু এরপর আর রিয়ালের ঘুড়ে দাঁড়ানো হয়নি। বরং ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলির গোলে নিশ্চিত হয় তাদের বিদায়।

এমন এক রাতে রিয়ালের তারকারা যেন কেউই জ্বলে উঠতে পারেননি। এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুস ছিলেন ছায়ামানব। মধ্যমাঠে জুড বেলিংহাম একাই লড়েছেন, কিন্তু দলীয় সমন্বয়ের অভাব ছিল প্রকট। বদলি হিসেবে নামা রদ্রিগো, সেবায়োস কিংবা এন্ড্রিকও ম্যাচের গতি বদলাতে পারেননি। তাদের পারফরম্যান্সের রেটিং করেছে সংবাদ মাধ্যম গোল ডটকম।

গোলরক্ষক ও রক্ষণভাগ:

থিবো কর্তোয়া (৬/১০): ম্যাচের শুরুতে বুকায়ো সাকার পেনাল্টি ঠেকিয়ে দলের জন্য বড় মুহূর্ত এনে দিয়েছিলেন কর্তোয়া। তবে এরপর আর তেমন কিছু করার ছিল না। গোল দুটি ঠেকানো তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

লুকাস ভাসকেজ (৫/১০): দৌড়ঝাঁপে কমতি ছিল না, কিন্তু ভাসকাজের কার্যকারিতা ছিল খুব কম। ক্রসগুলো ছিল অগোছালো, এবং দুইবার গোলবারের দিকে দুর্বল শট নেন, যা একটিও বিপজ্জনক হয়নি।

রাউল আসেনসিও  (৫/১০): ভাগ্য খারাপ বলতেই হয়। পেনাল্টি ফাউলের ঘটনায় ভাগ্য তার সহায় হয়নি। 

আন্তোনিও রুডিগার (৬/১০): কিছু ট্যাকল আর ব্যক্তিগত দ্বৈরথে সফলতা পেলেও আর্সেনালের চলমান আক্রমণে খানিকটা অস্থির দেখিয়েছে তাকে। মেরিনোদের আক্রমণে অনেকটা বেসামাল ছিলেন তিনি। 

ডেভিড আলাবা (৪/১০): ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই হলুদ কার্ড খেয়ে চাপে পড়ে যান আলাবা। এরপর পুরো সময়ই সাকার বিপক্ষে ছায়ার মতো ছিলেন। একাধিকবার পজিশনিংয়ে ভুল করেন।

মধ্যমাঠ:

চুয়ামেনি (৫/১০): ওয়ান ওয়ান পাসে ভালোই ছিলেন, কিন্তু মাঠে জায়গা দখলে একেবারেই দুর্বল। ওডেগার্ডের পজিশন বদলের কৌশলে বারবার বিভ্রান্ত হন।

ফেদেরিকো ভালভার্দে (৫/১০): তাকে চেনা ফর্মে পাওয়া যায়নি। মাঝমাঠে ছুটে বেড়িয়েছেন, যদি আর্সেনাল ফরোয়ার্ডদের দাপটে তেমন কিছু করতে পারেননি।

জুড বেলিংহ্যাম (৫/১০): মাঝমাঠে একপ্রকার একাই লড়েছেন। পুরো খেলায় একা তিনজনের বিরুদ্ধে খেলেছেন।

আক্রমণভাগ:

রদ্রিগো (৫/১০): কিছু কিছু মুহূর্তে দারুণ চেষ্টা করেছেন, দুই-একটি ভালো বল ক্রস করেছেন। তবে এক ঘন্টা পর তাকে বদলি করায় ম্যাচে প্রভাব ফেলার সুযোগ কমে যায়।

কিলিয়ান এমবাপ্পে (৪/১০): শুরুতে ভালো কিছুর আশা দেখালেও ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কিছু করতে পারেননি।  ইনজুরির কারণে সময়ের আগেই মাঠ ছাড়তে হয়। তার রাতটা ছিল ভুলে যাওয়ার মতো।

ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (৪/১০): একটি গোল করলেও ভিনি কার্যকর কিছু করতে পারেননি। বল নিয়ে একাধিকবার ড্রিবল করতে গিয়ে বল হারিয়েছেন। বড় ম্যাচে তার যে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থ।

এদিকে বদলি খেলোয়াড়দের মধ্যে আক্রমণে কিছুটা সাহস দেখানোয় ১০ এর মধ্যে ৬ পয়েন্ট পেয়েছেন ফ্যান গার্সিয়া। তবে রক্ষণে তার দুর্বলতা ছিল। একটা শট গোলমুখে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছন্দহীন দানী সেবাইয়োসও ৫ পয়েন্টের বেশি পাননি। শেষদিকে আসায় লুকা মডরিচও তেমন কিছু করে দেখানোর সুযোগ পাননি। ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন বলে ৬ পয়েন্ট পেয়েছেন এন্ড্রিক।

রিয়ালের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সে ভিলেনে পরিণত হয়েছেন কোচ কার্লো আনচেলত্তি। পরিকল্পনায় ঘাটতির প্রশ্ন রেখে গোল তাকে দিয়েছে মাত্র ৩ পয়েন্ট। এই হারে তার ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর স ন ল আর স ন ল এমব প প প র নন

এছাড়াও পড়ুন:

সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে

এক দিনেই কত কীর্তি গড়লেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর তাঁকে ছেড়ে একা আর সংবাদ সম্মেলনে আসতে চাইলেন না অধিনায়ক নাজমুল হোসেন।

মিরাজ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পর ফটোগ্রাফারদের আবদার মেটাতে ব্যস্ত বলে কিছুটা অপেক্ষাও করলেন। এরপর মিরাজের তাড়া ছিল নামাজে যাওয়ারও, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শেষে তাই একরকম দৌড়ে যান ড্রেসিংরুমে।

এর আগে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গেছেন ছয়জনকে। মিরাজ দিনের শুরুটা করেছিলেন ব্যাটিংয়ে, শেষটা করেছেন বোলিংয়ে। ব্যাটিং, বোলিং মিলিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনে একটার পর একটা রেকর্ড গড়েছেন মিরাজ।

ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করেছেন, সেঞ্চুরির পথে দুই হাজার রানের মাইলফলক ছুয়েছেন; দুই শ উইকেট আর দুই হাজার রানের কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন সাকিবের পাশে, যদিও ম্যাচ একটি কমও খেলেছেন।

আবার বল হাতে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেট। একই ম্যাচে সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটের কীর্তিতে সাকিব আর সোহাগ গাজীর সঙ্গে এখন তাঁর নামও। এত সব কীর্তি গড়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এসে মিরাজ বললেন, ‘শুরুতে আমি দুইটা মানুষকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’ ওই দুটি ধন্যবাদই ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য।

বিসিবির কোচ মিজানুর রহমানকে ধন্যবাদ দিয়েছেন ‘অনেক দিন ধরে কাজ করা’ ব্যাটিংয়ে উন্নতিতে অবদানের জন্য। মিরাজের পরের কৃতজ্ঞতাটা শুনুন তাঁর মুখেই, ‘আমাদের দলের যে ম্যানেজার আছেন, নাফিস ইকবাল ভাই আমাকে সব সময় বুস্টআপ করে। আজকেও যখন ব্যাটিংয়ে যাচ্ছিলাম, বারবার একটা কথা বলছিল, মিরাজ, তুই কিন্তু প্রপার ব্যাটসম্যান, তোর কিন্তু এক শ আছে। দুইটা মানুষকে (মিজান ও নাফিস) অবশ্যই মনের ভেতর থেকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’

কিন্তু মিরাজের সব কীর্তি তো আর ব্যাটিংয়ে নয়। বোলিংয়েও ৫ উইকেট পেয়েছেন। সিলেটে আগের ম্যাচে উইকেট পেয়েছিলেন ১০টি। এ কৃতজ্ঞতাও একজনের জন্য রাখলেন মিরাজ, ‘বোলিংটা খুব ভালো হয়েছে। বোলিং তো আমার দলের সঙ্গেই আছে, আমার গুরু যে সোহেল ইসলাম (জাতীয় দলের স্পিন বোলিং কোচ)। অবশ্যই এই তিনটা মানুষকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’

ধন্যবাদ দেওয়ার সংখ্যাটা তিনে গিয়েই থামেনি মিরাজের। আজকে যে তিনি সেঞ্চুরিটা পেলেন, তাতে তো অবদান আছে তাঁর সঙ্গীদেরও। তাইজুল ইসলাম ৪৫ বলে ২০, তানজিম হাসান ৮০ বলে ৪১ আর রান না করতে পারলেও হাসান মাহমুদ ১৬ বল খেলেছেন বলেই না সেঞ্চুরি করার সময়টা পেলেন মিরাজ।

একসময় সেঞ্চুরিটাকে ‘কপালের ওপর’ ছেড়ে দেওয়া মিরাজ ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁদেরও, ‘হাসান অনেক ভালো সমর্থন দিয়েছে, তানজিমও অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে, তাইজুল ভাইও। আমি অবশ্যই এই তিনজনকে ধন্যবাদ দিতে চাই। ওরা যেভাবে আমাকে সমর্থন দিয়েছে, ওদের জন্যই আমি এক শ করতে পেরেছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে
  • আজিজুল হাকিমের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, কলম্বোয়ও হেসেছে বাংলাদেশ
  • ‘বাজপাখি’ মার্তিনেজের বাজে ফর্ম, আর্জেন্টিনার জন্য কতটা দুশ্চিন্তার
  • সমালোচকরা খেলা বোঝে না!—আক্ষেপ তাইজুলের
  • তাইজুলকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত বোলার’ বললেন তামিম
  • বার্সেলোনা ও পিএসজি ছাড়া যে কীর্তি গড়ার সুযোগ নেই এবার আর কারও