নিয়োগ দুর্নীতি-অর্থ আত্মসাৎ: সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে দুদকের হানা
Published: 17th, April 2025 GMT
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) অভিযানে হাসপাতালে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য এবং অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক টিম।
হাসপাতালের পরিচালক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসির (প্রশাসন) সঙ্গে দেখা করে দুদক টিম।
আরো পড়ুন:
২০ কোটি টাকা আত্মসাতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর নামে মামলা
সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের নৈশপ্রহরীর পকেটে মিলল ৪০ হাজার টাকা
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের জনবল নিয়োগ দুর্নীতিসংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন তারা।
সেখানে একটি প্রকল্পের আওতায় বিদেশে প্রশিক্ষণ করতে গিয়ে ৮৫ কর্মকর্তা আর ফিরে না আসার তথ্য পেয়েছে দুদক টিম।
অভিযানে হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিদ্যমান একটি ব্যাংক, একটি ফার্মেসি ও দুটি ক্যান্টিন পরিচালনায় অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পায় দুদক টিম।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এনফোর্সমেন্ট টিম এই অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান শেষে দুদক টিম জানায়, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়েছে।
তিনি জানান, প্রকল্পের অর্থায়নে ১৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ শেষে এই প্রতিষ্ঠানে অন্তত পাঁচ বছর চাকরি করবেন- এমন শর্তে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠানো হয়। তবে প্রশিক্ষণ শেষে ৮৫ জন কর্মকর্তা হাসপাতালে যোগ দেননি।
অত্যন্ত অপরিকল্পিতভাবে এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে, কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন- এমন বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানোর তথ্য পেয়েছে অভিযানে যাওয়া দুদক কর্মকর্তারা। অপ্রয়োজনী প্রশিক্ষণে পাঠিয়ে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় করা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
সুপার স্পেপেশালাইজড হাসাপাতাল প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট তথ্য বিশ্লেষণ করে কমিশন কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে এনফোর্সমেন্ট টিম।
২০২৩ সালের ৩ জুলাই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের শূন্য পদে জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়; সেখানে ৫২টি পদে ৫৪৪ জনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়।
পদগুলোর জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, কনসালট্যান্ট পদে ৯৬ জন, মেডিকেল অফিসার (মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, অর্থোপেডিকস) পদে ৬০ জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে ২২৫ জনবল নেওয়া হবে। বাকি পদগুলোতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ), পরিচালক (আইটি), টেকনিশিয়ান, টেকনোলজিস্ট নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল।
এসব পদে নিয়োগ নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে দুদক টিম।
স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার সম্পত্তি আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ
স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার সম্পত্তি আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালিয়েছে দুদক।
বৃহস্পতিবার দুদকের পৃথক একটি এনফোর্সমেন্ট টিম এই অভিযান পরিচালনা করে।
বৃহস্পতিবার দুদকের পৃথক একটি এনফোর্সমেন্ট টিম স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান শেষে দুদক টিম জানায়, প্রাথমিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি একটি নিবন্ধিত, অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, যা সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন নং-২১৯/১৯৬২ অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছে।
দুদক জানতে পেরেছে, এতিমখানাটি পরিচালনা করে কার্যকরী পরিষদ, যার সভাপতির পদে নবাব পরিবারের একজন বংশধর থাকেন। বর্তমানে কার্যনির্বাহী পরিষদ না থাকায় ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়, যিনি পরে পদত্যাগ করেন। গত মাসে সেখানে একজন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।
নবাব বংশের দাবিদার খাজা আলী মাদানীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি নতুনভাবে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম অরফানেজ সোসাইটি নামে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি তারা নিবন্ধন পান।
একই প্রতিষ্ঠান সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধিত ও প্রশাসক নিযুক্ত থাকার পরও নতুন নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে দুদকের আভিযানিক টিম।
অভিযানের সময় অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে দুদক টিম। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কমিশনে একটি পূর্ণাঙ্গ এনফোর্সমেন্ট প্রতিবেদন দাখিল করবে তারা।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য ন অপর ধ কর মকর ত ন বন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।